Launch

পড়েই নষ্ট, চার বছরেও চালু হল না ৪০ লক্ষের লঞ্চ

২০১৯ সালের শেষ দিকে রাজ্যের পরিবহণ দফতরের তরফে একটি লঞ্চ পাঠানো হয় হিঙ্গলগঞ্জে। উদ্দেশ্য ছিল, হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের নেবুখালি ও দুলদুলি জেটিঘাটের মধ্যে যাত্রী পারাপারের জন্য লঞ্চ পরিষেবা চালু করা।

Advertisement
নবেন্দু ঘোষ 
হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৪ ০৮:১০
অযত্নে পড়ে সেই লঞ্চ।

অযত্নে পড়ে সেই লঞ্চ। —নিজস্ব চিত্র।

এক দিকে ঝুঁকি নিয়ে নৌকোয় নদী পারাপার করছেন মানুষজন। অন্য দিকে, প্রায় ৪০ লক্ষ টাকায় কেনা লঞ্চ কেবল পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে গিয়েছে! সরকারি অর্থের এমন ‘অপচয়’ নিয়ে প্রশাসনকে বিঁধছে বিরোধীরা।

Advertisement

২০১৯ সালের শেষ দিকে রাজ্যের পরিবহণ দফতরের তরফে একটি লঞ্চ পাঠানো হয় হিঙ্গলগঞ্জে। উদ্দেশ্য ছিল, হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের নেবুখালি ও দুলদুলি জেটিঘাটের মধ্যে যাত্রী পারাপারের জন্য লঞ্চ পরিষেবা চালু করা। নৌকো করে ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার বন্ধ করার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু চার বছর পার হলেও এক দিনও ওই লঞ্চ যাত্রী পারাপারের কাজে লাগানো হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় মানুষের। দীর্ঘ দিন ধরে হিঙ্গলগঞ্জ বিডিও অফিসের পাশের খালে রাখা ছিল লঞ্চটি। অভিযোগ, সেখানে পড়ে থেকে পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে বহুমূল্য সেটি। দেখা গেল, লঞ্চের বেশিরভাগ অংশ ভেঙে গিয়েছে। নদীতে জোয়ার হলে অর্ধেকের বেশি অংশ জলে ডুবে থাকে। ভাঙাচোরা লঞ্চের ভিতরে পলি জমে গিয়েছে। ভিতরের কলকব্জা সবই নষ্ট। লঞ্চ যখন আনা হয়, সে সময়ে হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি ছিলেন সুদীপ মণ্ডল। বর্তমানে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ সুদীপের ব্যাখ্যা, ‘‘দুলদুলির দিকে ভাসমান জেটিঘাট থাকলেও নেবুখালির দিকে ভাসমান জেটিঘাট আজও হয়নি। এই লঞ্চ ভাসমান জেটিঘাট ছাড়া ব্যবহার করা যায় না। তাই রক্ষণাবেক্ষণ করাও সম্ভব হয়নি।’’ বহুমূল্য লঞ্চ যখন পড়ে নষ্ট হচ্ছে, তখন প্রতি দিন কয়েকশো মানুষকে ঝুঁকি নিয়েই নদী পারাপার করতে হচ্ছে। দুলদুলি-নেবুখালি জেটিঘাট দিয়ে নৌকোয় হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের দুলদুলি, গোবিন্দকাটি, যোগেশগঞ্জ, কালীতলা, সাহেবখালি— এই পাঁচটি পঞ্চায়েত এলাকার মানুষ রোজ যাতায়াত করেন সাহেবখালি নদী পেরিয়ে। স্থানীয় মানুষ জানাচ্ছেন, হিঙ্গলগঞ্জ ব্লক অফিসে বা শহরে যেতে রোদ বৃষ্টি সবেতেই নদী পারাপারের জন্য ভরসা নৌকো। অত্যধিক যাত্রী, মোটরবাইক, সাইকেল তুলে নদী পারাপার করানো হয় নৌকোয়। লঞ্চ চালু হলে এ ভাবে ঝুঁকি নিতে হত না।

বিরোধীরা এ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না। হিঙ্গলগঞ্জের সিপিএম নেতা রবি বিশ্বাস বলেন, ‘‘তৃণমূল দুর্নীতি, স্বজনপোষণ ও ব্যক্তিস্বার্থ ছাড়া কিছু বোঝে না। মানুষের সেবা করার ইচ্ছে নেই, তাই সরকারি সম্পত্তি এ ভাবে নষ্ট হলেও তাদের কিছু যায় আসে না।’’ বিজেপি নেতা গোবিন্দ অধিকারীর কথায়, ‘‘লঞ্চ হলে নেবুখালি-দুলদুলির মধ্যে নদী পারাপার অনেক বেশি আরামপ্রদ ও নিরাপদ হত। কিন্তু এই সরকার সুন্দরবনের প্রান্তিক মানুষের কথা ভাবে না।’’

হিঙ্গলগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৈদুল্লা গাজিও মানছেন, লঞ্চটি আর ব্যবহারের যোগ্য নেই। হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও দেবদাস গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘আমার আমলে আসেনি লঞ্চটি। তাই আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না।’’

আরও পড়ুন
Advertisement