টাকী পৌরসভা। —ফাইল চিত্র।
বোর্ড গঠন হওয়ার পর কয়েক মাস কেটে গেলেও অভিযোগ, ওয়ার্ডের উন্নয়নের জন্য টাকা পাননি কাউন্সিলরেরা। তাঁদের সঙ্গে উপ পুরপ্রধান দুর্ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে টাকি পুরসভার উপ পুরপ্রধান ফারুক গাজির অপসারণের জন্য দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে দরবার করেছেন পুরপ্রধান-সহ তৃণমূলের কাউন্সিলরদের একাংশ। যদিও এ নিয়ে পুরপ্রধান সোমনাথ মুখোপাধ্যায় মন্তব্য করতে চাননি। অভিযোগ মানেননি উপ পুরপ্রধান।
পুরসভা ও দলীয় সূত্রের খবর, বোর্ড গঠন হওয়ার দু’তিন মাস পর থেকেই উপ পুরপ্রধানকে নিয়ে নানা সমস্যা শুরু হয়। পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের কাউন্সিলর রিজিয়া বেগমের অভিযোগ, বোর্ড গঠন হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ওয়ার্ডের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা পুরসভা থেকে পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা যা আসছে, সবটাই উপ পুরপ্রধান পুরপ্রধানকে চাপে ফেলে কৌশলে নিজের কুক্ষিগত করছেন। কাউন্সিলরদের সঙ্গে তিনি দুর্ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ। রিজিয়া বলেন, ‘‘উপ পুরপ্রধান হয়ে উনি পুরপ্রধানের ক্ষমতা ভোগ করতে চান। পুরপ্রধান ইতিমধ্যে বেশ কিছু কাউন্সিলরের দাবি মেনে জেলা তৃণমূলের একাধিক নেতার কাছে ওঁকে সরিয়ে দিতে আবেদন জানিয়েছেন।’’ রিজিয়া আরও বলেন, ‘‘উপ পুরপ্রধানকে সরিয়ে না দিলে আমরা বেশিরভাগ কাউন্সিলর ইস্তফা দেব।’’
প্রায় একই অভিযোগ করে ২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের কাউন্সিলর নিতা ঘোষ বলেন, ‘‘আমার ওয়ার্ডের উন্নয়নের কাজের জন্য কোনও অর্থ পাইনি। আমার স্বামী বিষয়টি পুরসভায় বলতে গেলে তাঁকে শারীরিক ভাবে হেনস্থা করেন উপ পুরপ্রধান। দলকে বিষয়টি জানিয়েছি।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, বসিরহাট দক্ষিণের তৃণমূলের বিধায়ক সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়, সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্ৰিয় মল্লিক, তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী-সহ একাধিক তৃণমূল নেতাকে চিঠি লিখে উপ পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পুরপ্রধান। জুলাই মাসের শেষের দিকে বিধানসভায় সব পক্ষকে নিয়ে বনমন্ত্রী ও সেচমন্ত্রী কথা বলেন। জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘এই নিয়ে আবার সব পক্ষকে নিয়ে বসা হবে। আশা করি, সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’’ পুরপ্রধান বলেন, ‘‘যা বলার জেলা নেতৃত্ব বলবেন। আমি কিছু বলব না।’’
উপ পুরপ্রধান ফারুক গাজির কথায়, ‘‘আমি কোনও বেনিয়ম করিনি। সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ প্রমাণিত হলে নিজেই পদত্যাগ করব।’’
বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। উত্তর ২৪ পরগনার এই ছোট পুর এলাকায় ভোটে নজিরবিহীন সন্ত্রাসের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল বলে অভিযোগ তাঁদের। একাধিক আসনে কোনও বিরোধী প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারেননি বলে অভিযোগ উঠেছিল। ১৬ ওয়ার্ডের টাকি পুরসভায় বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় তৃণমূল জয়ী হয়েছিল ৭টি ওয়ার্ডে। ৯টিতে ভোট হয়। সব মিলিয়ে তৃণমূল পেয়েছিল ১৪টি আসনে। বিজেপি পায় ২টি।
বিরোধীদের দাবি, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েও বোর্ড গঠনের সময় থেকে তৃণমূলের অন্দরের অশান্তি বার বার সামনে এসেছে। স্থানীয় বিজেপি নেতা সুকুমার রায় বলেন, ‘‘ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ওদের সমস্যা দেখা দিয়েছে। কিন্তু তার ফল ভোগ করতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। কোনও পরিষেবা পাচ্ছেন না তাঁরা।’’