টানা বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাসে একাধিক নদীবাঁধে ধস

বুধবার পর্যন্ত জেলায় হলুদ সতর্কতা জারি রয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
কাকদ্বীপ, হিঙ্গলগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৫১
River dam collapsed

মঙ্গলবার মৌসুনি দ্বীপের চিনাই নদীবাঁধে ধস নেমেছিল। মেরামতির কাজ শুরু। ছবি: সমরেশ মণ্ডল।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার উপকূল এলাকায় মঙ্গলবার সকাল থেকে বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি পড়ছে। বুধবার সকাল থেকে উপকূলের আকাশ কালো মেঘে ঢাকা। চলছে দফায় দফায় বৃষ্টি হয়। যার ফলে উপকূল এলাকার বেহাল নদীবাঁধগুলির মাটি নরম হয়েছে। নামখানা কাকদ্বীপ ও সাগর ব্লকের তিনটি এলাকার বাঁধে বড়সড় ধস নেমেছে। মঙ্গলবার ভোরে ধস নামে নামখানা ব্লকের মৌসুনি দ্বীপের বাগডাঙা জামালের ঘাটের কাছে চিনাই নদীর মাটির বাঁধে। প্রায় দেড়শো মিটার বাঁধে ধসের জেরে পাশের লোকালয়ে জল ঢোকার আশঙ্কা করছে বাসিন্দারা। কাকদ্বীপ ব্লকের রামগোপালপুর পঞ্চায়েতের মন্দিরঘাট এলাকায় সপ্তমুখী নদীর বাঁধেও প্রায় ৫০ মিটার অংশে ধস নামে।

Advertisement

অন্য দিকে, সাগরের মহিষামারি এলাকায় বুধবার সকালে আচমকা হুগলি নদীর বাঁধে প্রায় ১০০ মিটার অংশে ধস নামে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এলাকাবাসী। সাগর, কাকদ্বীপ ও নামখানা— তিন জায়গায় সেচ দফতর ও পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে বাঁধ মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে।

বুধবার পর্যন্ত জেলায় হলুদ সতর্কতা জারি রয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উপকূল এলাকায় বিক্ষিপ্ত ভাবে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কটালের জেরে নদী ও সমুদ্রের জলস্তর বাড়ায় জোয়ার চলাকালীন সুন্দরবনের নামখানা, সাগর, পাথরপ্রতিমা, কাকদ্বীপের বেহাল বাঁধগুলির উপরে নজরদারি চালাচ্ছে প্রশাসন ও সেচ দফতর।

বকখালি ও গঙ্গাসাগর সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের সমুদ্রে নামতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপকূল এলাকাগুলিতে লাগাতার মাইকে প্রচার চালানো হচ্ছে। বৃষ্টি কমলেও বাঁধের মাটি নরম হয়ে থাকায় ভাঙনের আশঙ্কায় নতুন করে প্লাবনের আতঙ্কে রয়েছেন সুন্দরবনের উপকূলের বাসিন্দারা। ব্লক ও মহকুমা অফিসে কন্ট্রোলরুম চালু করা হয়েছে।

মৌসুনি দ্বীপের বাগডাঙার বাসিন্দা সুভাষ দাস বলেন, ‘‘শুকনো মরসুমে বাঁধ মেরামতির কাজ হলে এমন বিপত্তি হত না। বার বার দুর্যোগে বাঁধ ভেঙে এলাকায় জল ঢোকে। স্থায়ী কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।’’ গঙ্গাসাগর পঞ্চায়েতের সদস্য বিকাশ দাস বলেন, ‘‘কিছু দিন আগে সেচ দফতর মহিষামারি এলাকায় বাঁধের কাজ করেছিল। কিন্তু পুরো বাঁধে জিও চট দেওয়া হয়নি। বর্তমানে বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে, ধসও নেমেছে। পঞ্চায়েতে জানানো হয়েছে।’’

কাকদ্বীপের মহকুমাশাসক অরণ্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে সমস্ত এলাকার নদীবাঁধ বেহাল ও ধস নেমেছে, তা দ্রুত মেরামতির জন্য সেচ দফতরকে বলা হয়েছে।’’

অন্য দিকে, হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের সান্ডেলেরবিল পঞ্চায়েতের বাঁকড়া ডোবর গ্রামের ১৩ নম্বর সান্ডেলেরবিল ও ১ নম্বর আমবেড়িয়া চত্বরে নদীবাঁধের পাশে থাকা নদীর চরে গত কয়েক দিন ধরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রধান পরিতোষ বিশ্বাস বলেন, "কয়েকশো ফুট নদীর চরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ক্রমশ বাড়ছে ভাঙন। স্থানীয় গ্রামবাসীরা উদ্বিগ্ন। এ ভাবে চর ভাঙতে থাকলে নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তবে এখনও কাজ শুরু হয়নি।" স্থানীয় সূত্রের খবর, এই এলাকায় বেশ কয়েকটি জায়গায় নদীবাঁধের অবস্থা জরাজীর্ণ।
হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও শাশ্বতপ্রকাশ লাহিড়ী বলেন, "সেচ দফতরকে জানিয়েছি। দ্রুত কাজ শুরু হবে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement