পাহাড় থেকে নজর রাখছে মুরুগণ

চিকিৎসার বাইরে ভেলোরের যে আলাদা একটা চরিত্র আছে, সেটা টের পাওয়া গেল শহরটা ঘুরে দেখে। বলা ভাল, মনটা ভরে গেল। কোথাও ইতিহাসের স্পর্শে তো কোথাও দেবদেবীর অর্চনায়।

Advertisement
সুদীপ জোয়ারদার
নদিয়া শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৩১
ভেলোর দুর্গ

ভেলোর দুর্গ

চিকিৎসার বাইরে ভেলোরের যে আলাদা একটা চরিত্র আছে, সেটা টের পাওয়া গেল শহরটা ঘুরে দেখে। বলা ভাল, মনটা ভরে গেল। কোথাও ইতিহাসের স্পর্শে তো কোথাও দেবদেবীর অর্চনায়।

Advertisement

কার্তিক মন্দির

শহরের মধ্যিখানে ভেলোর ফোর্টে ইতিহাস আর ধর্ম মিলেমিশে একাকার। যে দিন আমরা গেলাম, খুব ভিড় হয়েছিল। ছুটির দিন ছিল। হয়তো সে জন্যই এত ভিড়। দোকানপাটও বসেছে অনেক। ভিড় ঠেলে চোখ পড়ল ১৫৬৬ সালে বিজয়নগর রাজ্যের তৈরি দুর্গের দিকে। এক সময় টিপু সুলতানের স্ত্রী-পুত্রেরা বন্দী ছিলেন এখানে। শুধু কি তাই? সিপাহী বিদ্রোহের অনেক আগে ১৮০৬ সালে এখানেই প্রথম সিপাহী অভ্যুত্থান হয়। দুর্গের ভিতর ও চারপাশ ঘুরে আর ‘আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া’র সাইনবোর্ডে উঁকি দিয়ে রোমাঞ্চিত হতে হয়।

মহালক্ষ্মী স্বর্ণমন্দির

ভেলোর দুর্গে জলকণ্টেশ্বরের মন্দির রাস্তা থেকে কিছুটা নীচে। পুরোটা ঘুরে দেখতে বেশ অনেকটা সময় লাগে। এই মন্দিরও বিজয়নগর রাজ্যের তৈরি। জলকণ্টেশ্বর মনে শিব। এখানে জলের মধ্যে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেই নাকি পুজো চালু হয়েছিল। সে জন্যই শিব এখানে ওই নামে পূজিত। কারুকার্যময় মন্দির। ঘাড় উঁচু করে মন্দিরের মাথা দেখতে হয়।

ভেলোরের মূল আকর্ষণ অবশ্য শহরের দক্ষিণপ্রান্তে শ্রীপুরমের মহালক্ষ্মী স্বর্ণমন্দির। ভেলোর থেকে অটোতে যাওয়া যায়। আমরাও অটোতে চেপে বসলাম। পৌঁছলাম বিকেল বিকেল। অটোতেই জুতো ছেড়ে ভিতরে ঢোকা হল (ভিতরে মূল ফটকের কাছে অবশ্য জুতো রাখার জায়গা আছে)। মন্দির এমনিতে ঘুরে দেখতে পয়সা লাগে না। টিকিট কেটে স্পেশ্যাল ভিজিটও করা যায়। একশো একর জমির উপর তৈরি মন্দির পুরোটা ঘুরে দেখতে ঘণ্টা দুইয়ের উপর লেগে গেল।

জলকণ্টেশ্বর মন্দির

ভেলোরের আর একটা দর্শনীয় স্থান রত্নগিরি। ভেলোর থেকে চেন্নাই যাবার পথে দশ-বারো কিলোমিটার গেলেই পড়বে রত্নগিরি। এখানে পাহাড়ের উপর রয়েছেন মুরুগণ অর্থাৎ কার্তিক। বাসে যাওয়া যায়। আবার অটোতেও। বাসে গেলে অবশ্য অনেক সিঁড়ি ভেঙে মন্দিরে পৌঁছতে হয়। সিঁড়ি ভাঙতে না চাইলে অটোতে যাওয়াই ভাল। তা ছাড়়া পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও আছে। আমরাও তাই অটোতে গেলাম।

দর্শনের জন্য দিনে দু’বার মন্দির খোলা হয়। সাড়ে তিনটেয় দরজা খুলল। প্রায় শ’দুয়েক দর্শনার্থী।

চতুর্দশ শতকের তৈরি মন্দিরের গায়ের কারুকাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই। বহু দেবদেবীর মূর্তি খোদাই করা। তামিল লোকবিশ্বাস, যেখানেই পাহাড়, সেখানেই মুরুগণ। আর মুরুগণ মানেই সুরক্ষা। দেবসেনাপতি বলে কি না কথা।

কী করে যাবেন: হাওড়া থেকে ট্রেনে সরাসরি, অথবা চেন্নাই হয়ে

কখন যাবেন: শীতকালটাই যাওয়ার জন্য উপযুক্ত সময়।

কোথায় থাকবেন: প্রচুর হোটেল রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement