পাহাড় ঘেরা চান্ডিল ড্যামের রূপ দেখতে চলুন ঝাড়খণ্ডে। ছবি: সংগৃহীত।
বাড়ি, অফিস, কাজের চাপ। দম ফেলার ফুরসত কই! পুজোর ছুটিতে ক্লান্তি-বিষণ্ণতা কাটিয়ে যদি চেনা শহরের গণ্ডি পেরিয়ে যেতে চান অন্য কোনওখানে, তবে ঘুরে নিতে পারেন পাহাড় ঘেরা তিন জলাধার। পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ড। যদি পাহাড়, মালভূমি, ঝর্না, বাঁধ একসঙ্গে দেখতে চান ঝাড়খণ্ড হতাশ করবে না।
ক্যালেন্ডারের পাতায় লাল কালি জানান দিচ্ছে, দুর্গাপুজো শুধু সময়ের অপেক্ষা। অধিকাংশ পর্যটন কেন্দ্রে শারোদোৎসবের বুকিং আগেই সারা। ট্রেন, বাস, বিমানের টিকিট অমিল। তাতে অবশ্য হতাশ হওয়ার কিছু নেই। শরতের নীল আকাশকে চোখে রেখে মন হারাতে চাইলে সড়কপথেই পাড়ি দিন। কলকাতা থেকে ঘণ্টা ৬-৭ এর মধ্যেই গিয়ে দাঁড়াতে পারবেন এমন এক জায়গায়, যেখানে চারপাশে শুধু ঢেউ খেলানো পাহাড়। সামনে বিস্তৃত জলরাশি।
চান্ডিল বাঁধ
ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা-খারসোয়ান জেলার চান্ডিল ব্লকে সুবর্ণরেখা নদীর উপরে চান্ডিল বাঁধ। আশপাশে উঁকি দিচ্ছে ঘন সবুজ দলমা পাহাড়। পড়ন্ত বিকেলে বিশাল জলাধারের বুকে স্পিডবোটে চেপে বসলেই মন-মেজাজ ফুরফুরে হয়ে যাবে। আকাশে রক্তিম আভা, জলে ঢেউ। জল-হাওয়ার ঝাপটা সামলে মোবাইল ফোনটি ঠিক করে বাগিয়ে ধরতে পারলে, যে মুহূর্তগুলি ক্যামেরাবন্দি হবে, তা স্মৃতির মণিকোঠায় রয়ে যাবে আজীবন।
চান্ডিলের কাছেই মিশেছে সুবর্ণরেখা ও কারকই নদী। ৭২০ মিটার দৈর্ঘ্যের জলাধারটি ঘোরার পাশাপাশি দেখে নিতে পারেন, এখানকার মিউজ়িয়াম। তথ্য বলছে, সেখানেই রয়েছে প্রায় ২ হাজার বছরের পুরনো শিলালিপি।
পালনা
চান্ডিলের অদূরেই রয়েছে পাহাড় ঘেরা সুন্দর এক জলাধার। পালনা। চান্ডিলের মতো পরিচিতি না থাকলেও পালনার সৌন্দর্য যে কোনও বাঁধকেই টেক্কা দিতে পারে। বর্ষার মরসুমে পালনার রূপ একেবারে আলাদা। এক দিকে জলাধার, অন্য দিকে, চাষের খেত। বাঁধের গায়েই নজরমিনারে উঠলে প্রত্যক্ষ করা যায় সেই রূপ। চান্ডিল শহরে সুবর্ণরেখার উপর গড়ে উঠেছে এই জলাধার। কেউ বলেন, পালনা নদীর উপর এটি তৈরি। পাহাড়ঘেরা এই জলাধার এঁকেবেঁকে গিয়েছে নিজের মতো করে। ভিড়ভাট্টাহীন জায়গা। বেশ কিছুটা সময় এখানে দারুণ কাটানো যায়।
ছোটা বাঁকি
টাটানগরের কাছেই প্রায় লোকচক্ষুর অন্তরালে রয়ে গিয়েছে আর এক জলাধার, ছোটা বাঁকি। নামের সঙ্গে এর বড় মিল। আকারে এটি বেশ ছোট। তবে ঘন সবুজ পাহাড়ের কোলে ঘন নীল জলের এই জলাধারের সৌন্দর্য অপরিসীম। এক দিকে জলাধার। অন্য দিকে, লকগেট। পাখির ডাক। স্থানীয় লোকজন শীতকালে এখানে পিকনিকে আসেন। পর্যটকের ভিড় নেই বললেই চলে। আসলে পর্যটন মানচিত্রে তেমন ভাবে এর নাম নেই। তবে এক বার সেখানে গিয়ে পড়লে যে কেউ মুগ্ধ হবেন, এ কথা বলাই যায়।
কী ভাবে যাবেন?
তিনটি জলাধারই টাটানগর বা জামশেদপুরের বেশ কাছে। কলকাতা থেকে বম্বে রোড ধরে গেলে পড়বে কোলাঘাট। সেখান থেকে একে একে খড়গপুর, লোধাশুলি পার হয়ে ঘাটশিলা। সেখান থেকে ৪৬ কিলোমিটার দূরেই টাটানগর বা জামশেদপুর।
টাটানগর থেকে চান্ডিল বাঁধ যেতে গেলে ধরতে হবে ১৮ নম্বর জাতীয় সড়ক। দূরত্ব এখান থেকে মোটামুটি ৩০ কিলোমিটার। জামশেদপুর থেকে ৩৩ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে রাঁচি যাওয়ার পথে পড়ে পালনা জলাধার। দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। জাতীয় সড়ক থেকে ২ কিলোমিটার ভিতরে যেতে হয়। জামশেদপুর থেকে ছোটা বাঁকির দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার।
কোথায় থাকবেন?
টাটানগর বা জামশেদপুর শহরে থাকার জন্য অসংখ্য ছোট-বড় হোটেল আছে। সেখান থেকেই গাড়ি করে ঘুরে নিতে পারেন তিনটি জলাধার।
আর কোথায় ঘুরে নেওয়া যায়?
চান্ডিল, পালনা জলাধার এক দিনেই ঘুরে নেওয়া যায়। একেবারে সকাল বেলা বেরোলে সারা দিনে তিনটি জলাধার ঘোরা যায়। এ ছাড়া জামশেদপুরে ঘোরার আরও অনেক জায়গা আছে। এখানকার অন্যতম আকর্ষণ দলমা পাহাড় ও ডিমনা লেক। এ ছাড়া জুবিলি পার্ক, জ়ুলজিক্যাল পার্ক, ভুবনেশ্বরী মন্দির, রঙ্কিনী মন্দির ঘুরে নিতে পারেন।