ঝড়বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত ওয়েনাড়। ছবি: পিটিআই ।
প্রবল বৃষ্টি এবং ভূমিধসের ঘটনায় বিপর্যস্ত কেরলের ওয়েনাড়। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে বহু পরিবার। অনেকে স্বজন হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। অনেকে আবার নিখোঁজ প্রিয়জনদের খোঁজে এ দিক থেকে ও দিকে দৌড়চ্ছেন। তবে এর মধ্যেই অন্য গল্প লিখলেন ওয়েনাড়ের চুরালমালার বাসিন্দা প্রজিথা। জলের তোড়ে ভেসে যাওয়া এক শিশুকে রক্ষা করতে গিয়ে হারালেন নিজের ১০ বছর বয়সি কন্যাকে। বর্তমানে আহত অবস্থায় তিনি হাসপাতালে ভর্তি। তাঁর মুখ এবং উরুর হাড়ে আঘাত লেগেছে। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি প্রজিথার মা শোভা এবং শ্বশুর আপুও।
প্রজিথার বাড়ি চুরালমালার সরকারি ভোকেশনাল স্কুলের ঠিক পিছনে। স্বামী কর্মসূত্রে পশ্চিম এশিয়ায় থাকেন। বাড়ির সঙ্গেই লাগোয়া হোমস্টে। বিপর্যস্ত ওয়েনাড়ের বহু এলাকা ভেসে গেলেও মনে করা হচ্ছিল যে এই জায়গা তুলনামূলক ভাবে নিরাপদ। তাই চুরালমালার আশপাশের আশ্রয়হীন বহু মানুষকে প্রজিথার বাড়ির পাশের ওই স্কুলে নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু প্রকৃতি রুদ্ররূপ ধারণ করলে যে কেউই নিরাপদ নন, তা জানতেন না ওই স্কুলে আশ্রয় নেওয়া মানুষেরা। জানতেন না প্রজিথাও।
হাসপাতালে শুয়ে শুয়েই প্রজিথা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতে বিকট আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় তাঁর। চোখ খুলে দেখেন, দরজা-জানালা দিয়ে হু হু করে জল ঢুকতে শুরু করেছে তাঁর বাড়িতে। তত ক্ষণে প্রজিথার বাড়ির কাছের ওই স্কুল এবং তাঁর হোমস্টেতেও জল ঢুকতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় প্রজিথা মেয়েকে নিয়ে দরজা খুলে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু আটকে যান। এক হাতে ভাঙা গাছের ডাল এবং অন্য হাতে মেয়ের হাত ধরে কোনও ক্রমে নিজেকে জলের তোড়ে ভেসে যাওয়া থেকে আটকান। এই সময় প্রজিথার নজর পড়ে জলের স্রোতে ভেসে যাওয়া অন্য এক শিশুর উপরে। গাছের ডাল ছেড়ে শিশুটিকে বাঁচানোর জন্য হাত বাড়ান। ধরেও ফেলেন। কিন্তু জলের ধাক্কায় মেয়ে অহন্যার হাত তাঁর হাত থেকে ছেড়ে যায়। পা পিছলে মুহূর্তের মধ্যে জলে তলিয়ে যায় অহন্যা।
হাসপাতালে সেই ঘটনা মনে করেই কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রজিথা। তবে তিনি যে শিশুর হাত ধরেছিলেন, সে বেঁচে রয়েছে শুনে খানিক স্বস্তিও দেখা যায় তাঁর চোখেমুখে।