বুধবার নবান্নের অর্থ দফতরের ঘরে বৈঠক ডাকা হয়েছে। —ফাইল চিত্র।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বেতন প্রক্রিয়া নিয়ে বৈঠক ডেকেছে নবান্ন। চিঠি দিয়ে সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক কর্তা বা ফিনান্স অফিসারকে। কী নিয়ে আলোচনা হবে বৈঠকে? তারও ইঙ্গিত দিয়ে নবান্ন চিঠিতে জানিয়েছে, বিকল্প বেতন প্রক্রিয়া এইচআরএমএস (হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম) নিয়ে আলোচনা করতে চায় তারা। কিন্তু সেই চিঠি পাওয়া ইস্তক আশঙ্কায় কাঁটা হয়ে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির শিক্ষক সংগঠনের একাংশ।
এইচআরএমএস বা বিকল্প বেতন প্রক্রিয়া নিয়ে আগেভাগেই আপত্তি তুলে একটি যৌথ প্রেস বিবৃতি দিয়েছে সরকার বিরোধী পক্ষের শিক্ষক সংগঠনগুলি। রাজ্যের মোট ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার বিরোধী শিক্ষক সংগঠনগুলি জানিয়েছে, তাদের আশঙ্কা, রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতর বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সমস্ত স্বাধিকার কেড়ে বিকাশ ভবনের কেন্দ্রীভূত করার চেষ্টা করছে। কারণ, যে এইচআরএমএস নিয়ে নবান্নে বৈঠক ডাকা হয়েছে , তা চালু হলে বেতন দেওয়ার অধিকারের আর বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে থাকবে না বলে মনে করছে তারা। সে ক্ষেত্রে তাদের ভয়, বিকাশ ভবন থেকে যদি কারও বেতন আটকে দেওয়া হয়, তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আর কিছু করার থাকবে না। যদিও বিরোধী শিক্ষক সংগঠনগুলির এই বক্তব্যে সহমত নয় সরকারপন্থী শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা। তাদের বক্তব্য, এমন আশঙ্কা অমূলক। এইচআরএমএস চালু হলে কোনও ভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ করা হবে না।
নবান্নের তরফে পাঠানো চিঠিতে অবশ্য স্পষ্ট করে বলা হয়নি বেতন প্রক্রিয়া বদলানোর কথা ভাবা হচ্ছে। তবে আগামী বুধবার দুপুরে নিশ্চিত ভাবে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে রাজ্যের ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স অফিসারকে। এ কথাও বলা হয়েছে যে, ওই বৈঠকে আলোচনার বিষয়বস্তু হবে, সরকার পোষিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এইচআরএমএস নিয়ে। নবান্নের অর্থ দফতরের ১২০২ নম্বর ঘরে বুধবার ঠিক দুপুর সাড়ে ১২টায় বসবে ওই বৈঠক। বৈঠকে ডাক পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় না থাকলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বিরোধী শিক্ষক সংগঠন যেমন জুটা, কুটা একযোগে প্রেসবিবৃতি জারি করেছে। তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়েছে নবান্নে ডাক পাওয়া রবীন্দ্রভারতী, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়-সহ ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন।
প্রেস বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, এইচআরএমএস চালু হলে ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের সরকারি কর্মী হিসাবে ধরে নিয়ে বদলি-সহ আরও অন্যান্য নিয়ম চালু করা হতে পারে। সরকার বিরোধী শিক্ষক সংগঠনগুলির দাবি, ‘‘২০১৮ সালে এক বার এই চেষ্টা হয়েছিল। যখন এই রাজ্যের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী বলতেন, ‘একশো বার স্বাধিকারে হাত দেব, কারণ বেতন আমিই দিই।’ কিন্তু সেই সময় তিনি ওই প্রক্রিয়া চালু করতে পারেননি। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী অর্থনৈতিক অবরোধের কথা বলার পরেই আবার এই উদ্যোগ দেখা গেল।’’ উল্লেখ্য ২০১৮ সালে যে সময়ের কথা এই সংগঠনগুলি জানিয়েছে, সেই সময় শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। অন্য দিকে, মুখ্যমন্ত্রী শিক্ষক দিবসের দিন একটি অনুষ্ঠানে রাজ্যপালের উপাচার্য নিয়োগ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘‘শিক্ষা দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে যদি এ ভাবে রাজ্যপাল উপাচার্য নিয়োগ করতে থাকেন, তবে আমরা আর্থিক বাধা তৈরি করব।’’
বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সরকার বিরোধী শিক্ষক সংগঠনগুলির বক্তব্য, তারা এই স্বাধিকার খর্ব করার চেষ্টার বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আইনি পথে হাঁটবে। যদিও শাসকদল তৃণমূলপন্থী শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা-র পক্ষে সংস্কৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মণিশঙ্কর মণ্ডল বলেন, ‘‘স্বাধিকারে হস্তক্ষেপের কোনও বিষয় নেই। যে অর্থ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বণ্টন হত, তাই সরকারি কোষাগার থেকে সরাসরি যাবে। এতে বরং বিশ্ববিদ্যালয় কিছুটা চাপমুক্ত হবে। আমরা সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।’’
প্রসঙ্গত যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে আগামী বুধবার নবান্নে ডেকে পাঠানো হয়েছে, সেই তালিকায় রয়েছে— কাজি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়, ডায়মন্ড হারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়, কোচবিহার পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়, গৌঢ়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়, সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওয়েস্টবেঙ্গল স্টেট ইউনিভার্সিটি। নবান্ন জানিয়েছে, এই ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স অফিসারদের থাকতেই হবে বৈঠকে। প্রয়োজনে তাঁরা সঙ্গে কোনও ভারপ্রাপ্ত কর্মীকেও নিয়ে আসতে পারেন।