Transfer order

শিক্ষকের বদলিতে রাস্তা অবরোধ, স্কুলে তালা! ভালবাসা দেখে বিহ্বল ‘স্যর’ বললেন, জানি না কী দিয়েছি

মঙ্গলবার বদলির নির্দেশ পেয়েছেন পূর্ব জাঙালিয়া অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক বিশ্বজিৎ মারিক। তাঁকে ৩২ কিলোমিটার দূরে একটি স্কুলে পাঠানো হচ্ছে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
জয়নগর শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:১৮
In Joynagar Students block road locks school after find out that their teacher got transfer orde

জয়নগরের স্কুলে বিক্ষোভ পড়ুয়াদের। —নিজস্ব চিত্র।

স্কুল তাঁর কাছে সংসারের মতো। পদোন্নতির নির্দেশ আসতেই ভাঙন সেই সংসারে। কিন্তু সংসারের সদস্যেরা তা মানতে নারাজ। ‘ভাঙন’ ঠেকাতে তাঁরা অবরোধ করলেন রাস্তা। তালা দিলেন স্কুলে। শিক্ষকের বদলির খবর ছড়িয়ে পড়ায় পরিস্থিতি এমন হল যে ছুটে আসতে হল স্কুল পরিদর্শক থেকে পুলিশকে। সব দেখেশুনে ওই শিক্ষকও বিব্রত বোধ করছেন। বার বার পড়ুয়া এবং অভিভাবকদের বোঝাতে যান, এমন করাটা বাঞ্ছনীয় নয়। বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশে তো আবেগের কোনও জায়গা নেই।’’ কিন্তু কে শোনে কার কথা। কিছুতেই বিশ্বজিৎ স্যরকে ছাড়বেন না তাঁরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরের পূর্ব জাঙালিয়া অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘটনা।

Advertisement

মঙ্গলবার বদলির নির্দেশ পেয়েছেন পূর্ব জাঙালিয়া অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক বিশ্বজিৎ মারিক। পদোন্নতি হয়েছে। প্রধানশিক্ষক হিসাবে তাঁকে ৩২ কিলোমিটার দূরে একটি স্কুলে পাঠানো হচ্ছে। দীর্ঘ ১৫ বছর পূর্ব জাঙালিয়া অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। পড়ুয়ারা তো বটেই, অভিভাবক থেকে এলাকাবাসীর সঙ্গে তাঁর মধুর সম্পর্ক। তাই নিজের পদোন্নতির কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেই যা হল, তার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না বিশ্বজিৎ। বুধবার স্কুলের গেটে আচমকাই তালা দিলেন পড়ুয়ারা। তাতে যোগ দিলেন অভিভাবকদের একাংশও। রাস্তা অবরোধ করে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলেন তাঁরা। দাবি, এই স্কুলেই চাকরি করবেন বিশ্বজিৎ স্যর। প্রধানশিক্ষক যদি হন, এই স্কুলেরই হবেন। কিন্তু তাঁকে অন্য স্কুলে যেতে দেবেন না তাঁরা।

অভিভাবকদের কথায়, ‘‘বিশ্বজিৎ স্যর ছাত্রছাত্রীদের মানসিক এবং শারীরিক গঠনে ভীষণ উদ্যোগী। উনি এই স্কুলে আসার পর থেকে অনেক উন্নতি ঘটেছে। স্কুলের পড়াশোনা ভাল হচ্ছে। যে কোনও প্রয়োজনে ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদের জন্য তাঁর দ্বার ছিল অবারিত। এমনকি, রাতবিরেতেও যে কোনও প্রয়োজনে অনায়াসে তাঁকে ফোন করা যায়। ওঁকে আমাদের চাই। উনি এখানেই থাকুন।’’ কান্নাভেজা গলায় স্কুলের ছাত্রী আসিয়া সর্দারের কথায়, ‘‘স্যর এই স্কুলেই থাকবেন। তাই আমরা তালা লাগিয়ে দিয়েছি।’’ ওই ছাত্রী আরও বলে, ‘‘উনি আমাদের বাবা-মায়ের মতো। আমরা চাই, উনি এখানকার হেড স্যর হোন। আমাদের লেখাপড়া ভাল হচ্ছে ওঁর জন্য। আমাদের এখানে জলের অসুবিধা হত। উনি এসে কল লাগিয়ে দিয়েছিলেন, যাতে গ্রামের সবাই ঠিকঠাক পানীয় জল পান।’’

এই ভালবাসায় বিড়ম্বনায় পড়েছেন বিশ্বজিৎ। আন্দোলন ছেড়ে ছাত্রছাত্রীরা যাতে পড়াশোনা শুরু করে, সেটাই বুঝিয়ে চলছেন তিনি। শিক্ষকের কথায়, ‘‘আমি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি। জানি না কী করব! এক দিকে আমাদের পদোন্নতি। অন্য দিকে, এই ভালবাসা। চোখের জল। আমি নিজে বিস্মিত। জানি না, এঁদের কী দিতে পেরেছি। তবে ছাত্রছাত্রী, অভিভাবকদের যে ভালবাসা পেয়েছি, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’’ স্কুলে গন্ডগোলের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসেছিলেন স্কুল পরিদর্শক কৃষ্ণেন্দু ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি আমি আমার উচ্চ কর্তৃপক্ষকে জানাব।’’

আরও পড়ুন
Advertisement