শ্রুতি ও জেনসন। ছবি: সংগৃহীত।
ভাগ্যের নিষ্ঠুরতা যেন কিছুতেই পিছু ছাড়তে চাইছে না শ্রুতির। ওয়েনাড়ের বিধ্বংসী ভূমিধসে পরিবারের নয় সদস্যকে হারিয়েছিলেন মাত্র দু’মাস আগে। এরই মধ্যে বিপর্যয়ের কশাঘাত ফের নেমে এল শ্রুতির জীবনে। পথ দুর্ঘটনায় আহত ছোটবেলার বন্ধু ও বাগদত্তকে হারালেন কেরলের তরুণী। ২৭ বছরের তরুণ জেনসনের সঙ্গে তাঁর বাগ্দান সম্পন্ন হয়েছিল। মায়ের দেহ শনাক্ত করে ফেরার পথে দু’জনে যে বাসে করে ফিরছিলেন সেটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। জেনসন গুরুতর আহত হন। গত ১১ সেপ্টেম্বর রাতে মারা যান তিনি।
২৪ বছরের শ্রুতি কোঝিকোড়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালের হিসাবরক্ষক। ৩০ জুলাই রাতের সেই ভয়ঙ্কর ভূমিধসে পুরো পরিবারকে হারিয়েছিলেন তিনি। ভূমিধসে যাঁরা মারা গিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে শ্রুতির বাবা-মা সবিতা এবং শিবন্না এবং ছোট বোন শ্রেয়া ছিলেন। এ ছাড়াও শ্রুতির কাকা-কাকিমা, এক ভাই প্রাণ হারান ভূমিধসে।
ওয়েনাড়ের সেই ভূমিধসের পরে অনেকেরই মৃতদেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তাঁদের মধ্যে শ্রুতির মা ছিলেন। ৯ সেপ্টেম্বর, কেরল সরকার শ্রুতিকে জানায় যে তাঁর মায়ের দেহ ডিএনএ পরীক্ষা করে শনাক্ত করা হয়েছে। পরের দিন, ১০ সেপ্টেম্বর, শ্রুতি এবং জেনসন তাঁর মায়ের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে পুথুমালা যান। ভূমিধস থেকে উদ্ধার হওয়া অনেক অজ্ঞাত মৃতদেহ এবং শরীরের অংশগুলি দুর্ঘটনাস্থল থেকে সাড়ে সাত কিলোমিটার দূরে পুথুমালায় সমাহিত করা হয়েছিল। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী দুই তরুণ-তরুণী ছোটবেলার বন্ধু ছিলেন।
জুন মাসে তাঁরা বাগ্দান সারেন। পরিকল্পনা ছিল ডিসেম্বরে বিয়ে করার। স্বপ্ন ছিল একটি ছোট বাড়ি ও একটি চাকরির। ভূমিধসের পর থেকে জেনসন শ্রুতির পাশেই ছিলেন। এর আগে একটি সাক্ষাত্কারে জেনসন বলেছিলেন যে তিনি শেষ দিন পর্যন্ত শ্রুতির সঙ্গে থাকবেন। তবে নিজের পেশা সম্পর্কেও আশঙ্কিত ছিলেন জেনসন। যাঁর কাজ ছিল বিভিন্ন বহুতলের জলের ট্যাঙ্কগুলি পরিষ্কার করা। তিনি এই কাজের বিপদ সম্পর্কে বলেছিলেন ‘‘জানি না আমি কত দিন বাঁচব। কাজের জন্য অতীতে বেশ কয়েক বার বিল্ডিং থেকে পিছলে গিয়েছি।’’ সেই আশঙ্কাই যেন সত্যি হল।