সন্দীপ ঘোষ। —ফাইল ছবি।
স্কুলের প্রাক্তন ‘কৃতী’ ছাত্রদের তালিকার বোর্ডে এখনও তাঁর নাম রয়েছে। কিন্তু আরজি কর-কাণ্ডের গোড়া থেকে সেখানকার সদ্যপ্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ শোনা যাচ্ছে, তাতে বিস্মিত তাঁর স্কুলের সহপাঠী, শিক্ষকেরা। বনগাঁ হাই স্কুলেরই ছাত্র ছিলেন সন্দীপ। প্রাক্তন কৃতী ছাত্রদের তালিকা থেকে তাঁর নাম বাদ দেওয়ার দাবিও উঠছে।
গত শুক্রবার থেকে দফায় দফায় সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে সন্দীপকে। এক সময়ের কৃতী ছাত্রের বিরুদ্ধে কেন মরদেহ লোপাট, হাসপাতালের বর্জ্য বাংলাদেশে পাচার, স্বজনপোষণ, ইন্টার্ন নিয়োগে দুর্নীতির মতো অভিযোগ উঠছে, তা নিয়ে জল্পনা চলছে তাঁর প্রাক্তন সহপাঠীদের মধ্যে। অবশ্য তাঁকে নিয়ে ভুল তথ্য প্রচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ জানিয়ে আদালতে মামলা করেছেন সন্দীপ।
১৯৮৯ সালের উচ্চ মাধ্যমিকে তিনি ৭৯.৭ শতাংশ নম্বর পেয়ে স্কুলে প্রথম তিনজনের মধ্যে জায়গা করে নেন। স্কুলে তাঁর সহপাঠী তথা চিকিৎসক সুদীপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘আরজি কর কাণ্ডের পর সন্দীপের জন্য প্রবাসী আত্মীয়-পরিজনদের কাছ থেকে কটূ কথা শুনতে হচ্ছে। যদি ওর বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণিত হয়, তা হলে স্কুলের কৃতী ছাত্রদের তালিকার বোর্ড থেকে ওর নাম যেন মুছে দেওয়া হয়।’’ একই বক্তব্য সন্দীপের আরও কিছু সহপাঠীর। তাঁরা জানান, স্কুল ছাড়ার পরে সন্দীপ তাঁদের সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখেননি।
সন্দীপের আর এর স্কুল সহপাঠী তথা আন্তর্জাতিক একটি কনসালটেন্সি সংস্থার সিইও অরিন্দম ঘোষ বলেন, ‘‘ছাত্রাবস্থায় সন্দীপ কারও সঙ্গে মিশতে চাইত না। ও চাইত, শিক্ষকেরা কেবল ওর প্রশংসা করুন। আবৃত্তি করত। পড়াশোনায় নিঃসন্দেহে ভাল ছিল। তবে এখন যা শুনছি, আশ্চর্য হচ্ছি। যত অভিযোগ উঠছে তা কি ওর একার পক্ষে করা সম্ভব!’’
ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক কুণাল দে বলেন, ‘‘সন্দীপের নাম কৃতীদের তালিকার বোর্ড থেকে মুছে দেওয়া নিয়ে কোনও আবেদন আমার কাছে এখনও আসেনি। যদি আসে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’’
সন্দীপকে ছাত্র হিসেবে পাওয়া শিক্ষকেরাও এখন বিস্মিত। ওই প্রাক্তন ইংরেজি শিক্ষক দেবাশিস রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘মনে আছে, সন্দীপ একাদশ শ্রেণিতে স্কুলে ভর্তি হয়েছিল। ছাত্র হিসেবে খুবই ভাল ছিল। তখন তো এত মেডিক্যাল কলেজ ছিল না। তার মধ্যেও জেনারেল ক্যাটিগরিতে ও মেডিক্যালে পড়ার সুযোগ পেয়েছিল।’’ তবে সে দিনের সন্দীপের সঙ্গে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপের কোনও মিল খুঁজে পাচ্ছেন না দেবাশিস। তাঁর কথায়, ‘‘কিছু মেলানো যাচ্ছে না। ওর বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনে আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি। এতটা পরিবর্তন আমাদের কাছে বিস্ময়ের।’’
বনগাঁ হাই স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক দিলীপ ঘোষ বলেন," সন্দীপ ভাল ছাত্র ছিল। পরবর্তী সময়ে স্কুলের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ ছিল না ওর। ওর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সঙ্গে ছাত্র সন্দীপকে মেলাতে পারছি
না।’’ ছেলেবেলা থেকে দীর্ঘদিন বনগাঁ শহরেই কাটিয়েছেন সন্দীপ। পাড়ায় তাঁকে অনেকেই ‘নোটন’ নামে চেনেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় বিস্মিত পাড়ার প্রবীণেরাও।