Quack Saved Drowning Kid

জলে ডোবা শিশুর প্রাণ ফেরাতে তৎপর পল্লি চিকিৎসক

খবর পেয়ে পৌঁছন পড়শি পল্লি চিকিৎসক ওহিদুল শেখ ওরফে সহিনুর। তিনি শিশুটিকে কার্ডিয়াক মেসেজ (সিপিআর) দিতে শুরু করেন।

Advertisement
সামসুল হুদা
ভাঙড়  শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০২৪ ০৮:৩৬
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

মা রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তেরো মাসের মেয়ে দাওয়ায় বসে খেলছিল। সকলের নজর এড়িয়ে হামাগুড়ি দিয়ে বাড়ির পাশে পুকুরে পড়ে যায় মেয়ে। সব্জি ধুতে গিয়ে মা কিছুক্ষণ পরে দেখেন, মেয়ের দেহ ভাসছে।

Advertisement

জল থেকে মেয়েকে তোলেন তিনি। কিন্তু ততক্ষণে নিস্তেজ হয়ে পড়েছে শিশুটি। পরিবার এবং পাড়ার লোকজন তাকে মাথায় নিয়ে ঘুরিয়ে পেট থেকে জল বের করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কাজ হয়নি। শিশুটি মারা গিয়েছে ভেবে কান্নাকাটি পড়ে যায়।

খবর পেয়ে পৌঁছন পড়শি পল্লি চিকিৎসক ওহিদুল শেখ ওরফে সহিনুর। তিনি শিশুটিকে কার্ডিয়াক মেসেজ (সিপিআর) দিতে শুরু করেন। কিছুক্ষণ পরে বাচ্চাটি কেঁদে ওঠে। কিন্তু ফের নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তখনই ওই পল্লি চিকিৎসক শিশুর বাবা-মাকে বলেন, এখনই হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। বারুইপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় শিশুটিকে। সঙ্গে ছিলেন ওহিদুলও। তিনি পথে অটোয় শুইয়ে শিশুটিকে তখনও কার্ডিয়াক মেসেজ দিতে থাকেন। হাসপাতালে পৌঁছনোর পরেও চেষ্টা থামাননি। দীর্ঘক্ষণের চেষ্টায় শিশুটির শ্বাস-প্রশ্বাস চালু হয়। হাসপাতালে শিশুটিকে ভর্তি নেওয়ার পরে অক্সিজ়েন, স্যালাইন দেওয়া হয়। সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরেছে সে।

বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে ক্যানিংয়ের গোপালপুর অঞ্চলের কচুয়া গ্রামে। গ্রামের বাসিন্দা সাবির শেখ, খুসিয়া শেখের বাচ্চা সুরাইয়াকে নিয়েই চলেছে এই টানাপোড়েন। পেশায় দিনমজুর সাবির। তিনি কাজে চলে যাওয়ার পরে বাড়ির দাওয়ায় মেয়েকে বসিয়ে রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিলেন খুসিয়া। তারপরেই বিপত্তি। পল্লি চিকিৎসকেরা চেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বারুইপুর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। ওহিদুল বলেন, ‘‘আমি প্রোগ্রেসিভ মেডিক্যাল প্র্যাকটিস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার সদস্য। পিএইচসিপি কোর্স করে এই চিকিৎসা পদ্ধতি শিখেছি। শিশুটিকে দেখার পরে আমার মনে হয়েছিল, সিপিআর দিলে হয় তো বেঁচে যাবে। আমার ভাল লাগছে, মরণাপন্ন শিশুকে রক্ষা করতে পেরেছি।’’

প্রোগ্রেসিভ মেডিক্যাল প্র্যাকটিস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার প্রধান উপদেষ্টা, চিকিৎসক তরুণ মণ্ডল বলেন, ‘‘গ্রামীণ ও শহরতলির পল্লি চিকিৎসক বা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকর্মীদের এ ধরনের প্রশিক্ষণ দিলে তাঁরা যে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে মানুষের প্রাণ রক্ষা করতে পারেন, এটা তার বড় উদাহরণ। এর আগেও দক্ষিণ ২৪ পরগনা তথা অন্যান্য জেলায় এ ধরনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা এই কাজ করেছেন।’’ রাজ্য সরকারের কাছে তাঁর আবেদন, এই ধরনের স্বাস্থ্যকর্মীদের বৈজ্ঞানিক প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাস্থ্য পরিষেবার কাজে লাগানো হোক।

বারুইপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার ধীরাজ রায় বলেন, ‘‘এটা খুবই ভাল উদাহরণ। ওই পল্লি চিকিৎসক যে ভাবে শিশুটিকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করেছেন, তা উল্লেখযোগ্য।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে গ্রামীণ এলাকায় যে সমস্ত চিকিৎসক ও ক্লাব সংগঠন রয়েছে, তাদের এ ধরনের পরিস্থিতিতে কী প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে হবে, সিপিআর দিতে হবে— তার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। এ ধরনের প্রশিক্ষণের ফলে যদি একটা প্রাণ বাঁচে, তা হলে বুঝতে হবে এই উদ্যোগ সফল হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement