দোলের ছুটিতে একদিনের আস্থানা হতেই পারে ইছামতীর ধারে কোনও কুটির। ছবি- সংগৃহীত
বসন্তের গায়ে যে কী লেখা আছে, তা জানা নেই। কিন্তু সে আসলেই সকলের মনে কেমন যেন এক উড়ু উড়ু ভাব। এ দিকে অফিসে আগে থেকে ছুটির জন্য আবেদন করে রেখেও বিশেষ লাভ হয়নি। কারণ, মার্চ মাসে বিশেষ ছুটি পাওয়া নিয়ে কম-বেশি সর্বত্রই সমস্যা হয়। সেই যাঁতাকলে আপনিও পড়েছেন। তাই বলে কি এ বারের দোলেও বাড়িতে বন্দি হয়ে কাটাবেন? ভেষজ রং কিনেও ছোঁয়ানো হবে না প্রিয় মানুষটির গালে? বন্ধুদের ভিড় বাঁচিয়ে তাঁকে নিয়ে কিন্তু চলে যেতেই পারেন কলকাতার কাছে পিঠে অচেনা কোনও গ্রামে।
দোলের আমেজও থাকবে, আবার সঙ্গীর সঙ্গে একান্তে একটু সময়ও কাটাতে পারবেন এমন পাঁচটি জায়গার সন্ধান রইল এখানে।
১) মায়াপুর
দোলের সময়ে এই মায়াপুরের রূপ দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসেন পর্যটকরা। সকাল থেকে চলে রং খেলা। মন্দিরের ভিতরে বিশ্রাম নেওয়া, থাকা এবং খাওয়ার ব্যবস্থা থাকায় বাইরে মন্দির এলাকার বাইরে যাওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না। মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের জন্মস্থান এই মায়াপুর থেকে ঘুরে আসতেই পারেন এ বছর দোলে।
কলকাতা থেকে ট্রেনে বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট স্টেশনে নেমে, লঞ্চে করে মায়াপুর পৌঁছতে সময় লাগে ঘণ্টা পাঁচেক। এ ছাড়া কলকাতা থেকে সরাসরি বাসও আছে। দোলের দিন ভোরে বেরিয়ে, সারা দিন সেখানে কাটিয়ে চাইলে সেইদিন অথবা পরের দিন বিকেলের মধ্যেই ফিরে আসা যায়। নিজের গাড়ি থাকলে অবশ্য সে দিনই ফিরে আসতে পারবেন।
২) খোয়াই
বসন্ত উৎসব না হলেও শান্তিনিকেতনের আকাশ-বাতাসে লেগে রয়েছে কবিগুরুর ‘বসন্ত বন্দনা’। তাই পুরনো আমেজ নেই বলে মন খারাপ না করে নতুনের আনন্দে মেতে উঠতে এক দিনের জন্য খোয়াই কিন্তু দোলে আপনার আস্থানা হয়ে উঠতেই পারে। এই সময়টায় শান্তিনিকেতন মানুষের ঢল নামে। তাই খুব ভিড় পছন্দ না হলে ভোরবেলার ট্রেনে বোলপুর পৌঁছে আবার সন্ধ্যার ট্রেনে ফিরে যেতে পারেন।
৩) নিমডিহি
নিমডিহি পুরুলিয়া সীমান্তে অবস্থিত একটি গ্রাম। শুধু দোলের সময়েই নয়, গোটা বসন্তকালেই এখানে বিশেষ লোক উৎসব আয়োজিত হয়। দোলের দিন হয় রং খেলার আয়োজন। রং খেলা ছাড়াও স্থানীয় গ্রামবাসীরা এই সময়ে এখানে নাচ-গানের আয়োজন করে থাকেন। সকালে রং খেলে, সন্ধ্যায় আদিবাসীদের সঙ্গে মাদলের ছন্দে একটি দিন গা ভাসিয়ে দেওয়াই যায়।
হাওড়া থেকে ট্রেনে নিমডিহি পৌঁছতে সময় লাগে ঘণ্টা ছয়েক। এই নিমডিহিতে একটা রাত না কাটালে কিন্তু বসন্ত পূর্ণিমায় এখানকার যে রূপ তা উপভোগ করতে পারবেন না।
৪) সুন্দরগ্রাম
হাতে একেবারেই ছুটি না থাকলে সকালে বাসন্তী হাইওয়ে ধরে বেরিয়ে পড়ুন সুন্দরগ্রামের উদ্দেশে। ছোট্ট, সুন্দর, পরিপাটি, সাজানো একটি রিসর্ট। কিন্তু ভিতরটা একেবারে গ্রাম বাংলার মতো করে সাজানো। দোলের দিন সকাল থেকে নানা অনুষ্ঠান হয় এখানেও। তাই কলকাতার মধ্যে থেকেও গ্রামবাংলার স্বাদ পাবেন। আবার সঙ্গীকে নিয়ে একটু অন্য রকম ভাবে কাটাতেও পারবেন।
৫) টাকি
সাধারণত ইছামতীর পাড় থেকে ঠাকুর বিসর্জন দেখতে সেই সময়ে অনেকে ভিড় জমান এখানে। কিন্তু দোলের সময়ও টাকীর পরিবেশ বেশ মনোরমই থাকে। এখানকার ছোট-বড় বিভিন্ন রিসর্টে আয়োজন করা হয় দোল উৎসবের। চাইলে সেখানেও যোগ দিতে পারেন। আবার বিকেলে ইছামতীতে নৌকাবিহার করে নিজেদের মতো একান্তে সময়ও কাটাতে পারেন। কলকাতা থেকে ট্রেনে টাকি পৌঁছতে সময় লাগে দু’ঘণ্টার মতো। চাইলে সকালে গিয়ে আবার বিকেলে ফিরেও আসা যায়।