ভিয়েতনামের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র ‘দ্য গোল্ডেন ব্রিজ’। ছবি: আইস্টক
বিদেশে ঘুরতে যাওয়ার কথা শুনলেই ভয়ে বুক দুরদুর করে। ভারতীয় মুদ্রার সঙ্গে বিদেশি মুদ্রার ফারাক দেখলেই বিপুল খরচের আঁচ পাওয়া যায়। তবে ভারতের আশেপাশেই এমন কিছু দেশ রয়েছে, যেখানে একটু বুদ্ধি করে পরিকল্পনা করলেই কম খরচে ঘুরে আসা যায়। ঠিক সময়ে বিমানের টিকিট কিনে রাখতে পারলে বাজেটের মধ্যেই বিদেশভ্রমণ সম্ভব।
এমন কোন কোন দেশে কম খরচে ঘুরে আসা যায়?
১) নেপাল
ফেলুদার ভক্ত হয়ে এক বার পশুপতিনাথ দেখবেন না, তা কি হয়? তবে কম খরচে নেপাল ঘুরতে চাইলে বিমান নয়, শিলিগুড়ি থেকে বাসে কাঠমাণ্ডু চলে আসুন। একটু বেশি সময় লাগবে এই যা। এ ছাড়া প্রাইভেট গাড়িও পাওয়া যায়। পৌঁছতে সময় লাগবে ঘণ্টা তিনেক। অফ সিজ়নে এলেও গাড়ি, হোটেল ভাড়া তুলনামূলক ভাবে সস্তা থাকে। সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খরচ কিছুটা হলেও বাঁচিয়ে নেওয়া যায়। একটু আগে থেকে হোটেল করে রাখলেও খানিকটা সাশ্রয় হয়। ঘোরার জায়গার তো শেষ নেই। হাতে সময় থাকলে বোধি স্তূপ, নারায়ণহিতি প্যালেস, সংগ্রহশালা, কৈসর মহল, নীলকণ্ঠ মন্দির ঘুরে আসতে পারেন। জিনিস পত্রের দাম ভালই। খুব বেশি কিছু না কিনলেও একটি জপযন্ত্র কিন্তু সঙ্গে রাখতেই হবে।
২) শ্রীলঙ্কা
রাবণের দেশ হলেও শ্রীলঙ্কায় গৌতম বুদ্ধের জনপ্রিয়তা বেশি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার মতো। পাহাড়, সমুদ্র এবং সবুজ চা বাগানে ভরা শ্রীলঙ্কা আপনার পছন্দের তালিকায় থাকতেই পারে। তবে ভারতের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা আকাশপথে যুক্ত। তাই সময় থাকতে বিমানের টিকিট কেটে রাখুন। থাকার হোটেল রয়েছে বিভিন্ন দামের। হাতে খুব বেশি সময় না থাকলে ক্যান্ডি, নুয়েরাএলিয়া, সীতাএলিয়া, গ্রেগরি লেক ঘুরে দেখতে পারেন। কাছেই রয়েছে পিনাওয়ালা এলিফ্যান্ট অরফ্যানেজ। সেখানে একসঙ্গে প্রায় ৫০-৬০টি হাতির বাস। শ্রীলঙ্কা কিন্তু বিখ্যাত দারচিনির জন্য। তাই মাড়ু নদীর ধারে দারচিনি দ্বীপ থেকে ঘুরে আসাই যায়। ফিরতি পথে রাজধানী শহর কলম্বো ঘুরে দেখে নিতে পারেন।
৩) ভুটান
উত্তরবঙ্গ বা সিকিমের মতোই ভুটান। সেখানে গেলে মনেই হবে না, বিদেশে গিয়েছেন। শান্ত, নিরিবিলি, পাহাড় এবং জঙ্গলে ঘেরা ভুটানের সরল জীবনযাত্রাই পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ। তবে ফেব্রুয়ারী, মার্চে পর্যটকদের ভিড় বেশি থাকে। তাই খরচ কমাতে চাইলে এই সময়টা ছেড়ে অন্য সময় বেছে নিতে হবে। বৌদ্ধমঠ এবং মন্দিরে ঘেরা ভুটানের সব জায়গায় কিন্তু গাড়ি পৌঁছয় না। তাই হেঁটে ঘোরার ক্ষমতা থাকলে তবেই যাবেন। তার মধ্যে দেখার মতো বৌদ্ধমঠ হল দ্রামেতসে গোয়েম্বা, চোরতেন কোরা, ত্রাশিগাং জং, মংগার জং। প্রাচীন একটি অভয়ারণ্য গোম্ফু কোরা। যদিও বৌদ্ধমঠগুলি দেখতে একইরকম তাই সবগুলিতে যেতে না পারলেও সমস্যা নেই।
৪) ভিয়েতনাম
কলকাতা থেকে সরাসরি বিমানে চেপে ভিয়েতনাম পৌঁছনো যায়। এখানকার ইতিহাস জানতে গেলে ঘুরে দেখতে হবে এখানকার সংগ্রহশালা। গ্র্যান্ড নটার ডাম ক্যাথিড্রাল, ফরাসি উপনিবেশকালে বেশ কিছু স্থাপত্য রয়েছে এখানে। এ ছাড়াও যাওয়া যেতে পারে ইতিহাসের স্মৃতিবিজড়িত হুই শহরে। এখানকার পারফিউম নদীতে নৌকাবিহারের স্মৃতি ভুলতে পারা কঠিন। এ ছাড়া রয়েছে একাধিক প্যাগোডা। হাতে সময় থাকলে ঘুরে দেখে নিতে পারেন হ্যানয়, মি সান, হোই অ্যান শহরগুলি। থাকা, খাওয়া বাদ দিলে ঘুরতে খুব বেশি খরচ হওয়ার কথা নয়। যদি আগে থেকে বুকিং সেরে রাখা যায়।
৫) মিশর
ছোটবেলায় ইতিহাস বইতে পিরামিড দেখেননি এমন মানুষ খুব কমই আছেন। তবে বইতে পড়া আর স্বচক্ষে পিরামিড দেখার মধ্যে ফারাক আছে বইকি। নীলনদের তীরে অবস্থিত এই পিরামিড পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে একটি। কলকাতা থেকে যেতে গেলে দিল্লি বা মুম্বই থেকে রাজধানী কায়রোতে যেতে হয়। এক ঝলকে দেখলে অনেকটা রাজস্থানের মতো লাগে। মিশরের ইতিহাস এবং এই দেশ এতই বিশাল যে এক বার এসে পুরোটা আত্মস্থ করা প্রায় অসম্ভব। তাই যে কোনও একটি দিক থেকে শুরু করাই ভাল। খাবার এবং জলের দাম একটু বেশি। যেমনটা প্রায় সব মরু শহরেই হয়ে থাকে। তাই যাতায়াতের খরচ এবং হোটেলের ভাড়ায় কাটছাঁট করতে না পারলে খরচ বেড়েই যাবে।