আলো-শব্দে জীবন্ত খাজুরাহো

ধুঁয়াধার জলপ্রপাত, ‘ব্যালেন্স রক’-এর মতো প্রাকৃতিক বিস্ময় সম্ভারে পরিপূর্ণ জব্বলপুর পেরিয়ে এক বিকেলে পৌঁছলাম ‘মন্দির নগরী’ খাজুরাহোতে। লোকালয় থেকে সামান্য দূরে ইয়ুথ হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা হল। আশপাশে বড়সড় হোটেল, কিন্তু তাতে জনমনিষ্যির বড়ই অভাব।

Advertisement
উর্বি রায়
রানাঘাট শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৫৩

ধুঁয়াধার জলপ্রপাত, ‘ব্যালেন্স রক’-এর মতো প্রাকৃতিক বিস্ময় সম্ভারে পরিপূর্ণ জব্বলপুর পেরিয়ে এক বিকেলে পৌঁছলাম ‘মন্দির নগরী’ খাজুরাহোতে। লোকালয় থেকে সামান্য দূরে ইয়ুথ হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা হল। আশপাশে বড়সড় হোটেল, কিন্তু তাতে জনমনিষ্যির বড়ই অভাব। প্রতি হোটেলে খুব বেশি হলে একজন করে কেয়ারটেকার। আমাদের হোস্টেলে দলের সাতজন, হোস্টেল ম্যানেজার আর সাফাইকর্মী ছাড়া দ্বিতীয় কাউকে দেখা গেল না। পৌঁছনোর কিছু পরে ঘরদোর সাফাই করে সেই সাফাইকর্মীও উধাও হলেন। শহুরে কোলাহলের মাঝখান থেকে হঠাৎ এমন এক নিরালায় এসে ‘আরণ্যক’-এ বিভূতিভূষণের বর্ণনার সঙ্গে বেশ মিল পাচ্ছিলাম।

সন্ধ্যা নামতে রওনা দিলাম খাজুরাহোর মূল আকর্ষণ ‘সাউন্ড অ্যান্ড লাইট’ শো দেখতে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৭টার স্লটে ইংরেজি এবং সন্ধে ৭টা ৪০ থেকে ৮টা ৪০-এ হিন্দিতে এই শো দেখানো হয়। আমরা প্রথম স্লটেরই টিকিট কাটলাম। শো-র নাম শুনে ধারণা হয়েছিল, গ্যালারিতে বসে পর্দায় সিনেমার মতো কিছু দেখব হয়তো। সেরকম কিছুই হল না। গেট দিয়ে ঢুকে আধো-অন্ধকারে দীর্ঘ লন পেরিয়ে পৌঁছলাম খোলা আকাশের নীচে। সারি দিয়ে পাতা আছে চেয়ার। নাহ্! কোনও পর্দা সামনে নেই। কী করে শো হবে ভাবছি, এমন সময় সামনের জমাট-বাঁধা অন্ধকারের মধ্য থেকে ভেসে এল এক সুরেলা কণ্ঠস্বর। মায়াবী আলোয় চোখের সামনে একে একে জেগে উঠল চান্দেলা বংশের ঐতিহাসিক নির্দশন। গাঢ় অন্ধকারে এতক্ষণ যাদের বড়বড় গাছের অবয়ব মনে হচ্ছিল, সেগুলি আসলে গাছের আড়ালে ঢেকে থাকা এক-একটি মন্দির স্থাপত্য। প্রায় এক ঘণ্টা মন্ত্রমুগ্ধের মতো বসেছিলাম।

Advertisement

পরদিন সকালে বেরিয়ে পড়লাম ‘মন্দির-নগরী’ পরিদর্শনে। প্রথমেই ‘ওয়েস্টার্ন গ্রুপ অব টেম্পলস’। গত রাতে যেখানে ‘সাউন্ড অ্যান্ড লাইট’ শো হয়েছিল, সেখানে। সঙ্গে অবশ্যই একজন গাইড। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে দাঁড়িয়ে ছোটবড় অসংখ্য মন্দির। বেশির ভাগ মন্দির-চুড়োই ঝান্ডাবিহীন। এর অর্থ, এই সব মন্দিরে পুজো হয় না। আমরা প্রথমেই ঢুকলাম বিষ্ণুমন্দিরে। এই মন্দিরের সামনেই বরাহমন্দির। বিষ্ণুদেব এখানে বরাহরূপে বিরাজমান। এর পর দর্শন করলাম লক্ষ্মণমন্দির, বিশ্বনাথ মন্দির, কান্ডারিয়া-মহাদেব মন্দির, জগদম্বা মন্দির। মন্দিরগাত্রে প্রাধান্য পেয়েছে সমকালীন সমাজ। যেমন, শিকার-ফেরত একদল মানুষ, গুরু-ছাত্র সহযোগে পাঠশালার চিত্র অথবা কোনও যুদ্ধক্ষেত্রের প্রতিচ্ছবি। মন্দিরগুলির গর্ভগৃহে সামান্য লতাপাতার কারুকার্যের পাশাপাশি শোভা পাচ্ছে পুতনা বধ, কালীয়দমন, মুষ্টিকবধের মতো কৃষ্ণলীলা-বিষয়ক বিভিন্ন মূর্তি। এ ছাড়া গায়ক-গায়িকা কী অপরূপা অপ্সরার মূর্তি ছড়িয়ে রয়েছে সর্বত্র। কোথাও দেখা যাচ্ছে কোনও সুরসুন্দরী, মুখমণ্ডলে উচ্ছলতা, অথবা কোনও নর্তকীর পায়ে কাঁটা ফুটেছে, চোখে বেদনা! এ ছাড়া আছে কোনও মা তার শিশুকে পরম স্নেহে বুকে আগলে রেখেছে। প্রতিটি মূর্তির পোশাক, নারীর অলংকারের সূক্ষ্ণ কাজ, সর্বোপরি, মূর্তিগুলির মুখের অভিব্যক্তি এতটাই জীবন্ত যে, চোখ ফেরানো যায় না।

ওয়েস্টার্ন গ্রুপের মতো ইস্টার্ন গ্রুপের মন্দির পার্শ্বনাথ, আদিনাথ মন্দিরগুলিও সমসাময়িক কালের। এ ছাড়াও এখানকার উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান রানে ফলস, খাজুরাহো আর্কিওলজিকাল মিউজিয়াম পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

কী করে যাবেন — হাওড়া-মুম্বই মেল (ভায়া এলাহাবাদ), অথবা হাওড়া-ইনদওর শিপ্রা এক্সপ্রেসে সাতনা স্টেশনে নেমে, সেখান থেকে বাস অথবা ভাড়া গাড়িতে খাজুরাহো। এ ছাড়া জব্বলপুর থেকেও গাড়িতে যাওয়া যেতে পারে।

কখন যাবেন — মার্চ-মে পর্যন্ত অত্যন্ত গরম। সে সময় বাদে যে কোনও সময় যাওয়া যেতে পারে।

কোথায় থাকবেন — মধ্যপ্রদেশের ট্যুরিজমের ট্যুরিস্ট লজ (অগ্রিম বুকিং), ইউথ হস্টেল, এ ছাড়া বিভিন্ন হোটেল। বাঙালিদের জন্য ‘দাদাবৌদির হোটেল’।

পুজোর মরসুমে কোথায় গেলেন? উট দেখলেন নাকি উটকামন্ড? সিংহ পেলেন গিরে নাকি শ্রীলঙ্কায় খুঁজলেন ধনপতির সিংহল? চেনা ছকের বাইরে সেই বেড়ানোর গল্প লিখুন অনধিক ৫০০ শব্দে আর পাঠিয়ে দিন আমাদের। জানান যাতায়াত, থাকা-খাওয়ার হালহকিকত। ছবি (নিজেদের ছাড়া) দিন। পাঠান এই ঠিকানায়:

সম্পাদক (‌সেন্ট্রাল বেঙ্গল)

আনন্দবাজার পত্রিকা

৬, প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,

কলিকাতা — ৭০০০০০১

অথবা, করুন ই-মেল:

abpnm15@gmail.com

(*সম্পাদকের নির্বাচনই চূড়ান্ত। লেখা ও ছবি ফেরতযোগ্য নয়।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement