ছবির জন্যই বেড়াতে যাবেন। সেই ছবিতেই ভরে উঠবে ইনস্টাগ্রাম। গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ
এ বার পুজোয় কোথায় ঘুরতে যাবেন তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল পাঁচ বন্ধুর। পাহাড়, নদী, সমুদ্র, জঙ্গল, মরুভূমি— সব ঘেঁটে একটি করে নাম বেছে রেখেছেন সকলে। পাঁচ জনের মত কোনও দিনই এক সুরে বাজে না। কেউ পছন্দ করেন একটু অপরিচিত, পর্যটকদের আনাগোনা কম এমন শান্ত, নিরিবিলি জায়গা। কারও আবার গমগমে জনবহুল জায়গা পছন্দের। কেউ থাকতে চান হোমস্টেতে। কারও আবার হোটেলই পছন্দের। দু’জনের ভোট ‘ডরম্যাটরি’-র পক্ষে তো, তিন জন ঝুঁকে রয়েছেন আলাদা ঘরের দিকে। ঘুরতে যাওয়ার বিষয়ে নানা মুনির নানা মত হলেও একটি বিষয়ে সকলেই একমত। গন্তব্য যা-ই হোক না কেন, তা যেন হয় ‘ইনস্টাগ্রামেবল’। অর্থাৎ, এখানে যাওয়া, থাকার চেয়েও গুরুত্বপূ্র্ণ হল সুন্দর ছবি তোলা এবং সেই সব ছবি, ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে দেওয়া। ইদানীং অনেকেই আবার এই সব জায়গা ছবি, ভিডিয়ো দিয়ে ‘ট্রাভেল ভ্লগ’ করে নিজেদের চ্যানেলে আপলোড করেন। যাতে ভ্রমণপিপাসুরা সেই সব জায়গা সম্বন্ধে সম্যক ধারণা পেতে পারেন। আর ‘রিল’ তো আছেই। ঘোরা হবে, আবার ছবিতে ইনস্টাও ভরে উঠবে, তেমনই পাঁচ জায়গার সন্ধান দেওয়া হল এখানে।
১) আউলি, উত্তরাখণ্ড
‘অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্ট্স’ ভাল লাগে? তবে আউলি হতেই পারে আপনার গন্তব্য। কাশ্মীর ছাড়া দেশের মধ্যে একমাত্র আউলিতেই ‘স্কি’ করতে পারেন পর্যটকেরা। আউলির আরও একটি আর্কষণের জায়গা হল ‘রোপওয়ে’। যোশীমঠ থেকে রজ্জুপথে আউলি যাওয়ার অপরূপ দৃশ্য ধরে রাখতে পারেন। চাইলে আউলিতে রাত্রিবাসও করা যায়। তবে তার জন্য অনেক আগে থেকে ব্যবস্থা করে রাখতে হবে। আউলিকে ঘিরে রয়েছে নন্দাদেবী, ত্রিশূল, দ্রোণগিরি, পঞ্চচুল্লি এবং ত্রিশূল পর্বত। দিনের প্রথম আলো এবং শেষ বিকেলের পড়ন্ত রোদে পাহাড়ের রূপ হয় দেখার মতো।
২) পুদুচেরি
সমুদ্র ভালবাসেন কিন্তু ভীড় পছন্দ নয়। আবার কেউ কেউ এমন জায়গায় যেতে চান, যেখানে ইতিহাসের ছোঁয়া রয়েছে। এমন একটি জায়গা হল পুদুচেরি। এক সময়ে এখানে ফরাসিদের উপনিবেশ ছিল। সেই সময়ের ‘পন্ডিচেরি’ ফ্রেঞ্চ কলোনি এখনও একই রকম রয়েছে। বিভিন্ন জায়গার খাবার নিয়ে ভ্লগ করেন যাঁরা, তাঁদের জন্য এই জায়গা আদর্শ। এ ছাড়াও এখানে একাধিক সমুদ্রতট রয়েছে। চাইলে সেখানেও যেতে পারেন।
৩) হাম্পি
‘তুঙ্গভদ্রার তীরে’ পড়েছেন, অথচ হাম্পির প্রেমে পড়েননি? এমন মানুষ খুব কমই আছে। হাম্পির পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস। ১৪ শতকে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী হিন্দু রাজ্য ছিল এই হাম্পি। শিক্ষা, শিল্প এবং সংস্কৃতির পীঠস্থান হল এই জায়গা। রামায়ণেও নাকি কর্নাটকের এই স্থানের উল্লেখ রয়েছে। নতুন নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া ছাড়াও অনেকেরই ইতিহাস নিয়ে উৎসাহ থাকে। তাঁদের এক বার হলেও হাম্পি ঘুরে দেখা উচিত। মন্দিরের গায়ের নিখুঁত কারুকাজ নিয়ে ‘রিল’ তৈরি করা যায় অনায়াসে। এখানে রয়েছে বিখ্যাত সেই ‘মিউজ়িক টেম্পল’। যার এক একটি পাথরের গায়ে আঘাত করলে শোনা যায় সপ্তসুর।
৪) যোধপুর
বেশির ভাগ পর্যটকদের কাছে রাজস্থান মানেই জয়সালমীর এবং জয়পুর। তবে তরুণ প্রজন্ম কিন্তু বেশি উৎসাহ দেখাচ্ছে ‘ব্লু সিটি’ বা যোধপুরে। অনেকটা গ্রিসের সান্তরিনির মতো দেখতে এই ‘সাদা-নীল শহর’-এর ইতিহাস কিন্তু বড় বেরঙিন। এই নীল রঙের নেপথ্যে রয়েছে বর্ণবৈষম্যের ইতিহাস। যোধপুরে আসার আরও দুটি কারণ হল মেহরানগড় দুর্গ এবং উমেদভবন প্যালেস। এই উমেদভবন প্যালেস এখন বিলাসবহুল একটি হোটেল। চাইলে সেখানে একটি রাত কাটাতে পারেন। প্যালেসের ভিতরটি ঘুরিয়ে দেখাতে পারলে ইনস্টাগ্রামে ‘ফলোয়ার’-এর সংখ্যা বাড়বে লাফিয়ে লাফিয়ে।
৫) লাদাখ
ঘুরতে গিয়ে শুধু গানের সঙ্গে ঠোঁট মিলিয়ে রিল বানাতে চান না। ফোটোগ্রাফিও করতে চান। তা হলে লাদাখ হতেই পারে আপনার গন্তব্য। ‘থ্রি ইডিয়ট্স’-এ শেষ দৃশ্যটির কথা নিশ্চয়ই মনে আছে? নীল জলের লেকের সামনে স্কুটার চড়ে র্যাঞ্চোর সঙ্গে দেখা করতে আসছেন পূজা ওরফে করিনা কপূর খান। সেই একই দৃশ্য করিনার বদলে নিজেকে রেখে ছবি তুলতেই পারেন। লাদাখের রাস্তা খুব সুন্দর। তাই চাইলে রাস্তাতেও ফোটোগ্রাফি করা যায়।