River Encroachment

বেতনা নদী দখলমুক্ত করতে পদক্ষেপ প্রশাসনের

বাগদা এলাকায় বেতনা নদীর জমি দখল করে নির্মাণ কাজের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। স্থানীয় বাগদা বাজার সংলগ্ন হ্যারিসন রোড এবং বনগাঁ-বাগদা সড়ক এলাকায় ওই নদীর জমি দখল করে নির্মাণ হয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
বাগদা শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৪ ০৮:৩৬
প্রসাশনের তরফে লাগানো সেই বোর্ড।

প্রসাশনের তরফে লাগানো সেই বোর্ড। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক। 

বাগদার বেতনা (বেত্রাবতী) নদী দখলমুক্ত করতে পদক্ষেপ করল প্রশাসন। বাগদা বিধানসভার উপ নির্বাচনের আবহের মধ্যেই বেতনা নদী সংলগ্ন এলাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাইনবোর্ড লাগিয়ে জানানো হয়, বেদখল হওয়া জমির দখল নেওয়া হল। বোর্ডে লেখা, ‘এই জমি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের।’ বোর্ডে জমির পরিমাণ লেখা, ২.১৮ একর। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। ওই ২.১৮ একর জমির মধ্যে আছে বেতনা নদীর জমি এবং পূর্ত দফতরের জমি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’

Advertisement

বাগদা এলাকায় বেতনা নদীর জমি দখল করে নির্মাণ কাজের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। স্থানীয় বাগদা বাজার সংলগ্ন হ্যারিসন রোড এবং বনগাঁ-বাগদা সড়ক এলাকায় ওই নদীর জমি দখল করে নির্মাণ হয়েছে বলে অভিযোগ। এলাকার সচেতন গ্রামবাসীদের অনেকের ক্ষোভ, বার বার প্রকাশ্যে নির্মাণ চললেও প্রশাসন নির্বিকার ছিল। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসন এবং ব্লক ভূমি সংস্কার দফতরকে একাধিক বার জানিয়েও সুরাহা হয়নি।

কয়েক দিন আগে উপ নির্বাচনের প্রচারে বাগদায় এসে জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী জানিয়েছিলেন, বাগদা রণঘাট এলাকায় তৃণমূলের যে সব নেতা, জনপ্রতিনিধি সরকারি জমি দখল করে রেখেছেন, তা দখলমুক্ত করে ফিরিয়ে দিতে হবে। না হলে তাঁকে এবং প্রশাসনকে পদক্ষেপ করতে হলে তা ওই নেতাদের পক্ষে ‘ভাল হবে না।’

এরপরেই নড়চড়ে বসে প্রশাসন। সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শন করেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। তারপরেই সাইনবোর্ড লাগানো হল।

সংস্কারের অভাবে বেতনা দীর্ঘ দিন মৃতপ্রায়। কচু এবং কচুরিপানায় ভরা। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, নদীর মধ্যে অস্থায়ী বা পাকা নির্মাণ। দোকানপাট, খাবারের দোকান তৈরি হয়েছে। তবে শুধু ওই বাজার এলাকাতেই নয়, ব্লকের নানা জায়গায় নদীকে রুদ্ধ করা হয়েছে। কোথাও মাটির বাঁধ দেওয়া হয়েছে, কোথাও নদীর জমি কেটে ছোট ছোট জলাশয় তৈরি করে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এমনকী, নদীর মাটিও কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ। এক সময়ে বাগদা ব্লকের একাংশ এবং বাগদা বাজার এলাকার বর্ষার জল নিকাশির প্রধান মাধ্যম ছিল বেতনা। কিন্তু এখন নদী মৃতপ্রায় হওয়ায় জমা জল সেখানে প্রায় নামেই না।

এ দিন প্রশাসনের সাইনবোর্ড লাগানোর বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। তাদের বক্তব্য, এটা ভোটের চমক ছাড়া কিছু নয়। ভোট-পর্ব মিটে গেলে সব কিছু আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডল বলেন, ‘‘রবিবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে বোর্ড লাগানো হয়েছিল। তারপরে তা আবার খুলে ফেলা হয়। সোমবার তা আবার লাগানো হয়েছে। তৃণমূলের নেতাদের মদতেই ওখানে দিনদুপুরে নদী চুরি হয়েছে। নারায়ণ গোস্বামীর বুকের পাটা থাকলে বেআইনি দোকানপাট, জবরদখল ভেঙে দেখান। বাগদায় ভোট বলে এই সমস্ত বোর্ড টাঙানো হচ্ছে। এ ভাবে মানুষকে বোকা বানানো যাবে না।’’

নারায়ণের বক্তব্য, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আগেই নবান্ন থেকে এই ঘোষণা করেছিলেন, সরকারি জমি দখলমুক্ত করতে হবে। আমি বাগদার একটি সভায় সেই কথার সূত্র ধরে বলেছিলাম। প্রশাসনিক কাজ করতে গেলে একটু সময় লাগে। এলাকায় জমি মেপে তারপরে পদক্ষেপ করা হয়েছে। প্রশাসন নদীর জমি দখলমুক্ত করবেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement