—প্রতীকী ছবি।
কোনও দিন তাঁর কথা শোনেননি। কখনও তাঁকে চোখেও দেখেননি। এমনই এক আত্মীয়ার উইল অনুযায়ী ২.২ কোটি টাকার বাংলো পেয়েছিলেন তরুণ দম্পতি। খুশি হওয়ার পাশাপাশি অবাকও হয়েছিলেন। তবে বিপদে পড়লেন সেই সম্পত্তির দখল নিতে গিয়ে। বাংলো হাতে পাওয়ার মধুর স্বপ্ন পরিণত হল দুঃস্বপ্নে। জড়িয়ে পড়লেন আইনি সমস্যায়। মানসিক যন্ত্রণাও ভোগ করতে হল। অদ্ভুত এই ঘটনাটি ঘটেছে ব্রিটেনের হার্টফোর্ডশায়ারে।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালে হার্টফোর্ডশায়ারের বাসিন্দা তথা স্থানীয় স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষিকা মৌরিনের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর আগে রেখে যান বিশাল সম্পত্তি। মৌরিনের ৪৭ কোটি টাকার সম্পত্তির মধ্যে একটি ২.২ কোটি মূল্যের বিলাসবহুল বাংলোও ছিল। উইল অনুযায়ী সেটি তিনি টম রেনি এবং অ্যালেক্স রেনি নামে এক তরুণ দম্পতিকে দিয়ে গিয়েছিলেন। অপ্রত্যাশিত সেই সম্পত্তি হাতে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান দম্পতি। অবাকও হন। কারণ মৌরিন নামের কোনও আত্মীয়ার কথা তাঁদের জানা ছিল না। এর পর দম্পতি খোঁজখবর চালিয়ে জানতে পারেন, মৌরিন ছিলেন টমের সৎঠাকুমা। কিন্তু কোনও দিন তাঁকে চোখে দেখেননি টম।
তবে সে সব ভুলে নতুন বাংলো হাতে পাওয়ার খবরে আনন্দিত ছিলেন টম এবং অ্যালেক্স। শীঘ্রই ব্যাগপত্র গুছিয়ে নতুন বাড়িতে থাকতে শুরু করেন তাঁরা। কিন্তু সুখ বেশি দিন সহ্য হয়নি। সম্পত্তি দখলের প্রায় পর পরই মৌরিনের এক প্রাক্তন ছাত্রী দাবি করেন, মৌরিন আসলে পুরো সম্পত্তি তাঁকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিছু না হলেও বাংলোটি তাঁর চাই-ই। সেই সংক্রান্ত বেশ কিছু নথিও তিনি পেশ করেন। দু’জন সাক্ষীকেও নিয়ে আসেন। তবে সেই বাংলো হাতছাড়া করতে রাজি হননি টম এবং অ্যালেক্স। শুরু হয় দু’পক্ষের আইনি লড়াই।
তিন বছর ধরে মামলা চলার কারণে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন অ্যালেক্স এবং টম। হু-হু করে টাকাও খরচ হচ্ছিল দম্পতির। তাঁদের জীবনেও তার ছাপ পড়ে। অবশেষে ২০২৪ সালের অক্টোবরে বেরিয়ে আসে আসল সত্য। প্রমাণিত হয় যে, মৌরিনের প্রাক্তন ছাত্রী যে নথিগুলি জমা দিয়েছিলেন সেগুলি জাল। আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন তিনি। তাঁকে সাড়ে ছ’বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। যে দু’জন সাক্ষীকে তিনি হাজির করিয়েছিলেন, তাঁদেরও সাজা ঘোষণা হয়।
আদালতের রায়ের পর সংবাদমাধ্যমের কথা বলতে গিয়ে ভেঙে পড়েন অ্যালেক্স। কয়েক বছর ধরে চলা মানসিক অশান্তির কথা তুলে ধরেন তিনি। অ্যালেক্স বলেন, ‘‘এটি একটি দীর্ঘ এবং যন্ত্রণাদায়ক সময় ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ন্যায়ের জয় হয়েছে। বিচারব্যবস্থার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।” উল্লেখ্য, অ্যালেক্স এবং টমকেই ২.২ কোটি মূল্যের ওই বাংলোর বৈধ মালিক ঘোষণা করেছে আদালত। দম্পতি এখন সেখানেই বাস করেন।