বাঙালির বেড়াতে যাওয়ার হাতেখড়ি মানেই দিঘা, পুরী আর দার্জিলিং। এই তিন জায়গাতে যায়নি এমন লোক মনে হয় এই বাংলাতে নেই। থাকলেও সংখ্যাটা খুব কম।
আমরাও সেই গোত্রেই পড়ি| কিন্তু এ বার বোনদের একটু অন্য রকম কিছু খুঁজে বের করতে বলতেই, খোঁজ শুরু হল। ঠিক হল লেপচাজগৎ আর দাওয়াইপানি যাব|
দিন ঠিক হয়ে গেল। ট্রেনের টিকিটও হয়ে গেল| যথারীতি ব্যাগপত্তর গুছিয়ে উঠে পড়লাম ট্রেনে| নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে নেমে তার পর সেখান থেকে গাড়িতে লেপচাজগৎ|
মায়াবি লেপচাজগৎ| বেড়াতে যাওয়ার আগেই ইন্টারনেট ঘেঁটে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু গিয়ে যে দৃশ্য দেখলাম, তা ভোলা যায় না|
দুপুরে খাওয়ার পাঠ চুকিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম হাঁটতে| পাহাড়ের ঢালে এঁকেবেঁকে চলে গিয়েছে রাস্তা। চার দিকে পাইনের বন, যেন আকাশ ছুঁয়েছে। তারই মাঝে মেঘের আনাগোনা|
মধ্যিখানে একবার সুখিয়াপোখরি বাজার থেকে কিছু খাবার কিনে নিয়ে এলাম| সন্ধে নামল ঝুপ করে। চার দিক সুনসান আর ঘুটঘুটে অন্ধকার। আমাদের আড্ডা বসল। সেই সঙ্গে ডান হাতের কাজ চলছেই। মুখও নড়ছে।
পাহাড়ী লোকজন খুব পরিশ্রমী। তারা তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে আর খুব সকালে উঠে কাজ শুরু করে দেয়| আমরাও পাহাড়ের নিয়ম ভাঙিনি। তাড়াতাড়ি খেয়ে নিয়ে আর একটু আড্ডা দিয়েই শুয়ে পড়লাম| পরের দিন খুব সকালে হোম স্টে-র লোকজন ডেকে দিল। —‘তাড়াতাড়ি উঠুন। সানরাইস দেখবেন আসুন।’
ধড়ফড় করে উঠে দেখি এক দিকের আকাশে লাল-হলুদ রং ধরেছে। আর অন্য দিকে দিগন্ত বিস্তৃত কাঞ্চনজঙ্ঘা। আর তার মাঝে পাইন গাছের মাঝে মেঘেদের আনাগোনা।
কতক্ষণ যে ও ভাবে বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম, জানি না।
জলখাবার খেয়ে বেড়িয়ে পড়লাম দাওয়াইপানির উদ্দেশে| পাহাড়ের চড়াই-উতরাই রাস্তা দিয়ে যখন গন্তব্যে পৌঁছলাম, তখন দুপুর পেরিয়ে গিয়েছে। ওখানে ঠান্ডাটা একটু কম| সুন্দর হোম স্টে-র ব্যবস্থা, কাঠের বাড়ি, বেশ নিরিবিলি, চারদিকে সবুজ আর সবুজ।
পাহাড়ের এ দিকে দাওয়াইপানি আর উল্টো দিকের পাহাড়ে দার্জিলিং শহর। ডান দিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা আর বাঁ দিকে সবুজে ঘেরা পাহাড়রাশি| রাত হতেই আলোর মালায় সেজে উঠল দার্জিলিং শহরটা। যেন অসংখ্য জোনাকি ধিকিধিকি করে জ্বলছে।
এখানকার খাবারের স্বাদ অসাধারণ। পাহাড়ের জলেরও যেন গুন আছে। নিমেষে সব খাবার হজম। রাতে খাওয়া শেষ করে হোম স্টে-র মালিকের সঙ্গে আড্ডা শুরু হল| পরের দিন ভোরবেলা ঘরে বসেই সানরাইস দেখলাম। ভোরের সূর্য কাঞ্চনজঙ্ঘা ছুঁয়ে যেতেই, সোনার মুকুট পরে মাথা তুলে দাঁড়াল সে।
সে দিন রাতে ক্যাম্পফায়ারের আয়োজন হয়েছিল| খুব হুল্লোড় হয়েছিল। পরের দিন অবশ্য মনটা ভারী হয়ে এল। এ ক’টা দিনের স্মৃতি নিয়েই এ বার যে বাড়ি ফেরার পালা।
• কী ভাবে যাবেন?
শিয়ালদহ বা হাওড়া থেকে ট্রেনে। বাসেও যাওয়া যেতে পারে। এনজেপি নেমে গাড়ি নিয়ে লেপচাজগৎ। সেখান থেকে দাওয়াইপানি যাওয়ার গাড়ির ব্যবস্থা করা কঠিন নয়।
• কখন যাবেন?
জুন থেকে সেপ্টেম্বর, এই চারটি বর্ষা মাস এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। তবে বৃষ্টিভেজা পাহাড়ের রূপও মন্দ নয়। তবে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিলবে না।
• কোথায় থাকবেন?
ফরেস্ট বাংলোর পাশাপাশি এখন বেশ কিছু হোম স্টে হয়েছে। বেশ সস্তাও সেগুলো।