১৯৭১। ৩ ডিসেম্বর। ভারত-পাক যুদ্ধের শুরু। স্থল, জল এবং অন্তরীক্ষে ভারতীয় সেনার প্রবল বিক্রম। সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই। ১৩ দিনের মধ্যেই পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ। অস্ত্র নামিয়ে রাখতে বাধ্য হয় ইয়াহিয়া খানের ৯৩ হাজার পাক-সেনা। সেদিনই ঢাকায় ভারতীয় কমান্ডার ও যৌথ বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিংহ অরোরার কাছে পাক-বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। দলিলে সই করেন পাক কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ নিয়াজ়ি। ১৬ ডিসেম্বর, পাকাপাকিভাবে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।
৫ অগস্ট। ২০২৪। বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। ভেঙে ফেলা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মূর্তি। খুব শীঘ্রই বাংলাদেশের টাকা থেকেও সরানো হবে বঙ্গবন্ধুর ছবি। পাঠ্যবই থেকেও বাদ যাচ্ছেন শেখ মুজিবর রহমান। আর এ বার ১৬ ডিসেম্বরের বিজয় দিবসকেও এক প্রকার ‘অস্বীকার’ করার পথে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বতী সরকার।
৫০ বছরেরও পুরনো ঐতিহ্যে ছেদ। ‘সেনা না কি ব্যস্ত’, তাই বাংলাদেশে আয়োজিত হবে না সেনার কুচকাওয়াজ। অতীতে দেশের প্রধানমন্ত্রীরা বিজয় দিবসে প্রথা মেনে অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন। সেই রীতিনীতির কোনওটাই অনুসরণ করবেন না অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। বুড়ি ছোঁয়া করে কিছু অনুষ্ঠান ছাড়া ১৬ ডিসেম্বর আর কোথাও দেখা যাবে না মুহাম্মদ ইউনূসকে। বিজয় উৎসবের পরিবর্তে বাংলাদেশে এ বার আয়েজিত হবে বিজয় মেলা, ঘোষণা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজমের।
আত্মপ্রকাশের দিন থেকেই বাংলাদেশের বিশেষ বন্ধু ভারত। বিজয় দিবস ভারতও গর্বের সঙ্গে স্মরণ করে থাকে। সম্ভবত এ বার কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামের সেনা অনুষ্ঠানে দেখা যাবে না কোনও মুক্তিযোদ্ধা বা তাঁদের পরিবারের সদস্যকে। নয়াদিল্লির তরফে কোনও সবুজ সংকেত না আসায় নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেনি ভারতীয় সেনার ইস্টার্ন কমান্ডও। যা অনেকের মনেই প্রশ্ন তৈরি করেছে, বিজয়ের সেই ইতিহাস কি মুছে ফেলতে চাইছে বাংলাদেশ?