—প্রতীকী চিত্র।
দু’টি বাইকের ধাক্কায় জখম এক যুবক রক্তাক্ত অবস্থায় সড়কে পড়ে রয়েছেন। লোকজনের ভিড় জমে গিয়েছে। অনেকে ‘আহা-উহু’ করছেন। কিন্তু যুবককে উদ্ধার করে কেউই হাসপাতালে নিয়ে গেলেন না। পুলিশ গিয়ে প্রায় পঁচিশ মিনিট পড়ে যুবককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
কেন কেউ যুবককে উদ্ধার করলেন না? স্থানীয় অনেকেরই বক্তব্য, এই সব ক্ষেত্রে কাউকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে পুলিশের নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে। সে কারণেই কেউ এগিয়ে যাননি। এমন ঘটনা আকছার ঘটছে বলে কানে জানতে পারছে পুলিশ।
এই মানসিকতা পরিবর্তন করতে পদক্ষেপ করল বনগাঁ জেলা পুলিশ। যাঁরা এমন বিপদে আপদে কারও পাশে থেকেছেন— এমন কয়েক জনকে খুঁজে বের করে পুলিশের পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হল।
বৃহস্পতিবার বনগাঁ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পথ নিরাপত্তা নিয়ে একটি কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানেই তাঁদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। তাঁদেরই এক জন সুধীন দাস এক দিন গোপালনগর বাজার এলাকায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। বিকট শব্দ শুনে গিয়ে দেখেন দু’টি বাইকের ধাক্কায় এক যুবক জখম হয়েছেন। তিনি যুবককে হাসপাতালে ভর্তি করে তাঁর প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষ হিসেবে এটা আমাদের কর্তব্য। আমাদের পুলিশের কোনও ঝামেলার মুখে পড়তে হয়নি। ভবিষ্যতেও এমন ঘটনা চোখের সামনে দেখলে নিশ্চয়ই এগিয়ে যাব।’’
মামণি বিশ্বাস, জয়ন্ত দাস, প্রণয়কান্তি রায়দের এ ধরনের কাজের জন্য এ দিন পুরস্কৃত করা হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ অখিলকুমার সরকার এবং সিভিক ভলান্টিয়ার নিরঞ্জন দাসকেও পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এক দিন ছ’বছরের একটি শিশু রাস্তায় চলে এসেছিল। একটি ট্রাক বেপরোয়া গতিতে ছুটে আসছিল। অখিল নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিশুটিকে বাঁচিয়েছিলেন।
বনগাঁর পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার বলেন, ‘‘কোনও দুর্ঘটনার পরবর্তী এক ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে জখমদের হাসপাতালে ভর্তি করা গেলে অনেক ক্ষেত্রেই বাঁচানো সম্ভব। কাউকে উদ্ধার করলে পুলিশি ঝামেলায় পড়তে হয় না, সে কথা বোঝানো হয়েছে।’’
এ দিন দুর্ঘটনায় জখম কিছু মানুষকে এনে কেন তাঁরা দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন, কী সাবধনতা অবলম্বন করা উচিত ছিল— সে কথা তাঁদের মুখেই শোনানো হয়। চালকদের চোখ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পথ নিরাপত্তার উপরে পড়ুয়াদের নিয়ে ক্যুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। বিনামূল্যে চালকদের মধ্যে হেলমেট বিলি করা হয়েছে।