Student absent in Test Exam

টেস্টে বসল না বহু স্কুলপড়ুয়া 

হাসনাবাদ ব্লকের তকিপুর রাজলক্ষ্মী হাই স্কুলে দশম শ্রেণিতে ২৯ জন, দ্বাদশ শ্রেণিতে ১২ জন পরীক্ষা দেয়নি। সন্দেশখালি থানার দাউদপুর হাইস্কুলে ৫০ জন পড়ুয়া উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়নি।

Advertisement
নবেন্দু ঘোষ 
বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৪৬
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন ব্লকের একাধিক স্কুলের শতাধিক পড়ুয়া এ বার দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির টেস্ট পরীক্ষায় বসল না। শিক্ষকদের দাবি, নাবালিকা ছাত্রীদের অনেকের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছাত্রেরা অনেকে শ্রমিকের কাজে ভিন্‌ রাজ্যে চলে গিয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও ফেরানো যায়নি। অনেকের সঙ্গে যোগাযোগও করা যায়নি।

Advertisement

হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের দুলদুলি মঠবাড়ি ডিএন হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ৪৪ জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ২৯ জন টেস্ট পরীক্ষায় বসেছে। দ্বাদশ শ্রেণির ২৪৭ জনের মধ্যে মাত্র ১৯০ জন পরীক্ষার্থী টেস্ট পরীক্ষা দিয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা এ বার দিচ্ছে না অভিজিৎ মণ্ডল নামে এক ছাত্র। তার বাড়ি দুলদুলি গ্রামে। বাবা-মা, ছোট ভাই আছে। বাবা তেমন কাজ করতে পারেন না। জমি-জায়গাও নেই। পড়া বন্ধ করে চার মাস হল তামিলনাড়ুতে চলে গিয়েছে অভিজিৎ। সেখানে বারো ঘণ্টা কাজ করে দিনে ৫০০ টাকা উপার্জন করছে। অভিজিতের কথায়, ‘‘বয়স এখনও আঠারো হয়নি আমার। বন্ধুরা সকলে পরীক্ষা দিচ্ছে শুনেছি। আমার আর উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়া হল না। বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। কাজ না করলে খাবার জোটে না। আর পড়ব না।’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক পলাশ বর্মণ বলেন, ‘‘যে সব পড়ুয়া পরীক্ষা দিল না, তাঁরা বেশিরভাগ আর পড়াশোনা করবে না। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে, ছেলেরা কাজ খুঁজে নিয়েছে। দু’এক জন জানিয়েছে, বিশেষ কারণে টেস্ট দিতে পারেনি।’’

একই অবস্থার কথা জানালেন হাসনাবাদ ব্লকের চকপাটলি হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক খান আস্তাকজামান। স্কুলের দশম শ্রেণির ১৪০ জন ছাত্রের মধ্যে ১২২ জন টেস্ট পরীক্ষা দিয়েছে। দ্বাদশ শ্রেণির ১৫৯ জন পড়ুয়ার মধ্যে ১৩৪ জন টেস্টে বসেছে। এ বার দশম শ্রেণির যে সব ছাত্রী পরীক্ষা দেয়নি, তাদের মধ্যে এক ছাত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার বাবা মেনে নেন, ছ'মাস আগে মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এখন শরীর খারাপ, তাই স্কুলে যায় না। তবে ছাত্রীর বাবার, আশ্বাস সামনের বছর মেয়ে মাধ্যমিক দেবে।

সন্দেশখালি থানার সন্দেশখালি রাধারানি স্কুলের দশম শ্রেণির ১৩১ জনের মধ্যে ১১২ জন টেস্ট পরীক্ষা দিয়েছে। দ্বাদশ শ্রেণিতে ১৪৪ জনের মধ্যে মাত্র ১২৮ জন পরীক্ষায় বসেছে। রেজিস্ট্রেশন করে টেস্ট পরীক্ষায় না বসার কারণ হিসাবে শিক্ষকদের একটা অংশের বক্তব্য, পড়ুয়ারা অনেকেই শুধু রাজ্য সরকারের ট্যাবের টাকা পাওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিল। সেপ্টেম্বর মাসে ট্যাবের টাকা পেয়ে গিয়েছে সকলে। অনেক পড়ুয়াকে পরে আর স্কুলে ফেরানো যায়নি। ন্যাজাট থানার আগারহাটি গৌরহরি বিদ্যাপীঠে দশম শ্রেণিতে ২৮ জন, দ্বাদশ শ্রেণিতে ৪৫ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে না। হিঙ্গলগঞ্জের যোগেশগঞ্জ হাইস্কুল এ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক মিলিয়ে ৫১ জন ছাত্রছাত্রী টেস্ট পরীক্ষা দেয়নি।

হাসনাবাদ ব্লকের তকিপুর রাজলক্ষ্মী হাই স্কুলে দশম শ্রেণিতে ২৯ জন, দ্বাদশ শ্রেণিতে ১২ জন পরীক্ষা দেয়নি। সন্দেশখালি থানার দাউদপুর হাইস্কুলে ৫০ জন পড়ুয়া উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়নি। দশম শ্রেণিতে ৩৬ জন পরীক্ষা দেয়নি। সন্দেশখালি ১ ব্লকের কালীনগর হাই স্কুলের দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির প্রায় ৪০ জন পড়ুয়া এ বার টেস্ট পরীক্ষা দেয়নি। এ ছাড়াও আরও বেশ কিছু স্কুলের অনেক পড়ুয়া দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির টেস্ট পরীক্ষায় বসেনি।

এই পড়ুয়াদের স্কুলে ফেরানোর বিষয়ে কী ভাবছে শিক্ষা দফতর?

উত্তর ২৪ পরগনার ডিআই কৌশিক রায়কে ফোন করা হলেও ধরেননি। মেসেজের উত্তর দেননি। শিক্ষা গবেষক কুমার রানা জানান, পড়ুয়াদের স্কুলছুট হওয়ার পিছনে সব থেকে বড় কারণ, স্কুলগুলিকে ছাত্রছাত্রীদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়নি। শহর-গ্রাম নির্বিশেষে সব জায়গার স্কুলগুলিকে সমান ভাবে সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন করে তোলা হয়নি। গ্রামের বহু স্কুলে শিক্ষকের অভাব চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর ফলে ছাত্রছাত্রীদের গৃহশিক্ষকের উপরে নির্ভরতা বেড়েছে। যাদের টাকা আছে, সেই সব শিক্ষার্থীরা গৃহশিক্ষক নিতে পারছে। যাদের টাকা নেই, তারা পর্যাপ্ত গৃহশিক্ষক নিতে পারে না। ফলে ক্রমশ ওই সব ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা শেখা এবং তা থেকে আনন্দ লাভ করার জায়গা থেকে সরে যায়।

আরও পড়ুন
Advertisement