রাজকন্যার বাড়ি থেকে হাওয়া মহল, ছুটির ক’দিন মরুরাজ্যে

মরুরাজ্য রাজস্থান। এ বছর পুজোয় এটাই ছিল আমাদের গন্তব্য। ৮ অক্টোবর ভোর ৬টায় হাওড়া থেকে চেপে বসলাম শতাব্দী এক্সপ্রেসে। রাঁচি পৌঁছলাম দুপুর দেড়টা নাগাদ।

Advertisement
আবীরা চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:০৮
সহেলি কে বাড়ি

সহেলি কে বাড়ি

মরুরাজ্য রাজস্থান। এ বছর পুজোয় এটাই ছিল আমাদের গন্তব্য। ৮ অক্টোবর ভোর ৬টায় হাওড়া থেকে চেপে বসলাম শতাব্দী এক্সপ্রেসে। রাঁচি পৌঁছলাম দুপুর দেড়টা নাগাদ। বিকেল সাড়ে চারটেয় রাজধানী এক্সপ্রেসে উঠে দিল্লি পৌঁছলাম ৯ অক্টোবর সকাল সাড়ে দশটায়। দিল্লি থেকে ফের যাত্রা শুরু রাত ১১টায়। বিকানির এক্সপ্রেসে উঠলাম। বিকানিরে নামলাম ১০ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৭টায়। লম্বা সফর।

শুরু হল আমাদের রাজস্থান ভ্রমণ। রাজস্থানের মতো এত দুর্গ, এত কেল্লা আর কোথাও নেই। শত্রুদের হাত থেকে রক্ষার জন্যই রাজারা এত উঁচুতে দুর্গ বানাতেন। বিকানিরের জুনাগড় ফোর্ট আকবরের সেনাপতি রাজা রায়সিংহ নির্মাণ করেন ১৫৯৩ খ্রিস্টাব্দে। চারিদিক ঘেরা এই ফোর্ট। ঘুরে দেখলাম আমরা।

Advertisement

শুনেছিলাম উটের দুধ সুস্বাদু। বিকানিরের ক্যামেল রিসার্চ সেন্টারে উটের দুধ চাখার সেই সুযোগটা হয়ে গেল। এক কথায় অপূর্ব। বিকানিরের আচার-সুখ্যাতির কথা এই ফাঁকে বলে নিই। খুবই নামডাক।

এর পর আমরা বিকানির থেকে জয়সলমিরের উদ্দেশে রওনা দিলাম। এর পর যেখানে ‘স্যাম স্যান্ড ডিউনস’-এ ঘর ভাড়া নিয়ে থাকার কথা ছিল, রওনা দিলাম সেখানে। সেই সঙ্গে থর মরুভূমিতে উট আর জিপ সাফারির হাতছানি। থাকবে রাজস্থানি মেয়েদের নাচের অনুষ্ঠান।

এর পর জয়সলমির থেকে যোধপুর এক্সপ্রেসে চেপে যাত্রা শুরু করলাম। যোধপুরের মেহেরানগড় ফোর্ট হল রাজস্থানের সবচেয়ে বড় দূর্গ—১২৫ মিটার উঁচু আর ৫ কিলো মিটার লম্বা। গাইড জানালেন, রাজারা সেই সময় খুব নিচু আর ছোট খাটে শয্যা নিতেন, যাতে শত্রুপক্ষ আক্রমণ করলে সঙ্গে সঙ্গে রাজা সজাগ হতে পারেন। এই সব ফোর্টের স্থাপত্যশিল্প সত্যিই মন ভরিয়ে দেয়।

জুনাগড় দূর্গ

রাজস্থানের আর একটি বিশেষত্ব হল ওখানকার সুস্বাদু লঙ্কার চপ, পেঁয়াজ-কচুরি আর ডালবাটি চুরমা!

রাজস্থানে অবশ্য শুধুই দূর্গ আর মরুভূমি দেখিনি। তারই পাশে দেখেছি পাহাড়ের অপূর্ব সৌন্দর্য। মাউন্ট আবুতে গিয়ে নাক্কি লেক-এ বোটিং করার সময়ে চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের মজাই আলাদা! আর দেখলাম দিলওয়াড়া মন্দিরের গায়ে পাথর কেটে তৈরি অসাধারণ সব নকশা!

উদয়পুরে একটা চমৎকার পানীয় লক্ষ করলাম। গরম কড়াইতে দুধ জ্বাল দেওয়া হচ্ছে। আর জ্বাল হয়ে গেলে সেই গরম দুধেই কাজু, পেস্তা দিয়ে দিব্যি পরিবেশন করা হচ্ছে। সন্ধের পর চায়ের বদলে ওটাই হল রাজস্থানের বাসিন্দাদের শ্রেষ্ঠ পানীয়।

উদয়পুরে ‘সহেলি কে বাড়ি’ নামে বাসগৃহটি মহারানা সংগ্রাম সিংহ তাঁর একমাত্র প্রিয় কন্যার জন্য নির্মাণ করেছিলেন।

ডালবাটি চুরমা

জয়পুর হল রাজস্থানের রাজধানী, যাকে আমরা ভালবেসে ‘পিঙ্ক সিটি’ বা ‘গোলাপি নগরী’ নামে ডাকি। এই জয়পুরেই আছে ‘হাওয়া মহল’—যা কি না মহারাজা সোয়াইমান সিংহ নির্মাণ করেন ১৭৯৯ সালে। মহারাজা ছিলেন কৃষ্ণের ভক্ত, তাই মহলটি তিনি প্রভু কৃষ্ণকেই উৎসর্গ করেছিলেন। এ হাওয়া মহলে ৩৬৫টি জানালা রয়েছে। তখনকার দিনে নারীদের পর্দা প্রথার জন্যই জানালা নির্মাণ করা হয়েছিল, যাতে রানি জানালায় এসে হাওয়া খেতে পারেন।

তবে আসল কথাটা হল, রাজস্থান সম্পর্কে যতই বলা হোক না কেন, শেষ করা যাবে না। অবশেষে এসে পড়ল সেই বিদায়ের দিন। ১৯ অক্টোবর জয়পুর থেকে রাত ২টো নাগাদ যোধপুর এক্সপ্রেসে উঠে পড়লাম। মন পড়ে রইল মরুরাজ্যেই।

ছুটি এক্সপ্রেস

ক্যালেন্ডারের শেষ পাতে ফুরসত। এক পাহাড় শীত নিয়ে ঝকঝকে চুড়ো ডাকে, আয়। কোটরে শীতঘুম লুকিয়ে গহীন অরণ্য ডাকে, আয়। বালিয়াড়ি বিছিয়ে রেখেছে সোনা আর পদচিহ্ন, আয়। উত্তুরে হাওয়া চুলে বিলি কেটে গেলেই হু-হু কেঁপে ওঠে যারা, এক সমুদ্র উষ্ণতা তাদের ডাক পাঠায়। গল্পকথার আশ্চর্য স্থাপত্য মেলে ধরে ঘরকুনোকে ডাকে ইতিহাস। সাড়া দিলেন কাকে? কে চোখ বেঁধে টেনে নিয়ে গেল নিশির মতো? লিখে ফেলুন অনধিক ৫০০ শব্দে আর পাঠিয়ে দিন আমাদের। জানান যাতায়াত, থাকা-খাওয়ার হালহকিকত। ছবি (নিজেদের ছাড়া) দিন। পাঠান এই ঠিকানায়:

সম্পাদক (‌সেন্ট্রাল বেঙ্গল)

আনন্দবাজার পত্রিকা

৬, প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,

কলিকাতা — ৭০০০০০১

অথবা, করুন ই-মেল:

abpnm15@gmail.com

(*সম্পাদকের নির্বাচনই চূড়ান্ত। লেখা ও ছবি ফেরতযোগ্য নয়।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement