ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়ল জ়িনতের ‘প্রেমিকের’ ছবি।
শনিবার ভোরে ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা দিয়ে কার্যত নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল জ়িনতের ‘প্রেমিক’। তন্নতন্ন করে খুঁজেও তার সন্ধান মিলছিল না। অবশেষে রবিবার ভোরে ফের ট্র্যাপ ক্যামেরায় ধরা পড়ল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের গতিবিধি। বন দফতর সূত্রে খবর, ভোর ৫টা ৫১ মিনিটে ট্র্যাপ ক্যামেরায় তাকে দেখা গিয়েছে। ফলে বাঘটি যে পুরুলিয়ার বান্দোয়ান ব্লকের রাইকা পাহাড়েই রয়েছে, সে ব্যাপারে এক রকম নিশ্চিত বনকর্মীরা। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় গ্রামবাসী ও হুলা পার্টিকে নিয়ে মোট ১৪ দলে ভাগ হয়ে রবিবার রাইকা পাহাড়ে তল্লাশি অভিযানের পরিকল্পনা করেছে বন দফতর।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, গত বছরের শেষ দিকে ওড়িশা থেকে আসা জ়িনত বাংলার জঙ্গলমহলে ঢুকে যে যে এলাকায় বিচরণ করেছিল, নতুন বাঘটিও সেই সেই এলাকায় যাচ্ছে। খুব সম্ভবত বাঘিনি জ়িনতের খোঁজেই জঙ্গলমহলে ঘুরে বেড়াচ্ছে ‘প্রেমিক’ বাঘটি। বাঁকুড়া সম্মিলনী কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিষয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক বিশ্বরঞ্জন ধুয়ার মত, ‘‘জ়িনত যে এলাকা দিয়ে গিয়েছিল, এই বাঘটাও সেই এলাকা দিয়েই যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, জ়িনতের প্রস্রাবের সঙ্গে নির্গত বিশেষ ধরনের হরমোন ‘ফেরোমন’-এর আকর্ষণেই বাঘটি রাইকা পাহাড় সংলগ্ন জঙ্গলে থেকে গিয়েছে এখনও। সে মনে করছে, জ়িনত এখনও এই এলাকাতেই আছে। সাধারণত বন্যপ্রাণীদের ফেরোমন খোলা আবহাওয়ায় ১৪-১৫ দিন স্থায়ী হয়। তবে এ ক্ষেত্রে জ়িনতের শরীর থেকে নির্গত ফেরোমন আরও বেশি দিন স্থায়ী হয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।’’
ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ির জঙ্গল ছেড়ে সপ্তাহখানেক আগে পুরুলিয়ার রাইকা পাহাড়ে আস্তানা গেড়েছিল বাঘটি। বন দফতর সূত্রে খবর, শুক্রবার রাতে বান্দোয়ান-কুইলাপাল রাস্তা পেরিয়ে সে কয়েক ঘণ্টার জন্য নেকড়া গ্রাম সংলগ্ন হাতিরামগোড়ার জঙ্গলে গিয়েছিল। তবে ওই রাতেই সে আবার রাইকা পাহাড়ে ফিরে যায়। শনিবার দিনভর হুলা পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে বনকর্মীরা হন্যে হয়ে রাইকা পাহাড়ে খোঁজ চালিয়েছিলেন। কিন্তু বাঘটির সন্ধান মেলেনি।
বন দফতরের দাবি, বান্দোয়ান ব্লকের রাইকা পাহাড় কোনও ছোট এলাকা নয়। তা ছাড়া এই পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গলের ঘনত্ব খুবই বেশি। এবং জঙ্গল রীতিমতো দুর্গমও। এ ছাড়া রাইকা পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকটি গুহা এবং পাহাড়ি ঝোরা রয়েছে। জঙ্গলে যথেষ্ট সংখ্যক বুনো শূকরও রয়েছে। বন দফতরের ধারণা, খাবার, পানীয় জল এবং নিরাপদ আশ্রয় কোনও কিছুর জন্যেই রাইকা পাহাড় ছাড়তে হচ্ছে না বাঘটিকে। তাই তার খোঁজ পেতে এত বেগ পেতে হচ্ছে বনকর্মীদের।
এ দিকে বাঘ রাইকা পাহাড়েই লুকিয়ে রয়েছে, বন দফতর এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতেই পাহাড় সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় মাইক প্রচার শুরু করেছে তারা। বান্দোয়ান ব্লক ছাড়াও মানবাজার ২ নম্বর ব্লকের জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলিতে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে চলছে মাইকিং। গবাদি পশু চরাতে বা অন্য কোনও প্রয়োজনে জঙ্গলে যেতে নিষেধ করা হয়েছে স্থানীয়দের। রাতে বাড়ির বাইরের কাজ এড়িয়ে চলার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। খুব প্রয়োজনে দল বেঁধে যাতায়াতের পরামর্শ দিচ্ছেন বনকর্মীরা।
স্থানীয়দের সতর্ক করার পাশাপাশি বাঘের খোঁজ পেতে রবিবার নিজেদের পরিকল্পনায় কিছুটা বদল এনেছে বন দফতর। রাইকা পাহাড়ের কোন জায়গায় গুহা রয়েছে এবং কোথায় বাঘ লুকিয়ে থাকার মতো পরিবেশ রয়েছে, সে সম্পর্কে স্থানীয়দের স্পষ্ট ধারণা থাকায় এ বার বাঘের খোঁজে বন দফতরের অভিযানে যুক্ত করা হয়েছে তাঁদেরও। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার স্থানীয় মানুষ ও হুলা পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে পাহাড়ের তিন দিক থেকে অভিযান শুরু করা হবে।