ছবি : সংগৃহীত।
নতুন বছরের শুরুতেই মহাকুম্ভ মেলা বসতে চলেছে উত্তরপ্রদেশের পুরনো শহর ইলাহাবাদে। যার নতুন নাম প্রয়াগরাজ। হিন্দুদের বড় তীর্থক্ষেত্র প্রয়াগে সারা বছরই পুণ্যার্থীদের ভিড় লেগে থাকে। তবে নতুন বছরের শুরুতে সেই পুণ্য অর্জনের উৎসাহ কিছু বেশি থাকবে। তার কারণ, ১২ বছর পরে মহাকুম্ভ মেলা বসছে প্রয়াগের শহরে। ২০২৫ সালের ১৩ জানুয়ারি থেকে ওই মেলা চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। পৌষ পূর্ণিমার তিথি থেকে শুরু হয়ে শিবরাত্রিতে শেষ হবে মহাকুম্ভ মেলা। যাঁরা কুম্ভমেলার সময় ইলাহাবাদে যাওয়ার কথা ভাবছেন তাঁরা জেনে রাখুন, মেলা চলাকালীন দেড় মাস কুম্ভমেলা প্রাঙ্গণে আমিষ খাওয়া বা সুরা পান করার কোনও সুযোগ থাকবে না।
মাছে-ভাতে বাঙালির ‘বিপদ’!
পুরাণ মতে, মহাকুম্ভ মেলা হল দেব এবং অসুরদের সমুদ্র মন্থনের উদ্যাপন। পুরাণে বলা আছে, সমু্দ্রমন্থনে ১২ দিন সময় লেগেছিল। কিন্তু স্বর্গের দিন-রাত্রির সঙ্গে মর্ত্যের হিসাব মেলে না। ঈশ্বরের এক একটি দিন সাধারণ মানুষের কাছে এক একটি বছরের মতো। তাই ১২ বছর অন্তর মহাকুম্ভের মেলা বসে প্রয়াগের শহরে। ওই দেড় মাস ধরে চলা ওই মেলায় যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজির হন সাধু-সন্ন্যাসীরা। পুণ্যার্থীদের পাশাপাশি আসেন পর্যটকেরাও। সেই সময় ৭-৮ কোটি ছুঁয়ে ফেলে ইলাহাবাদের জনসংখ্যা। বহু বাঙালি পর্যটক প্রয়াগে তিন নদীর সঙ্গম দেখতে যান সারা বছরই। কুম্ভ মেলার জন্যও ইতিমধ্যেই উত্তরপ্রদেশে যাওয়ার টিকিট কেটে ফেলেছেন অনেকে। কারণ, সুযোগ এক বার হারালে আবার পাওয়া যাবে ১২ বছরে পরে। উত্তরপ্রদেশ সরকারের নির্দেশে প্রয়াগরাজের মেলা প্রাঙ্গণে আমিষ খাওয়া তো বন্ধই। স্বাভাবিক ভাবেই কুম্ভমেলা প্রাঙ্গণের আশপাশেও আমিষ খাবার পাওয়া যাবে না তেমন। এমনকি, কুম্ভমেলায় কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদেরও এখন থেকেই নিরামিষ খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। তাই শীতে যদি ইলাহাবাদে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেই ফেলেন তবে জেনে নিন ইলাহাবাদের কিছু বিখ্যাত নিরামিষ খানার সুলুকসন্ধান।
ইলাহাবাদের নিরামিষ্য!
এমনিতে ইলাহাবাদে আমিষ খাওয়ার জায়গার অভাব নেই। উত্তরপ্রদেশের পুরনো শহরের বিখ্যাত খাবার হল পরোটা- গলৌটি কাবাব আর বিরিয়ানি। এমজি মার্গের ইট-অন থেকে শুরু করে কানাইয়ালাল অ্যান়্ড সনস, ক্লাইভ রোডের এলাহাবাদ বিরিয়ানি সেন্টার, বিবেক বিহার কলোনির ৯২৮০ রেস্তরাঁ, তাশখন্দ মার্গের মোতি মহল, শাহি দরবার, বিরিয়ানি রুটস, বাবা বিরিয়ানি, কলোনেল গঞ্জের হট অ্যান্ড কুল, সিভিল লাইনসের অ্যারোমা হল আমিষ এবং বিরিয়ানিভুকদের আদর্শ ঠিকানা। তবে নিরামিষ খেলে সুযোগ পেলে চেখে দেখুন—
১। ইলাহাবাদি কচুরি
খাঁটি ঘিয়ে ভাজা। ভিতরে অড়হর ডাল আর পেঁয়াজের পুর। লাল লাল ছোট লুচির সাইজ়ের কচুরি পরিবেশন করা হয় শালপাতার খোপ কাটা থালায় মটরের ঘুগনি, আলুর তরকারি বা আলুর দমের সঙ্গে। এর পাশাপাশি থাকে তেঁতুল আর লঙ্কার চাটনি, দই আর বুঁদির রায়তাও। নেতারাম মুলচান্দ অ্যান্ড সনস এবং সুভাষ চাউহারার কচুরির নাম মুখে মুখে ফেরে ইলাহাবাদে।
২। লোকনাথ গলির চাট
ভারতের রাস্তার ধারের খাবারের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল চাট। চাট বললে চট করে বেনারস, ইনদওরের নাম মনে পড়লেও ইলাহাবাদ মোটেই পিছিয়ে নেই। বরং ইলাহাবাদিরা বলেন, সেখানরকার চাট যাঁরা খাননি, তাঁরা খাওয়াদাওয়ার একটা বড় অভিজ্ঞতাই মিস্ করছেন। ইলাহাবাদের লোকনাথ লেন বিখ্যাত বিভিন্ন ধরনের চাটের জন্য। নামও বাহারি— গোলগাপ্পা চাট, দহিপুরী, দহি শোঁঠ কে বাতাসে, ঘিয়ে ভাজা ফুলকির চাট। সুযোগ পেলে চেখে দেখতে পারেন।
৩। সৈনিকের ছোলে সামোসা
নাহ শিঙাড়া নয়। সামোসাই। তবে সেই সামোসা পরিবেশন করা হয় ভেঙে। তার উপর ঝালঝাল মশালা ছোলে, দই, তেঁতুলের চাটনি, ধনেপাতা, কুঁচনো পেঁয়াজ আর ঝুড়ি ভাজা ছড়িয়ে। অশোক নগরের জনপ্রিয় দোকান সৈনিক। সেখানেই রুপোলি পাত্রে সাজিয়ে দেওয়া হয় ছোলে সামোসা। যার স্বাদ এক বার পেলে নাকি ভোলা যায় না।
৪। চায়ের সঙ্গে জিলিপি
খাঁটি ইলাহাবাদি সকালের স্বাদ পেতে হলে নাকি এই দু’টি একসঙ্গে খেতেই হবে। ইলাহাবাদিরা বলেন, সেখানকার কুড়মুড়ে কমলা রঙের জিলিপি একবার খাওয়ার পরে নাকি পরের দিন খাওয়ার জন্য রাত জেগে কাটিয়েছেন বহু মানুষ। ভেরবেলায় গরম গরম জিলিপি ভাজা হয় সিভিল লাইনে। সেখানেই পাওয়া যায় মশলা চা-ও। সকালে সেই চায়ের সঙ্গে জিলিপিই হল বহু ইলাহাবাদির প্রাতরাশ। তবে একান্তই জিলিপির সঙ্গে চা খেতে ইচ্ছে না হলে দইয়ের সঙ্গে জিলিপি খেতে পারেন সিভিল লাইনসেরই হিরা হালওয়াইয়ের গুমটিতে।