মাধ্যমিক শেষ! উফ বাঁচলাম। এক বছর ধরে মাধ্যমিকের প্রস্তুতি। তারপর পরীক্ষা। পড়ার ধকল সামলাতে সামলাতে দিন গিয়েছে। এখন অফুরন্ত ছুটি। শরীর, মন, মেজাজ এখন ফুরফুরে।
বাড়ির লোকেদেরও ধকল কম যায়নি। তাই সকলে মিলে ঠিক করলাম কোথাও ঘুরতে যাব। কিন্তু কোথায় যাই। তাই নিয়ে শুরু হল শলা পরামর্শ। অনেক ভেবে ঠিক হল সিকিম।
আমাদের টিমে রয়েছে আমি, মা-বাবা এবং আমার বন্ধুর পরিবার। আমি চেয়েছিলাম পরীক্ষা শেষ হওয়ার দিন কয়েকের মধ্যে রওনা দেব। কিন্তু সে সময় টিকিট পাওয়াই গেল না। অবশেষে যাত্রার দিন ঠিক হল ২১শেষ মার্চ। ঘটনাচক্রে সে দিনই আমার জন্মদিন!
ছ’জনের ছোট দল চেপে বসলাম ট্রেনে। পরদিন ভোর চারটের সময় পৌঁছে গেলাম নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে। তারপর সকাল সাতটার মধ্যে গাড়িভাড়া করে দুপুরে পৌঁছে গেলাম গ্যাংটকে। সে দিনের মতো হোটেলে বিশ্রাম।
পরদিন সকালে বেরিয়ে পড়লাম ইয়ামথাং উপত্যকা -লাচুং এর উদ্দেশে। গাড়ির ড্রাইভার জানালেন যে অতিরিক্ত তুষারপাতের জন্য ইয়ামথাং জিরো পয়েন্ট বন্ধ। শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। তবে আশার কথাও শোনালেন তিনি। লাচুং খোলা রয়েছে। তাও ভাল।
দীর্ঘ যাত্রাপথে দেখলাম সর্পিল সাপের মতো এঁকেবেঁকে বয়ে যাওয়া কাটাও নদী, একাধিক পাহাড়ি ঝরনা ও জলপ্রপাত।
যাত্রায় ব্যাঘাত ঘটাল গাড়ি। পাহাড়ি রাস্তায় গাড়ি খারাপ হয়ে গেল। তবে কথায় আছে, সব খারাপের মাঝে কিছু ভালও থাকে। যেখানে গাড়ি অচল হয়ে গেল, সেখানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতি মনোরম। অস্তাচলগামী সূর্য, দিগন্তস্পর্শী পাহাড়, আপনভোলা খরস্রোতা নদী ও ভয়ংকর সুন্দর অতলস্পর্শী খাদ- এ সহব দেখে মনটা ভাল হয়ে গেল। একাট জিনিস খেয়াল করলাম যে কোনও গাড়ি খারাপ হলে সঙ্গে সঙ্গে আরও একাধিক গাড়ির ড্রাইভার সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। তা তিনি যতই অচেনাই হোক না কেন।
প্রায় আট-নয় ঘণ্টা পর লাচুং লজে পৌঁছলাম। তখন সূর্য ডুবে গিয়েছে। লজে রাত কাটানো পর সকালে যখন জানালা খুললাম, তখন যে এমন দৃশ্য দেখব, স্বপ্নেও ভাবিনি।
চারদিকে তুষারধবল গিরিশৃঙ্গ, রোদ পড়ে চকচক করছে। সবাইকে তা দেখাতে, সকলেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ল। সকালে গাড়ি করে আরও উঁচুতে উঠলাম। বরফের আরও কাছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বরফের স্তূপ। সেই বরফ নিয়ে খুব মজা করলাম। সঙ্গে প্রচুর ছবিও তোলা হল। সে দিনেই আমরা নেমে এলাম গ্যাংটকে।
পরদিন আবার যাত্রা নাথুলা পাস। বাবামন্দির ও ছাঙ্গু লেকে। তবে দুঃসংবাদ এখনও অবশিষ্ট ছিল। তুষারপাতের জন্য বন্ধ ছিল নাথুলা, বাবামন্দির। দেখা হল না ভারত-চীন সীমান্ত। তবে দেখলাম কুয়াশাবৃত ছাঙ্গু লেক। সেখানেও বরফের অভাব ছিল না।
সবটাই বরফে ঢাকা, কোনও স্থান রিক্ত ছিল না। পরে অনেকে বলেছিল যে- আমরা মার্চে গিয়ে যা বরফ দেখলাম, অনেকে ডিসেম্বর -জানুয়ারিতেও তা পায় না। সেখানেও তোলা হল ছবি। খুব মজা হল।
কিছুক্ষণ সেখানে থেকে নেমে এলাম গ্যাংটকে। পরদিন ফেরার ট্রেন। কষ্ট হলেও বিদায় জানাতে হল পাহাড়-পর্বতকে, অনিন্দ্যসুন্দর তুষারকে। কাশ্মীরকে বলে ভূস্বর্গ, কিন্তু সিকিমও সৌন্দর্যের দিক দিয়ে কিছু কম যায় না। জন্মদিনে এমন সুন্দর উপহারের জন্য আমার পরিবারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ থাকব।
কখন যাবেন
সাধারণত শীতের শুরু সেপ্টেম্বর অক্টোবর কিংবা গ্রীষ্মের শুরু মার্চ মাসে গেলে পর্যাপ্ত বরফ পাবেন। গ্রীষ্মেও যেতে পারেন, তবে বেশী বরফ দেখবেন না। শীতে তো কখনও না। অধিকাংশ দ্রষ্টব্যই বন্ধ থাকে।
কী ভাবে যাবেন
ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে গাড়ি করে গ্যাংটক যাওয়া যায়। অাবার বাসে শিলিগুড়ি গিয়ে সেখান থেকে যাওয়া যেতে পারে। কিংবা প্লেন বাগডোগরা গিয়েও যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন
প্রচুর হোটেল -লজ রয়েছে। পছন্দ মতো থাকা যেতে পারে।
দিব্য সাহা, কদবেলতলা, বহরমপুর
নিজের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর-সহ লেখা পাঠান এই ঠিকানায়:
ই-মেল: abpnm15@gmail.com
(* ই-মেলের সাবজেক্ট অংশে অবশ্যই ‘ট্রাভেল’ লিখবেন। সম্পাদকের নির্বাচনই চূড়ান্ত)