সওকাত মোল্লা। —ফাইল চিত্র।
ঘরের টাকা পেতে চলেছেন বলে তৃণমূল নেতার ডাকা ‘কৃতজ্ঞতা সভা’য় হাজির থাকতে বলা হচ্ছে উপভোক্তাদের। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক বেধেছে ভাঙড়ে। সভায় না গেলে ঘরের টাকা শেষমেশ মিলবে না বলে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অবশ্য মানেননি শাসক দলের নেতারা।
আজ, রবিবার ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক তথা ভাঙড়ের তৃণমূল পর্যবেক্ষক সওকাত মোল্লার ডাকে শোনপুর সব্জি বাজারে ‘কৃতজ্ঞতা সভা’ ডাকা হয়েছে। দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, গত কয়েক বছর ধরে বাংলার প্রতি বঞ্চনা করেছে কেন্দ্র। একশো দিনের কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। মিলছে না রাস্তাঘাটের টাকা। গরিব মানুষের মাথা গোজার ঠাঁই হিসাবে ঘর তৈরির টাকাও বন্ধ করে রেখেছে কেন্দ্র। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চেষ্টায় বাংলার প্রায় ১১ লক্ষ বাড়ি তৈরি হতে চলেছে। ভাঙড় বিধানসভা এলাকায় প্রায় ১৫ হাজার বাড়ি পাচ্ছেন গরিব মানুষ। এ কারণেই মুখ্যমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য সওকাতের ডাকে এই সভার আয়োজন হয়েছে। আবাস যোজনায় এ বার যাঁদের নাম উঠেছে, মূলত তাঁদের বাড়ি গিয়ে আমন্ত্রণপত্র বিলি করছেন তৃণমূল কর্মীরা। সওকাত মোল্লার নামের প্যাডে সেই আমন্ত্রণপত্র ছাপানো হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা আরেফ আলি মোল্লা, সানজুরা বিবি বলেন, ‘‘ঘরের তালিকায় আমাদের নাম আছে। তৃণমূলের কৃতজ্ঞতা সভায় যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণপত্র দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, অবশ্যই হাজির থাকতে।’’ যদিও বিরোধীরা অন্য ইঙ্গিত খুঁজে পাচ্ছেন। আইএসএফের জেলা পরিষদ সদস্য রাইনুর হক বলেন, ‘‘এক জন জনপ্রতিনিধি তাঁর নামের প্যাডে আমন্ত্রণপত্র ছাপিয়ে সাধারণ মানুষকে সভায় যাওয়ার জন্য জোর করতে পারেন না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমন্ত্রণপত্র বিলি করার পাশাপাশি হুমকি দিয়ে বলা হচ্ছে, যাঁরা সভায় যাবেন না, তাঁদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই, কিন্তু তা বলে দলের সভায় যাওয়ার জন্য এ ভাবে জোর করা যায় না। বিষয়টি আমরা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছি।’’ একই অভিযোগ করেছেন ভাঙড় ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা সওকাত বিরোধী বলে পরিচিত তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামও। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা আবাস যোজনায় ঘর পাচ্ছেন, সে সব প্রাপকদের মুখ্যমন্ত্রী নিজে চিঠি পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে পারেন। কিন্তু সেই শুভেচ্ছা এক জন বিধায়ক কোনও ভাবেই জানাতে পারেন না। এ ভাবে সভায় যাওয়ার জন্য জোরও করতে পারেন না।’’ অভিযোগ উড়িয়ে সওকাত বলেন, ‘‘আমরা কাউকেই সভায় আসার জন্য জোর করছি না। কেন্দ্রীয় বঞ্চনা সত্ত্বেও যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রী মানুষের কল্যাণে পাশে দাঁড়িয়েছেন, সে কারণে কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্য এই সভা ডাকা হয়েছে। সভায় কে আসবেন, কে আসবেন না— সেটা তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়।’’