—ফাইল চিত্র।
ঘরে-বাইরে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ওপর ‘চাপ’ বাড়ানো শুরু করল তৃণমূল। দিল্লিতে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ নিয়ে যেমন রাজধানীতে সরব হয়েছে বাংলার শাসকদল, তেমনই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে তাঁর অপসারণের দাবিতে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছে। পদ্ধতি এবং প্রথাগত ভাবে ব্যাঙ্কের ডিরেক্টররা অনাস্থা জমা দিলেও এই পরিকল্পনার পিছনে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের কৌশল থাকার কথা উড়িয়ে দিচ্ছে না ওয়াকিবহাল মহল।
সোমবার কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান শুভেন্দুর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবটি জমা পড়েছে। অনাস্থা প্রস্তাবেই জরুরি সভা ডাকার দাবি তুলেছেন ডিরেক্টররা। ওই সভাতেই নন্দীগ্রামের বিধায়ককে চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণের দাবি তোলা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বৈঠক হলে সেখানে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটিও হতে পারে। বর্তমানে কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের ডিরেক্টরের সংখ্যা ১৪। যার মধ্যে ভোটাধিকার রয়েছে ১২ জনের। সেই ভোটাভুটিতেই শুভেন্দুকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে অনিয়মের অভিযোগে ওই সমবায় ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে স্পেশাল অডিট শুরু করেছে রাজ্য অর্থ দফতর।
এমনিতেই ওই ব্যাঙ্কে ‘অনিয়মের’ অভিযোগে কাঁথি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন শেয়ারহোল্ডারদের অন্যতম সদস্য রিনা দাস। অর্থাৎ, শুভেন্দু যাতে ওই ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান পদে না থাকতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে সবদিক থেকেই উদ্যোগ নেওয়া শুরু হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে তমলুকের সাংসদ নির্বাচত হওয়ার পর কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন শুভেন্দু। সেই থেকেই তিনি ওই পদে রয়েছেন। গত বছর ১৯ ডিসেম্বর মেদিনীপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হাত ধরে বিজেপি-তে যোগ দেন শুভেন্দু। দলবদল করার আগেই রাজ্যের মন্ত্রিসভা ও বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু। কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, এখনও ‘অবৈধ’ ভাবে একাধিক সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন তিনি। সূত্রের খবর, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান পদ থেকে তাঁকে সরাতে রাজ্য সরকারের কাছে দরবার করেছে। গত সপ্তাহে শুভেন্দুকে বিভিন্ন সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছেন রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়।
রাজ্যের সমবায় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এক তৃণমূল নেতা বলেছেন, ‘‘আরবিআই-র ধারা মানছে না সমবায় ব্যাঙ্কের কমিটি। ব্যাঙ্কে বেআইনিভাবে কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। নিয়ম ভেঙে ঋণ দেওয়া হয়েছে। বকেয়া ঋণ আদায় না হওয়ায় একাধিক ভুয়ো ব্যাখ্যা দিচ্ছে কমিটি। ওই সব অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যাঙ্কের ডিরেক্টররা যে অনাস্থা এনেছেন তা যথার্থ।’’ বর্তমানে শুভেন্দু কাঁথি সমবায় ব্যাঙ্ক-সহ কাঁথি কার্ড সমবায় ব্যাঙ্ক ও বিদ্যাসাগর সেন্ট্রাল সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন। কাঁথির পাশাপাশি ওই সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান পদ থেকেও তাঁকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে রাজ্য সমবায় দফতর। তেমনই খবর রাজ্য সমবায় দফতর সূত্রে।