বাপি দাসের পথ চেয়ে স্ত্রী-ছেলে। —নিজস্ব চিত্র।
সমুদ্রে মাছ ধরতে বেরিয়ে নিখোঁজ হন কাকদ্বীপের অক্ষয়নগরের বাসিন্দা বাপি দাস। মাঝসমুদ্রে ট্রলার থেকে পড়ে যান তিনি। তারপরে মাসখানেক কেটে গিয়েছে। বাপির দুই ছেলে-মেয়ে এখনও বাবার ফেরার অপেক্ষায়। স্ত্রী নিপুর কথায়, “ছোট ছেলেমেয়ে দু’টো এখনও জানে বাবা ফিরবে। ওদের বন্ধুদের পুজোয় নতুন জামাকাপড় হয়েছে। ওরা ভাবছে, ওদের বাবাও পুজোর জামা নিয়ে আসবে।”
গত কয়েক মাসে ট্রলার দুর্ঘটনায় নিখোঁজ হয়েছেন বহু মৎস্যজীবী, মৃত্যু হয়েছে অনেকের। রোজগেরে সদস্যের অনুপস্থিতিতে আতান্তরে পড়েছে বহু পরিবার। পুজোর আনন্দ অনেকটাই ফিকে এ সব পরিবারে।
বাপির স্ত্রী জানান, স্বামী নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে লোকের বাড়িতে কাজ করে কোনও রকমে সংসার চালাচ্ছেন। তাঁর কথায়, “মেয়ে পায়েল পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। ছেলে কুমার পড়ছে নবম শ্রেণিতে। প্রতি বছর পুজোয় জামাকাপড় কিনে দিত ওদের বাবা। ছেলেমেয়েদের নিয়ে পুজোয় খুব আনন্দ করত। এ বার এখনও ছেলেমেয়ে দুটোকে কিছু কিনে দিতে পারিনি। বন্ধুদের নতুন জামাকাপড় হচ্ছে দেখে মন খারাপ করে বসে থাকে। মুখের দিকে তাকাতে পারি না।” তিনি আরও বলেন, “ঘটনার পর অনেকেই অনেক আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু কেউ সে ভাবে সাহায্য করেননি।”
কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী সংগঠন সূত্রের খবর, গত তিন বছরে মাছ ধরতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে আট জনের। খোঁজ মেলেনি তিন জনের। অভিযোগ, নিখোঁজ বা মৃত মৎস্যজীবীদের সরকারের তরফে সে ভাবে সাহায্য করা হচ্ছে না। মৃত মৎস্যজীবীদের ক্ষেত্রে ২ লক্ষ টাকা করে সরকারি সাহায্য পাওয়ার কথা। তবে অনেক ক্ষেত্রেই সেই ক্ষতিপূরণ মিলছে বলে অভিযোগ। নিখোঁজ মৎস্যজীবীদের ক্ষেত্রে অবশ্য সরকারি তরফে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেই।
মহকুমা প্রশাসন সূত্রের খবর, মৃত মৎস্যজীবীদের পরিবার আবেদন করলে ক্ষতিপূরণ পাবে। নিখোঁজ মৎস্যজীবীর ক্ষেত্রে সাত বছর পরে ক্ষতিপূরণ মিলতে পারে। মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী বলেন, “মৃত ও নিখোঁজ, সমস্ত মৎস্যজীবীদের জন্য আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা আছে। কেউ যদি ক্ষতিপূরণ না পেয়ে থাকেন, আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে পেয়ে যাবেন। নিখোঁজ মৎস্যজীবীদের জন্য একটু সময় লাগবে ক্ষতিপূরণ পেতে।”