প্রতীকী ছবি।
শৌচালয়ে বোমা ফেটে মৃত্যু হল এক কিশোরের। সোমবার সকালে বনগাঁর বকশিপল্লিতে এই দুর্ঘটনায় ১০ বছরের এক বালকের মৃত্যু হয়েছে। সকালে শৌচকর্ম করতে গিয়েছিল ওই কিশোর। শৌচাগারের ভিতরেই বোমা রাখা ছিল বলে অনুমান। বিস্ফোরণের পর ওই কিশোরকে দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেছে বনগাঁ থানার পুলিশ।
রাজ্যে গত মে মাস থেকেই পর পর বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এগরা, বজবজ, ইংরেজবাজারের মতো এলাকায় বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে অনেকে নিহত হয়েছেন। আবার কখনও বেআইনি ভাবে মজুত করা বোমা ফেটেও দুর্ঘটনা ঘটেছে। সোমবার উত্তর ২৪ পরগণার বনগাঁতেও তেমনই ঘটনা ঘটল।
সোমবারের সকালের ঘটনায় মৃত বালকের নাম রাজু রায়। তার বাড়ি বকশিপল্লি এলাকার কাছেই। তার বাবা জানিয়েছেন, সোমবার সকালে বাবার সঙ্গেই শৌচালয়ে শৌচের জন্য গিয়েছিল সে। কথা ছিল, সেখান থেকে নিজেদের কাজের জায়গায় যাওয়ার। কাছেই একটি গাড়ির গ্যারাজে কাজ শিখছিল রাজু। কিন্তু সেখানে আর তার যাওয়া হয়ে ওঠেনি।
রাজুর বাবা জানিয়েছেন, শৌচালয় থেকে আগেই বেরিয়ে যান তিনি। ছেলেকে বলে যান একটি খাবার দোকানে খেয়ে কাজে যেতে। পরে ছেলের খাবারের টাকাও তিনি দিয়ে দেন দোকানটিতে। মাঝপথ থেকে ফিরে আসেন ছেলেকে সে কথা জানাতে। তখনই দেখেন রাজু শৌচালয়ের সামনের ফাঁকা জমির উপর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
রাজুর বাবা জানিয়েছেন, তিনি শৌচালয়ের ভিতরে গিয়ে দেখেন চতুর্দিকে চাপ চাপ রক্ত। ফুটিফাটা হয়ে গিয়েছে শৌচাগার। তিনি বলেছেন, ‘‘বিস্ফোরণের পর ও টয়লেটের দরজা খুলে বেরিয়ে আসে। কিন্তু সম্ভবত বেশিদূর না যেতে পেরে পড়ে গিয়েছিল। আমি গিয়ে ওর দেহ ধরেই বুঝতে পারি, শরীরে প্রাণ নেই।’’
এই ঘটনার তদন্ত চেয়ে রাজুর বাবা বলেছেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনায় কখনও একজন যুক্ত থাকে না। আমরা এর বিচার চাই। জানতে চাই, ঘটনার নেপথ্যে কারা ছিল।’’
এদিকে বকশিপল্লির বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই বনগাঁয় রাজনৈতিক চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। বনগাঁ উত্তরে বিজেপি বিধায়ক অশোক কীর্ত্তনীয়া ঘটনাটি শুনে জানিয়েছেন, ‘‘গোটা পশ্চিমবঙ্গই বারুদের স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। বনগাঁ তারই একটা অঙ্গ। এর আগে পুরনির্বাচনের সময়ও আমরা দেখেছিলাম বনগাঁর সমস্ত বুথে বুথে বোমা মজুত ছিল। সেই বোমা আজ পর্যন্ত পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি। সেই সব বোমাই হয়তো সরানোর জন্য ওখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তা থেকেই দুর্ঘটনা ঘটেছে।’’
অন্য দিকে, বনগাঁর চেয়ারম্যান তৃণমূল নেতা গোপাল শেঠের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘এই অঞ্চলের যিনি বিজেপি বিধায়ক, তিনি প্রকাশ্যে নাশকতার হুমকি দেন। তাঁর বিরুদ্ধ মাদক সংক্রান্ত অভিযোগও রয়েছে। এখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য গোটা রাজ্যে যে ঝড় উঠেছে, তা থামাতে না পেরেই এই ধরনের আক্রমণ করছেন তাঁরা। আমরাও চাই এই ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হোক।’’
সোমবারের বিস্ফোরণের ঘটনায় বনগাঁর এসডিপিও অর্ক পাঁজা জানিয়েছেন, তাঁরা ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেছেন।