কালিম্পঙের ছোট্ট অজানা গ্রাম লুংসেল। ছবি: সংগৃহীত।
একঘেয়ে জীবন থেকে মুক্তি চাই? তা হলে আর দেরি কেন? সময়, সুযোগ করে বেরিয়ে পড়ুন ঝোলা কাঁধে। পাহাড় যদি পছন্দের তালিকায় থাকে, মন যদি নির্জনতা খোঁজে, হারিয়ে যেতে চায় পাহাড়ি পথে, মেঘ-কুয়াশার চাদরে, তা হলে গন্তব্য হতেই পারে লুংসেল। নিউ মাল জংশন থেকে মাত্র ৪২ কিলোমিটার দূরে কালিম্পং জেলার গরুবাথানেই রয়েছে তার ঠিকানা। ছোট এই গ্রামের নাম লুংসেল।
ঘন সবুজে মোড়া গ্রাম। বয়ে গিয়েছে নদী। রয়েছে ঝর্না। কোথাও পথে পিচের প্রলেপ, কোথাও আবার রাস্তার অবস্থা বেশ খারাপ। তবে সে সবের তোয়াক্কা না করে যদি গ্রামের পথে হাঁটতে শুরু করেন, দেখা মিলবে এলাচ ক্ষেতের। সরল শিশুর খেলা, লোমশ সারমেয়র লেজ দুলিয়ে পিছনে আসা উপভোগ করতে করতে দিব্যি সময় কেটে যাবে। গ্রামের পাশ দিয়েই বয়ে গিয়েছে নদী। বর্ষায় ফুলে-ফেপে ওঠে পাহাড়ি ঝোরা। মেঘ নেমে আসে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে। তবে যদি বর্ষা এড়াতে চান, তবে পুজোর সময় বেড়ানোর তালিকায় লুংসেলকে রাখতে পারেন। সে সময় নীল আকাশ আর মিঠে কড়া রোদে সান্নিধ্য বেশ লাগবে। মেঘ-কুয়াশারা বিদায় নিলে, স্বাগত জানাবে কাঞ্চনজঙ্ঘা। আর যদি পাখি দেখা আর ছবি তোলার শখ থাকে, তবে তো এই গ্রাম হবে আদর্শ।
যদি সঙ্গে বয়স্ক মানুষ থাকেন, হাঁটতে না পারেন, তা হলেও অসুবিধা নেই। হোম স্টের বারান্দায় বসেই দিব্যি উপভোগ করা যাবে প্রকৃতির সৌন্দর্য, মেঘের আনাগোনা। আসলে এই জায়গা প্রকৃতির মধ্যে নিজেকে খুঁজে নেওয়ার। ছোট্ট এই গ্রামটি ঘোরা হয়ে গেলে গাড়ি নিয়ে কাছের লাভা, লোলেগাঁও, ঝান্ডিতেও ঢুঁ মারতে পারেন। লুংসেল থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরেই ঝান্ডি। আরও একটি ছবির মতো সুন্দর পাহাড়ি গ্রাম। সেখানেও ঘুরে নেওয়া যায়।
কী ভাবে যাবেন?
নিউ মাল জংশন স্টেশন থেকে লুংসেলের দূরত্ব ৪২ কিলোমিটার। এনজেপি স্টেশন থেকে দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার। তাই নিউ মাল জংশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে এই গ্রামে এলেই সুবিধা হবে। মালবাজার-ওদলাবাড়ি-পাথরঝোড়া-মানজিং হয়ে যাওয়া যায় লুংসেলে। আবার গরুবাথান হয়েও পৌঁছনো যায় পাহাড়ে ঘেরা ছোট্ট গ্রামটিতে।
কলকাতা থেকে নিউ মাল জংশন যাওয়ার ট্রেন অবশ্য হাতেগোনা। কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস ছাড়ে শিয়ালদহ থেকে রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে। পরদিন নিউ মাল পৌঁছয় সকাল ৯টা ১০ মিনিটে। পুরী-কামাক্ষ্যা এক্সপ্রেসও যায়। হাওড়া থেকে ট্রেন ছাড়ে সকাল ৭ টা ৫ মিনিটে। নিউ মাল পৌঁছয় রাত ৮টা ৫৫মিনিট নাগাদ।
থাকার জায়গা
লুংসেল গ্রামে কোনও হোটেল নেই। স্থানীয়দের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা আছে। সে সব হোমস্টেতে বিলাসিতার অভাব থাকলেও আতিথেয়তায় ফাঁক নেই। ভাত, মাংস, সব্জি, ডাল সবই মেলে। হোমস্টেতে বললে বাঁশপোড়া মাংসেরও ব্যবস্থাও করে দেবে।