রাজ্যপালের হাতে স্মারকলিপি তুলে দিচ্ছেন শিখেদের সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল। ছবি: সংগৃহীত।
‘খলিস্তানি’ বিতর্কে রাজনৈতিক উত্তাপ চড়েছিল আগেই। এ বার এই বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ করার আর্জি নিয়ে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে দেখা করলেন শিখ গুরুদ্বার কমিটির প্রতিনিধিরা। বৃহস্পতিবার দুপুরে শিখ সম্প্রদায়ের সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি তুলে দেয়।
পরে রাজভবনের বাইরে বেরিয়ে স্মারকলিপিটি পড়ে শোনান প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য গুরমিত সিংহ। তাঁর দাবি, আইপিএস আধিকারিককে ‘খলিস্তানি’ বলে অপমান করে শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপির প্রতিনিধিদল শিখ ধর্মাবলম্বীদের পাগড়ি অর্থাৎ ‘পবিত্রতা’ এবং ‘আত্মসম্মান’কে অপমান করেছেন। দোষীদের বিরুদ্ধে রাজ্যপালকে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছে প্রতিনিধিদলটি।
প্রতিনিধিদলটি জানায়, রাজ্যপাল নিজেও এই ঘটনার নিন্দা করেছেন। তবে যে হেতু বিষয়টি রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত, তা-ই এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি চিঠি লিখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যপাল। প্রতিনিধিদল দলটি এ-ও জানায় যে, রাজ্যপাল তাঁদের রাজভবনের জমিতে পঞ্জাবি বাগ তৈরি করার আশ্বাস দিয়েছেন। এর পাশাপাশি জানিয়েছেন যে, আগামী শুক্রবার তিনি রাজভবনে ভগৎ সিংহের একটি প্রতিকৃতির আবরণ উন্মোচন করবেন।
রাজভবনের তরফে আশ্বাস পাওয়ার পরেও অবশ্য এখনই বিক্ষোভের পথ থেকে সরে আসছেন না শিখ নেতারা। মঙ্গলবার থেকেই টানা বিক্ষোভ অবস্থান শুরু হয় ৬ নম্বর মুরলীধর সেন লেনে রাজ্য বিজেপির সাবেক সদর দফতরের সামনে। বৃহস্পতিবারও প্রতিনিধিদলটি জানায়, তারা রাজভবন থেকে সরাসরি সেই বিক্ষোভ অবস্থানে যোগ দেবেন। সেখানে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কুশপুতুল দাহ করা হবে।
শিখেদের বিরুদ্ধে হওয়া অপমান যে কারও সঙ্গে হতে পারে, এমনটা জানিয়ে শিখ নেতারা শুক্রবার দুপুর ২টোয় সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে তাঁদের অবস্থান বিক্ষোভে যোগ দেওয়ার আর্জি জানিয়েছেন।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর নেতৃত্বে মঙ্গলবার সন্দেশখালি গিয়েছিলেন বিজেপির কয়েক জন বিধায়ক। ধামাখালি এলাকায় ব্যারিকেড গড়ে শুভেন্দুদের আটকে দেয় পুলিশ। সেই সময়েই পুলিশের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয় বিজেপি বিধায়ক এবং কর্মী-সমর্থকদের। অভিযোগ, সে সময় পাগড়িধারী এক পুলিশ অফিসারকে ‘খলিস্তানি’ বলে মন্তব্য করা হয়। মন্তব্যটি উড়ে এসেছিল বিজেপি নেতৃত্বের তরফ থেকে। প্রথমে সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্তার সঙ্গে বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের বাদানুবাদের ফুটেজ প্রকাশ্যে এসেছিল। তাতে ওই অফিসারকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘আমি পাগড়ি পরে আছি বলে আমি খলিস্তানি? এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’’ তার পর অগ্নিমিত্রা এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করে লেখেন, ‘‘কেউ কাউকে খলিস্তানি বলেনি।’’
এই ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি ভিডিয়ো এক্সে পোস্ট করেছিলেন। সেটি রিপোস্ট করে অগ্নিমিত্রা লিখেছিলেন, ‘‘ক্ষমতা থাকলে ভিডিয়ো প্রকাশ করুক তৃণমূল। পুলিশ তৃণমূলের ছদ্মবেশে সন্দেশখালিতে কাজ করছে।’’ বিতর্ক যখন দানা বাঁধতে থাকে তখন শুভেন্দু বলেন, ‘‘পাকিস্তানি-খলিস্তানি এ সব বলার দরকার নেই আমাদের। ওই অফিসার রূঢ় ব্যবহার করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নিজের নম্বর বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। আমি বা আমাদের সঙ্গীরা কোনও ধর্মকে আক্রমণ করে কিছু বলিনি। বলবও না। আমরা গুরু নানকজিকে প্রণাম করি। শিখ ধর্মকে সম্মান করি।”