সমুদ্রের নীচে আছে আর এক জগৎ। স্কুবা ডাইভিং- করে দেখে নেওয়া যায় তার ঝলক। ছবি: সংগৃহীত।
অতল সাগর। সমুদ্র নীল রং। বড় বড় ঢেউ। কখনও সবুজ পাহাড়, কখনও দিগন্ত বিস্তৃত বালুতটের বুকে বিশাল জলরাশি ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে সব সময়ই আকর্ষণের। তবে এই সমুদ্রের নীচেও রয়েছে আর এক জগত। সে জগতের রঙিন ছবি টেলিভিশন বা সিনেমার পর্দায় দেখলেও, চাক্ষুষ করার অভিজ্ঞতা খুব কম জনেরই আছে।
সে জগত এক বিস্ময়ের। সমুদ্রের নীচের। সেখানে রয়েছে রকমারি প্রবাল। কী তার রূপ! সেই প্রবালের গা দিয়ে চলে যায় রঙিন সব মাছেরা। নিশ্চিন্তে চলে বেড়ায় শংকর মাছ থেকে নানা রকম সামুদ্রিক প্রাণী। সেই জগতে যেতে হবে ডুব দিতে হবে অতল সমুদ্রে। স্কুবা ডাইভিং-এর সাহায্যে দেখে নেওয়া যায় সমুদ্রের তলদেশ। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে সে সুযোগ রয়েছে। এক ঝলকে দেখে নিন কোথায় -কোথায় এ দেশে স্কুবা ডাইভিং করা যায়।
স্কুবা ডাইভিং কী?
স্কুবা ডাইভিং হল, সমুদ্রের তলদেশের সামুদ্রিক জীবন-যাত্রা দেখতে জলের তলায় ডুব দেওয়া। তবে তার জন্য নির্দিষ্ট পোশাক, সরঞ্জাম আছে। নিয়ে যেতে হয় অক্সিজেন সিলিন্ডারও। স্কুবা ডাইভিংয়ের আগে এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পর্যটকদের ক্ষেত্রে সঙ্গে একজন কেউ থাকেন, যিনি বিষয়টি পরিচালনা করেন। প্রাথমিক ধাপে স্কুবা ডাইভিং করার জন্য সাঁতার না জানলেও চলে।
সতর্কতা- হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা, রক্তচাপ জনিত সমস্যা বা কোনও শারীরিক সমস্যা থাকলে স্কুবা ডাইভিং না করাই ভাল। বা করার আগে চিকিৎসক ও প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিয়ে করা উচিত।
লাক্ষাদ্বীপ-ভারতের কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চল লাক্ষাদ্বীপে রয়েছে ছোট-বড় একাধিক দ্বীপ। পর্যটকদের থাকা ও ঘোরাফেরার অনুমতি মেলে তার মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটিতে। তার মধ্যে রয়েছে বঙ্গারাম, আগাত্তি, কালপেনি, কাভারাত্তি, মিনিকয়, কাদমাথ। স্বচ্ছ নীল জলরাশির রূপে যে কেউ ডুবে যেতে পারেন। এখান থেকেই করে নেওয়া যায় স্কুবা ডাইভিং। দেখে নেওয়া যায় সমুদ্রের নীচের বিস্ময়কর জগত।
কাভারাত্তির ডলফিন ডাইভ সেন্টার, যাঁরা প্রথম স্কুবা ডাইভিং করতে চান তাঁদের জন্য উপযুক্ত। রকমারি প্রবাল চেনার পাশপাশি রঙিন সমস্ত ছোট-বড় মাছের ঝাঁকের দেখা মেলে এখানে। বিশেষত প্রবাল দেখতে এখানে স্কুবা ডাইভিং-এর বাড়তি পাওনা।
কাদমাত দ্বীপেও স্কুবা ডাইভিং-এর সুযোগ মেলে। কাচের মতো স্বচ্ছ জলে ডুব দিয়ে সামুদ্রিক জীবন চাক্ষুষ করার জন্য এই জায়গাও ভাল। মিনিকয়তেও স্কুবা ডাইভিং হয়।
খরচ পড়ে ৫০০০-৭০০০ টাকা মাথা পিছু।
আন্দামান- সমুদ্রের বিভিন্ন রকমের রং যদি উপভোগ করতে হয়, তাহলে লাক্ষাদ্বীপের পরেই নাম আসে আন্দামানেরও।
স্কুবা ডাইভিং হয় আন্দামানের বিভিন্ন দ্বীপে। তার মধ্যে রয়েছে হ্যাভলক, নীল, রস। পর্যটকদের জন্য মিনিট ১৫-এর জন্য স্কুবা ডাইভিং করানো হয়। প্রথম পর্যটকদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। জলের নীচে কথা বলা সম্ভব নয়। আকারে ইঙ্গিতে বোঝাতে হয়। তার জন্য থাকে সাংকেতিক ভাষা। তারপর শেখানো হয় কী ভাবে সরঞ্জামের মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হবে।
এই ধরনের স্কুবা ডাইভিং-এ ৫০০০-৮০০০ টাকা মাথা পিছু খরচ হয়। তবে কেউ চাইলে অ্যাডভান্স কোর্স-ও করে নিতে পারেন।
পণ্ডিচেরি
পণ্ডিচেরি জায়গাটির পরিচ্ছন্নতা, সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের কাছে বেশ প্রিয়। টেম্পল রিফ, ফোর কর্নারস্, দ্য হোল, র্যাভাইনস্ এই জায়গাগুলি থেকে পণ্ডিচেরিতে স্কুবা ডাইভিং করা যায়। চাইলে এখান থেকে স্কুবা ডাইভিংয়ের প্রশিক্ষণও নিতে পারেন কেউ।
পর্যটকরা অল্প সময়ের জন্য যে ধরনের স্কুবা ডাইভিং করেন তাতে জায়গা অনুয়ায়ী ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার খরচ পড়ে। অ্যাডভান্স প্রশিক্ষণ নিলে তার জন্য বেশ কয়েকদিন লাগে।
গোয়া
নানা ধরনের জল ক্রীড়ার জন্য বিখ্যাত গোয়া। প্যারাসেলিং থেকে ব্যানানা বোট, রকমারি জল ক্রীড়ার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। এখানে বেশ কিছু জায়গায় স্কুবা ডাইভিং-ও হয়। গ্র্যান্ড আইল্যান্ড থেকে স্কুবা ডাইভিং করে নেওয়া যায়। এছাড়াও রক আইল্যান্ড, টার্বো টানেল ইত্যাদি একাধিক জায়গা থেকে স্কুবা ডাইভিং হয়।
খরচ পড়ে মাথা পিছু ৫০০০-৭০০০ টাকা।
কর্নাটক
মুরুদেশ্বর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে নেত্রানি দ্বীপেও স্কুবা ডাইভিং হয়। জলের নীচে রকমারি প্রাণী থেকে প্রবাল দেখার সুযোগ মেলে। কখন হাঙরেরও দেখা পাওয়া যায়।
এই সমস্ত জায়গা ছাড়াও দ্বারকা, কেরলের কোভলাম-সহ আরও বেশ কিছু জায়গা থেকে স্কুবা ডাইভিং হয়।