এ বারের পুজোয় চলে যান কর্নাটকের কোডি বেংরি সমুদ্রসৈকতে। ছবি: সংগৃহীত।
সারা বছর ব্যস্ততার শেষ থাকে না। কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে ওঠে মন। তাই অনেকেই অপেক্ষা করেন দুর্গাপুজোর জন্য। কারণ উৎসবের এই মরসুমে একটা লম্বা ছুটি পাওয়া যায়। তাই সারা বছরের ক্লান্তি ধুয়েমুছে সাফ করে ফেলতে অনেকেই কলকাতার পুজোর মায়া কাটিয়ে পাড়ি দেন নতুন কোনও শহরে। কয়েক দিন অন্য পরিবেশে কাটিয়ে মন শান্ত করে ফেরেন। তবে পুজোর সময় সকলকে উপহার দেওয়ার বিষয়টা এড়ানো যায় না। পরিবারের জন্যেও নতুন পোশাক কিনতে হয়। সব দিক সামলাতে গিয়ে বেড়াতে যাওয়ার বাজেটে খানিক টান পড়ে। পুজোর মরসুমে বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও সব সময় তা হয়ে ওঠে না। তবে কম খরচে দেশের মাটিতে বসেও বিদেশের স্বাদ নিতে পারেন। তার জন্য যেতে হবে কর্নাটকের কোডি বেংরি সমুদ্রসৈকতে। উদুপি থেকে আধ ঘণ্টা দূরত্বে এই সমুদ্রসৈকতে গেলে মলদ্বীপ বলে ভুল করবেন!
কর্নাটকের উদুপিতে অবস্থিত কোডি বেংরি সমুদ্রসৈকতে কখনও যদি না গিয়ে থাকেন, তা হলে এ বারের পুজোয় চলে যান। মন এবং প্রাণ দুই-ই ভরে যাবে। অনেকেই এই সমুদ্রসৈকতটিকে মলদ্বীপের সঙ্গেও তুলনা করেন। কারণ, কিছু ছবি দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না, সেটা আমাদের দেশের আরব সাগরের সমুদ্রসৈকত। শরতের কয়েকটি দিন এমন উপকূলীয় মনোরম পরিবেশে কাটিয়ে এলে মন্দ হবে না।
আরব সাগরের উত্তাল হাওয়া, আদিম বালি আর গোধূলিবেলায় চারদিকে কমলা আভা ছড়িয়ে সূর্যের ধীরে ধীরে অস্ত যাওয়া— কোডা বেংরা সমুদ্রসৈকত যেন গোটটাই জলরঙে আঁকা একটা ছবি। উদুপি থেকে এই সৈকতের দূরত্ব ১০ কিলোমিটার। উদুপির একটি গ্রাম হল কোডি বেংরি। সেই গ্রামের কাছেই এই সমুদ্রসৈকত।
গোয়া, আন্দামান, পুদুচেরির সমুদ্রসৈকতের জনপ্রিয়তা আছে। অনেকেই মধুচন্দ্রিমার জন্য এই সৈকতগুলি বেছে নেন। তবে কর্নাটকের এই সৈকতে এক বার না গেলে সত্যিই আফসোস হবে। উদুপিতে সব সময়ই প্রায় গরম থাকে। তবে শরতে এখানকার আবহাওয়া খানিকটা মনোরম হয়। তাই কোডি বেংরি যাওয়ার উপযুক্ত সময় হল ফেব্রুয়ারি এবং অক্টোবর। এই সময় এখানকার তাপমাত্রা অনেকটাই কম থাকে। বিকালের দিকে সৈকতের ধারে গেলে মৃদুমন্দ হাওয়ায় মন জুড়িয়ে যায়।
কী কী দেখবেন?
কোডি বেংরির সমুদ্রসৈকতে গেলে অতি অবশ্যই সেখানকার জেলেদের গ্রামে এক বার ঘুরে আসবেন। সেখানে সমুদ্র থেকে মাছ ধরার অনুশীলন দেখে বিস্মিত হতে হয়। এ ছাড়াও কোডি বেংরির সমুদ্রের মোহনায় বোট চড়ে ঘুরতে পারেন। চারিদিক ম্যানগ্রুভ জঙ্গলে ঢাকা। মাঝেমাঝেই কানে আসবে দেশি-বিদেশি পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ। পাখি দেখতে যাঁরা ভালবাসেন, এই সৈকত তাঁদের মনে ধরবে। কিংফিশার, হেরনস, স্যান্ডপাইপার্সের মতো পাখি আসে এখানে। এ ছাড়াও এখানে সেন্ট মেরিজ় আইল্যান্ড, ম্যাপল বিচ ঘুরতেও কিন্তু ভুলবেন না।
কী ভাবে যাবেন?
ট্রেন, বিমান— দু’ভাবেই যেতে পারেন এখানে। বিমানে যেতে হলে আপনাকে মেঙ্গালুরু বিমানবন্দরে নামতে হবে। বিমানবন্দর থেকে এই সমুদ্রসৈকতের দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার। ট্যাক্সি নিতে পারেন। সুবিধা হবে। তবে বাসেও যেতে পারেন।
ট্রেনে যেতে হলে হাওড়া থেকে ছাড়ে বিবেক এক্সপ্রেস। এটাই সবচেয়ে দ্রুত পৌঁছয় মেঙ্গালুরুতে। স্টেশন থেকে কোডি বেংরি যাওয়ার গাড়ি পেয়ে যাবেন। তবে আগে থেকে গাড়ি বলা থাকলে ভাল। তা হলে নেমেই আর অসুবিধায় পড়তে হবে না।
কোথায় থাকবেন?
এখানে থাকার প্রচুর ভাল জায়গা রয়েছে। বিলাসবহুল রিসর্ট থেকে সমুদ্রসৈকতমুখী হোটেল, সবই পেয়ে যাবেন। প্যারাডাইস লেগুন, সাই বিশরামের মতো বেশ কিছু বিচ রিসর্টও রয়েছে। চাইলে সেখানেও থাকতে পারেন।