পাঁশকুড়ায় উদ্ধার হাবড়ার বাসিন্দা সুরেন্দ্রনাথ কলেজের ছাত্রের দেহ। — নিজস্ব চিত্র।
কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ কলেজের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রের রহস্যমৃত্যু। গত রবিবার উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার বাসিন্দা স্বাগত বণিকের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয় পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার রেললাইনের পাশ থেকে। বাড়িতে শিয়ালদহ যাচ্ছি বলে বেরিয়ে পাঁশকুড়ায় কেন তিনি পৌঁছেছিলেন, তা নিয়ে দানা বাঁধছে রহস্য। মেধাবী ওই ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় বন্ধুদের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলছেন স্বাগতের বাড়ির লোকজন।
গত ৩ সেপ্টেম্বর, রবিবার দুপুরে শিয়ালদহ যাচ্ছেন বলে হাবড়ার বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন সুরেন্দ্রনাথ কলেজের স্ট্যাটিস্টিক্স বিভাগের পড়ুয়া স্বাগত। তার পর থেকে তাঁর আর কোনও খোঁজ নেই। মোবাইলটিও বাড়িতে ফেলে যান তিনি। কোনও খোঁজখবর না পেয়ে স্বাগতের বাড়ির লোকেরা হাবড়া থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। রবিবার গভীর রাতে পুলিশ জানায়, পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার কাছে ক্ষীরাই স্টেশনে রেললাইনের পাশ থেকে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় একটি দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে দেখা যায়, সেই দেহটিই স্বাগতের।
এ খবর বাড়িতে আসতেই সকলে ভেঙে পড়েন। পরিবারের লোকেদের দাবি, পাঁশকুড়ায় তাঁদের কোনও আত্মীয়-পরিজনও থাকেন না। স্বাগতের কোনও বন্ধুর বাড়িও ওই এলাকায় নয়। তা হলে শিয়ালদহ থেকে প্রজেক্টের ‘বাইন্ডিং’ নিয়ে আসার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্বাগত ১১৮ কিলোমিটার দূরে পাশকুঁড়ায় কী করে গেলেন? স্বাগতের দিদি বলেন, ‘‘শিয়ালদহ থেকে প্রজেক্টের বাইন্ডিং আনতে যাচ্ছি বলে ভাই রবিবার ২টো ৫৫মিনিটের ট্রেন ধরে। শিয়ালদহ যাবে বলে বেরিয়ে পাঁশকুড়া কী করে পৌঁছে গেল! আমাদের কোনও আত্মীয় ওখানে থাকেন না। যদি আত্মহত্যার উদ্দেশ্য থাকত ভাইয়ের, তা হলে তো হাবড়া থেকে শিয়ালদহ যাওয়ার পথেই করতে পারত। পাঁশকুড়ায় ওকে ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। আমি চাই না আর কোনও ভাই এ ভাবে হারিয়ে যাক। প্রশাসন দয়া করে সত্যিটা বার করুক।’’
স্বাগতের বাবার দাবি, তিনি ছেলের নিখোঁজ ডায়েরি করার পরে আবারও থানায় গিয়েছিলেন। সেই সময় পাড়ার এক জন তাঁকে থানায় গিয়ে বলেন, ‘‘সব শেষ! বাড়ি চলুন।’’ তিনি বলেন, ‘‘পাঁশকুড়া সম্পর্কে আমাদের কোনও ধারণাই নেই। আমার মনে হচ্ছে, এর পিছনে ওর কোনও বন্ধুবান্ধবের কোনও পরিকল্পনা আছে। ও তো চলে গিয়েছে, আর ফিরবে না। কিন্তু ভবিষ্যতে যাতে আর কোনও মা, বাবাকে যাতে এই পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে না হয়ে, সে জন্য প্রশাসনকে সজাগ থাকতে হবে। প্রশাসনের পক্ষেই একমাত্র সম্ভব সত্য বার করা।’’