Travel

মুক্তির স্বাদে পাড়ি মধুপুরে

শহর থেকে খুব দূরে নয় সাঁওতাল পরগনা। হাওয়া বদল করতে পাড়ি দিন পশ্চিমে

Advertisement
চয়ন গঙ্গোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:৪৬
প্রকাণ্ড: খন্ডোলি ড্যামের অনতিদূরে

প্রকাণ্ড: খন্ডোলি ড্যামের অনতিদূরে

লকডাউনে গৃহবন্দি অবস্থা দুঃসহ হয়ে উঠেছিল যখন, সেই সময়েই এক কাছের মানুষ প্রস্তাব দিলেন মধুপুরে যাওয়ার। এক সময়ে বাঙালির পশ্চিমে যাওয়ার চল বা ঐতিহ্য ছিল, তার কিছুই প্রায় বাকি নেই এখন। কিন্তু মধুপুর নামটা শুনেই হাওয়াবদলের যাবতীয় স্মৃতি ভিড় করে এল। সেই সঙ্গে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ক’টা দিন বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার লোভও সামলানো গেল না।

অগত্যা গাড়িতে পাড়ি মধুপুর। কলকাতা থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার, রাস্তায় দু’বার বিরতি নিয়ে পৌঁছতে সময় লাগল প্রায় সাড়ে ছ’ঘণ্টা। দিল্লি রোড ধরে এগিয়ে প্রথম স্টপ দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের উপরের এক কাফেতে, দ্বিতীয় স্টপ চিত্তরঞ্জনে ঢোকার মুখে। যাঁরা ট্রেনে যাবেন, তাঁদের গন্তব্য অবশ্য সরাসরি মধুপুর স্টেশন। সেখান থেকে ভাড়ার গাড়ি কিংবা টাঙ্গা ভরসা।

Advertisement

মধুপুরে পা দিয়ে প্রথমেই যে কথাটা মনে হল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই, তবে জায়গাটার ফ্লেভার আগের মতোই আছে এখনও। পুরনো ভিলাগুলির সংস্কার-বিনির্মাণ করে এক দিকে ভালই হয়েছে। বিখ্যাত-অখ্যাত বহু বাঙালিই পশ্চিমে বাড়ি তৈরি করতেন, ছুটিতে এসে সেখানকার জল-হাওয়ায় তাজা হয়ে শহরে ফেরার পথ ধরতেন। সেই বাড়ির কয়েকটিই অবশিষ্ট রয়েছে, বেশির ভাগই হয় হাতবদল হয়ে গিয়েছে, নয়তো ধ্বংসপ্রাপ্ত। আমরা জনা পনেরো গিয়ে যে ভিলায় উঠলাম, তার বয়সও প্রায় একশো ছুঁইছুঁই। বাড়ি সামলানোর ভার এখন তৃতীয় প্রজন্মের হাতে, যাঁরা সাধের বাংলোটিকে বয়সের ভারে ন্যুব্জ হতে দেননি। পুরনো চার্ম আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় মধুপুরে কাটানো কয়েকটা দিন আরামে-ভাল লাগায় ভরে উঠেছিল।

টুকিটাকি

• কলকাতা থেকে দূরত্ব ৩০০ কিলোমিটার। গাড়িতে ৬ ঘণ্টা, ট্রেনে আরও কম। পূর্বা এক্সপ্রেস-সহ বেশ কিছু ট্রেন যায় মধুপুর। একই ট্রিপে দেখে নিন দেওঘর-গিরিডি-শিমুলতলাও

দিনে বায়ুসেবন, কেয়ারটেকারের তত্ত্বাবধানে জমিয়ে মধ্যাহ্নভোজ, আধঘণ্টারও কম দূরত্বে খন্ডোলি ড্যামে গিয়ে হইহই করে আসা, লেকে বোটিং... অতিমারি বলে যে কোনও শব্দ আছে, ওই ক’টা দিনের জন্য ভুলতে বসেছিলাম যেন। মধুপুরের কাছেই দেওঘর, তপোবন, ত্রিকূট পাহাড়, শিমুলতলা, গিরিডি— যাওয়ার জায়গার অভাব নেই। সব ক’টা জায়গা ঘুরে ফেলা যায় সময় থাকলে। কোথাও না গিয়ে শুধু মধুপুরেই ক’টা নির্ঝঞ্ঝাট দিন কাটালেও মন ভরে যাবে। রাতে তারা ভরা ঝকঝকে আকাশের নীচে বনফায়ার আর ডিনারের আনন্দ ভোলার নয়।

সাঁওতাল পরগণা নিয়ে বাঙালির নস্ট্যালজিক আবেগ ফিরে আসে এ জায়গায় পা রাখতেই। মধুপুরের কাছেই শালঘেরা জঙ্গল পেরিয়ে পৌঁছে যাওয়া যায় বুরাই পাহাড়ে। মোনোলিথিক রক বছরের পর বছর ধরে জল-বায়ুর ক্ষয়ের ফলে প্রাকৃতিক গুহা ও নানা ভূমিরূপের আকার ধারণ করেছে। পাশেই নদী, যা পায়ে হেঁটেও পেরোনো যায়। উপরে উঠলে এক অপূর্ব নিসর্গ চোখে পড়ে। এখান থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্যও অনবদ্য।

খন্ডোলি ড্যাম হল মধুপুর থেকে মিনিট চল্লিশেক দূরত্বের মধ্যে আর একটি দ্রষ্টব্য। গিরিডিতে জল পরিবহণের সুবিধার্থে তৈরি হয়েছিল এই ড্যাম। চাইলে লেকে বোটিং করা যায়। এক সময়ে প্যারাগ্লাইডিং, রক ক্লাইম্বিংয়ের ব্যবস্থা করা ছিল, যা লকডাউনের জেরে আপাতত বন্ধ রয়েছে। ড্যামের গা বেয়েই উঠে যাওয়া সবুজ টিলা, আর বোটিং করতে করতে তার অসামান্য ভিউ এখানে পর্যটকদের টেনে আনে।

দেওঘর-মধুপুর বিখ্যাত সেখানকার মিষ্টির জন্য। পেঁড়া ছাড়াও রকমারি মিষ্টি দেদার কেনা হয়েছিল, বাড়ি ফেরার আগেই নিমেষে শেষ! শিব ও কালী মন্দির দর্শনের জন্যও অনেকে আসেন এ জায়গায়। তবে আমরা গিয়েছিলাম নিছকই হাওয়াবদলে। বাঙালি আর পশ্চিমে যায় না— এ বদনাম ঘোচাতেও! আশপাশে দ্রুত বদলে যাওয়া স্কাইলাইন দেখলে বারবার মধুপুরের মতো জায়গার কথাই মনে হয়। যেখানে সময় এখনও থমকে রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement