গ্রেফতারির দাবিতে পথে সন্দেশখালির মহিলারা। — নিজস্ব চিত্র।
ছিল খেলার মাঠ। রোজ সকাল, বিকেল সেখানে দাপিয়ে খেলে বেড়াত গ্রামের ছোটরা। রাতারাতি সেই মাঠই কেটে করে দেওয়া হয় মাছের ভেড়ি! টলটলে জলে কেবল মাছের ঘাই দেখা যায়, সবুজ মাঠ এখন স্মৃতির সরণিতে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে এমনই হরেক ‘কাণ্ড’-এর নজির ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছেন শেখ শাহজাহান, সন্দেশখালি ২ ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সদস্য শিবপ্রসাদ হাজরা ওরফে শিবু হাজরা, তাঁর সঙ্গী উত্তর সর্দারেরা। এমনটাই অভিযোগ গ্রামবাসীদের একাংশের। শাহজাহানবাহিনীর এই ‘জুলুমে’র বিরুদ্ধেই পথে নেমেছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, শাহজাহানকে ‘প্রোটেকশন’ দিচ্ছে পুলিশই! পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও সেই তালিকায় শিবু, উত্তমদের নাম নেই বলে দাবি বিক্ষোভকারী গ্রামবাসীদের।
শাহজাহান, শিবু হাজরা, উত্তম সর্দারদের গ্রেফতারির দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পথে বেরিয়েছেন সন্দেশখালির মহিলারা। হাতে লাঠি, বাঁশ নিয়ে তাঁরা সন্দেশখালি থানা অভিযানে যান। কিন্তু পুলিশ থানার আগেই তাঁদের আটকে দেয়। প্রতিবাদে রাস্তায় বসে পড়েন মহিলারা। পুলিশ এসে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি। উল্টে, ক্ষোভের পারদ আরও মাথাচাড়া দেয়। বিক্ষোভে উপস্থিত এক মহিলার দাবি, কে কোথায় লুকিয়ে পুলিশ সব জানে। তিনি বলছেন, ‘‘চার-পাঁচ দিন আগেও শাহজাহানকে এলাকায় দেখা গিয়েছে। শুনেছি, পুলিশের সঙ্গেও সে (শাহজাহান) কথা বলেছে।’’ বুধবারও গণরোষ আছড়ে পড়েছিল সন্দেশখালিতে। গ্রামবাসীরা তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি উত্তমকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। বৃহস্পতিবার সকালে সেই গ্রামবাসীরাই দাবি করছেন, পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হলেও এখনও উত্তমকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।
গ্রামবাসীরা বলছেন, পরিবর্তনের পর থেকেই সন্দেশখালি এলাকায় দাপটের সঙ্গে সাম্রাজ্য বাড়িয়ে চলেছেন শাহজাহানরা। কিন্তু ইডির উপর হামলার ঘটনার পর থেকেই খোঁজ নেই শাহজাহানের। যদিও বিক্ষোভরত গ্রামবাসীদের দাবি, পুলিশই শাহজাহানকে নিরাপত্তা দিচ্ছে। তাঁদের অভিযোগ, শাহজাহান, শিবু, উত্তমরা গ্রামবাসীদের উপর অকথ্য অত্যাচার চালাতেন। কখনও গ্রামের রাস্তা বন্ধ করে আবার কখনও চাষের জমি কেড়ে নিয়ে তাতে মাছের ভেড়ি বানাতে সিদ্ধহস্ত শিবু, উত্তমরা। এমন কি খেলার মাঠকে পুরোপুরি কেটে রাতারাতি ভেড়ি বানিয়ে দেওয়ার কীর্তিও রয়েছে এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতাদের ঝুলিতে। তাঁদের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলেই জুটত বেধড়ক মার। বহিরাগত দুষ্কৃতীদেরও গ্রামবাসীদের উপর লেলিয়ে দিতেন শাহজাহানরা, বলে অভিযোগ গ্রামের মহিলাদের। কিন্তু শাহজাহান পালাতেই ভয় ঝেড়ে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন গ্রামবাসীরা। তাঁরা নিজেদের তৃণমূলের সমর্থক হিসাবে পরিচয় দিয়ে এলাকায় তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতারির দাবিতে বৃহস্পতিবার পথে নেমেছেন।
পুলিশ উত্তেজিত মহিলাদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করছে। যদিও তাতে বিশেষ লাভ হচ্ছে না। মহিলারা চান, দ্রুত গ্রেফতারি।