TMC Dharna at Delhi

ধর্না দিতে দিল্লি গেলেন, হাতে নতুন ‘অস্ত্র’, কাদের সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর বিমান ধরলেন অভিষেক?

শিশুর মৃত্যুর পাশাপাশি, কাঁচা বাড়ির দেওয়াল ভেঙে এক বৃদ্ধার মৃত্যুর ঘটনাও যে তাদের প্রতিবাদে স্থান পাবে, তা-ও উল্লেখ করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২৩ ১৭:০৭
দিল্লি রওনা হওয়ার আগে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন অভিষেক।

দিল্লি রওনা হওয়ার আগে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন অভিষেক। ফাইল চিত্র।

রাজ্যের বকেয়া টাকার দাবিতে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে দু’দিনের কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিতে রবিবার বিকেলে দিল্লির বিমান ধরলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দাবির পক্ষে সঙ্গে নিয়ে গেলেন নতুন ‘অস্ত্র’। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে শনিবার বাড়ির দেওয়াল ভেঙে একই পরিবারের তিন শিশুর মৃত্যু ঘটেছে। রবিবার সকালে জানা গেল, বাঁকুড়ারই ছাতনায় একই ভাবে মৃত্যু হয়েছে এক বৃদ্ধার। দু’টি পরিবারের কেউই কেন্দ্রের আবাস যোজনার টাকা পাননি। এটাই সামনে এনে অভিষেক তথা তৃণমূলের দাবি, মৃত চারজনই ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’র সাম্প্রতিকতম শিকার। শুধু চার মৃত্যুকে নিয়ে সরব হওয়াই নয়, অভিষেক বিমানে তাঁর সঙ্গী করে নিয়ে গেলেন মৃতদের পরিজনদের। বিমানে ওঠার আগে যথেষ্টই আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তাঁর নিশানায় আগাগোড়াই রইলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ। ১০০ দিনের কাজ এবং আবাস যোজনা, দু’টি প্রকল্পেই বাংলার পাওনা টাকা আটকে রয়েছে গিরিরাজের মন্ত্রকের হাতে।

Advertisement

বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহ দিল্লিতে থাকা সত্ত্বেও বঞ্চিতদের সঙ্গে দেখা করছেন না। সেখানে তিনি বিজেপি নেতাদের সঙ্গে দেখা করছেন। গত এপ্রিল মাসে আমরা ২৫-২৬ জন সাংসদ নিয়ে তাঁর কাছে গিয়েছিলাম। তিনি আমাদের সঙ্গে তা-ও দেখা করেননি। আসলে তিনি বঞ্চিত, অবহেলিতদের কথা শুনতে চান না।’’

রাজ্য বিজেপির সভাপতিকেও কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন অভিষেক। তিনি বলেন, বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলছেন আন্দোলন করতে হবে না। আমরা একটা ফোন করলেই চলে আসবে টাকা। গিরিরাজ সিংহ কার কথায় পরিচালিত হচ্ছেন? নির্লজ্জ ভাবে তিনি বাংলার প্রতি ধারাবাহিক বঞ্চনা চালিয়ে যাচ্ছেন, বাংলার মানুষকে ভাতে মারতে চাইছেন। এত চেষ্টা করেও বাংলার মানুষকে তিনি দমাতে পারেননি।’’

দিল্লির কর্মসূচির জন্য ট্রেন ভাড়া চেয়ে আবেদন করেছিল তৃণমূল। গত শুক্রবার সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে বিকল্প পথে কর্মীদের দিল্লির পাঠানোর বন্দোবস্ত করা হয়। শনিবার রাতে তৃণমূলের তরফে অভিযোগ করা হয়, রবিবার দিল্লিগামী একটি বিমান বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। সেই বিমানে তাদের নেতা-কর্মীদের দিল্লি যাওয়ার কথা। সেই প্রসঙ্গ টেনে অভিষেক বলেন, ‘‘বিজেপি আমাদের লড়াই করার অধিকার থেকে সরাতে চেয়েছে। ট্রেন বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। বিমান শেষ মুহূর্তে বাতিল করেছে। বাংলায় হেরে গিয়ে নানা অছিলায় বাংলার মানুষের টাকা আটকে রাখছে, প্রতিবাদ জানাতে গেলে সেখানেও বাধা দিচ্ছে।’’

রবিবার অভিষেকের সঙ্গেই দিল্লিতে রওনা হল বিষ্ণুপুরে মৃত তিন শিশুর পরিবার। মৃত শিশুদের পরিবার পরিজনদের দেখিয়ে তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘তিনটি ফুলের মতো শিশু মারা গিয়েছে। মাটির কাঁচা দেওয়াল ভেঙে মারা গিয়েছে তারা। এর দায় কার? বিচারব্যবস্থার কাছে আবেদন করেছি। এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত হওয়া উচিত। যাঁরা কথায় কথায় জনস্বার্থ মামলা করেন, সেগুলি তো আর এখন জনস্বার্থ মামলা নেই, সেগুলি সবই রাজনীতির মামলা হয়ে গিয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন করছি, ১০০ দিনের টাকা কেন বন্ধ, আবাসের টাকা কেন বন্ধ। তা নিয়ে ক’টা জনস্বার্থ মামলা হয়েছে? তাঁর কথায়, ‘‘পরিবারের এত শোকের দিনেও এক কাপড়ে এরা দিল্লি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। কুর্নিশ জানাই এই ভাইদের। বেদনাদায়ক ঘটনার পর আমার সঙ্গে দেখা করে দিল্লি যাব বলে জানিয়েছে। এই ভায়েদের জন্য প্রতিবাদে আমরা দিল্লিতে সরব হব।’’

বিমানবন্দরেই মৃত শিশুদের পরিবার পরিজনেদের দেখিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘ভোটের সময় রাজনীতি করব। কিন্তু জনপ্রতিনিধিদের হিসেবে সকল সমান চোখে দেখে পরিষেবা দেব। গণতন্ত্রে মানুষ শেষ কথা বলবে। শুনলাম, পূরবী হাঁসদা নামে বৃদ্ধা মাটির দেওয়াল ভেঙে মারা গিয়েছেন। বীরভূমের লাভপুরে একই ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার দায় প্রধানমন্ত্রী, গিরিরাজ সিংহ ও বাংলার বিজেপি নেতাদের। তাদের হাতে রক্ত লেগে আছে।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘গিরিরাজ সিংহকে গ্রেফতার করা উচিত। ৩৩ লক্ষ লোকের তালিকা পাঠানো হয়েছিল। ১১ লক্ষ মানুষের আধার সিডিং (আধার ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সংযোগ) হয়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকার তালিকাও পাঠিয়ে দিয়েছে, তাও আবাসের টাকা বন্ধ। কেন?’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এত ভয় কিসের? ট্রেন আটকাচ্ছেন, বিমান বাতিল করাচ্ছেন। সারা দিল্লিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। তৃণমূলের কর্মসূচি বন্ধ করার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক হাজার নরেন্দ্র মোদী ও ১০ হাজার বিজেপি নেতা বাধা দিলেও বাংলার মানুষের প্রতিবাদ চলবে। যতদিন না টাকা দেবে, ততদিন লড়াই চালু থাকবে। প্রয়োজনে লড়াই চলবে অনির্দিষ্ট কালের জন্য। মানুষের ক্ষমতা কী, সেটা ওদের বুঝিয়ে দিতে হবে।’’

দিল্লির মোদী সরকারকে ইংরেজ শাসকদের সঙ্গে তুলনা করে অভিষেক বলেন, ‘‘১১২ বছর আগে ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তারপর থেকে দিল্লির শাসন মানুষ চাক্ষুষ করেছে। বর্তমান শাসকরা সমস্ত লিমিট পার করে দিয়েছে। সর্বশিক্ষা মিশনের টাকা বন্ধ। আবাসের টাকা বন্ধ, ১০০ দিনের টাকা বন্ধ। তাই প্রতিবাদ জরুরি হয়ে উঠেছে।’’ অভিষেকের আরও প্রশ্ন, ‘‘২০ হাজার কোটি টাকায় প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি হবে। আর বাংলার গরিব মানুষ দেড় লক্ষ টাকা বাড়ি তৈরির জন্য পাবে না? বিজেপি সরকার বাংলার মানুষের থেকে ভোট নিয়ে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করেছে, অবহেলিত করেছে। মানুষ চালু থাকবে। ভোটের সময় রাজনীতি হোক। কিন্তু যখন আমরা জনপ্রতিনিধি তখন কিন্তু মানুষের পরিষেবাই সবার আগে।’’

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দাবি, ‘‘আমাদের রাজনীতি হল যেখানে তৃণমূল হেরেছে সেখানও সব পরিষেবা পাচ্ছে মানুষ। যেখানে তৃণমূল জিতেছে সেখানে যেমন লক্ষ্মীর ভান্ডার দেওয়া হচ্ছে, তেমনই যেখানে তৃণমূল হেরেছে সেখানেও লক্ষ্মীর ভান্ডার দেওয়া হচ্ছে।’’ অভিষেকের দাবি, ‘‘আমার কাছে ১০০টা চিঠি জমা পড়েছে। অসমে ১০০ দিনের কাজে আবাসে দুর্নীতি হয়েছে। সব চিঠি নিয়ে যাচ্ছি দিল্লিতে। অসমে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে দুর্নীতি হয়েছে। কিন্তু সেখানে টাকা বন্ধ হয়নি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘দুর্নীতির অভিযোগে বাংলার টাকা দু’বছর ধরে বাকি। কারও আট হাজার, কারও ১০-১২ হাজার টাকা বাকি। সংবিধান স্বীকৃত আইন। মোদীজি টাকা পাঠিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলছি, পৈতৃক সম্পত্তি নয়। পশ্চিমবঙ্গ থেকে কেন্দ্রীয় সরকার এক লক্ষ হাজার টাকা জিএসটি তুলে নিয়ে যায়। আর রাজ্যের এক লক্ষ ১৫ হাজার কোটি পাওনা রয়েছে রাজ্যে। তাই নিজেদের পাওনা বুঝে নিয়ে দিল্লিতে প্রতিবাদ হবে, ক্ষমতা থাকলে আটকান। দিল্লির আন্দোলন হচ্ছেই, অনেক তো আটকানোর চেষ্টা করলেন দিল্লি পুলিশকে কাজে লাগিয়ে। ট্রেন বিমান বাতিল করে, তা-ও তো পারলেন না।’’

আরও পড়ুন
Advertisement