হিমাচল প্রদেশের স্বল্পচেনা ঠিকানা পাব্বর উপত্যকা। ছবি: সংগৃহীত।
গন্তব্য ঠিক হয়নি, তবে ছেল বা মেয়ের পরীক্ষা শেষ হলে বেড়াতে যাবেন, তা নিশ্চিত। কিন্তু যাওয়া যায় কোথায়, তা নিয়ে ভাবনা? এপ্রিল বা মে মাসে কোথাও যেতে হলে পাহাড়ই ভাল। সে ক্ষেত্রে চেনা জায়গার পাশাপাশি তালিকায় রাখতে পারেন ৫ স্বল্পচেনা শৈলশহর।
পনমুডি
নতুন কোথাও যেতে চাইলে কেরলের পনমুডিও হতে পারে ঘুরে আসার ঠিকানা।
পাহাড় বললেই অনেকের চোখে হিমালয়ের ছবিই ভাসে। তবে এ দেশের পশ্চিম বা পূর্বঘাট পর্বতের সৌন্দর্যও কম নয়। কেরলের পনমুডি তেমনই এক স্থান। পাহাড়ি জনপদ হিসাবে এ রাজ্যের মুন্নারই পরিচিত। পনমুডির খবর খুব একটা লোকজন রাখেন না। তবে, তিরুঅনন্তপুরম শহর থেকে ৫৩ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি জনপদটি ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতোই সুন্দর। পশ্চিমঘাট পর্বতমালার অনুচ্চ পাহাড়শ্রেণি ঘিরে রেখেছে তাকে। ঝর্না, উপত্যকা, অরণ্য, কুয়াশা—সব মিলিয়েই তার সৌন্দর্য। পনমুডিতে এলে দেখে নিতে পারেন মীনমুত্তি জলপ্রপাত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১১০০ মিটার উচ্চতার শৈলশহরটির আবহাওয়া বছরভরই মনোরম। গরমের মরসুমেও তাই নিশ্চিন্তে এই স্থান বেছে নেওয়া চলে।
কী ভাবে যাবেন?
তিরুঅনন্তপুরমে বিমানবন্দর এবং রেল স্টেশন, দুই-ই আছে। তিরুঅনন্তপুরম শহর থেকে বাস বা গাড়িতে যাওয়া যায় পনমুডি।
পাব্বর ভ্যালি
পাব্বর উপত্যকা। ছবি: সংগৃহীত।
শিমলা, কুলু, মানালি জনপ্রিয় হলেও পাব্বর ভ্যালির নাম শোনেননি অনেকেই। হিমাচল প্রদেশের শিমলা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে পাব্বর ভ্যালির অবস্থান। নিরালা এই উপত্যকার রূপের টানে ক্রমশ পর্যটকদের আনাগোনা বাড়ছে। দেবদারু, পাইন, ওক বৃক্ষে ঘন সবুজ হয়ে থাকা সুউচ্চ পাহাড়ের সারি যেন বেড় দিয়ে রেখেছে পাব্বরকে। তারই উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে পাব্বর নদী। গ্রামে রয়েছে আপেলের বাগিচা। সেপ্টেম্বরের শেষে গেলে গাছ ভর্তি আপেল পাওয়া যাবে। পাব্বর উপত্যকা ঘুরে দেখতে গেলে হাঁটাই সবচেয়ে ভাল উপায়। একটু নিরালায় প্রকৃতির সান্নিধ্য উপভোগ করতে হলে, শিমলা ঘুরে এখানেও চলে আসতে পারেন। ২২ নম্বর জাতীয় সড়ক এসেছে পাব্বর ভ্যালিতে। বাস বা গাড়িতে সরাসরি এখানে আসা যায়।
কী ভাবে যাবেন?
বিমান, রেলপথে কিংবা সড়কপথে দিল্লি অথবা চণ্ডীগড় পৌঁছে, সেখান থেকে গাড়িতে পাব্বর আসতে পারেন। কালকা থেকে টয়ট্রেনে শিমলা গিয়ে সেখান থেকেও গাড়িতে পাব্বর আসা যায়।
হাফলং
ঘুরে আসতে পারেন অসমের হাফলং থেকেও। ছবি: সংগৃহীত
অসমের ডিমাহাসাও জেলার হাফলং শৈলশহর হিসাবে যে কোনও পর্যটকের মন জয়ের ক্ষমতা রাখে। এক সময় এখানে ন্যারো গেজ লাইন ছিল। বেশ কয়েক বছর হল ছোটলাইন বড় হয়েছে। নতুন স্টেশনের নাম নিউ হাফলং। সেখানে পা দিলেই চোখ জুড়িয়ে যাবে ঢেউ খেলানো সবুজ পাহাড় দেখে। হাফলং শহরের মাঝখানে রয়েছে প্রকাণ্ড এক ঝিল। জলে ভেসে বেড়ায় মাছেরা। ঝিল ভাগ করেছে শহরটিকে। এ পার থেকে ও পার যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে একটি ছোট্ট সেতু। ঝিলের উল্টো দিকে বোটানিক্যাল গার্ডেন। পাকদণ্ডি পথে কিছুটা উঠেই গির্জা। গাড়ি নিয়ে এই শহরের আনাচ-কানাচ ঘুরে নেওয়া যায়। পাখি নিয়ে আগ্রহ থাকলে যেতে পারেন ঝটিংগা। পক্ষী পর্যবেক্ষকদের স্বর্গরাজ্য এই স্থান। এ ছাড়া রয়েছে বেশ কয়েকটি ঝর্না। এ ছাড়া এখনাকার দোকান, বাজারও ঘুরে নিতে পারেন। হাতের কাছের শীতের পোশাক থেকে ঘর সাজানোর নানা জিনিস মিলবে সেখানে। পাবেন স্থানীয় খাবারের স্বাদও।
কী ভাবে যাবেন?
হাওড়া থেকে ট্রেনে নিউ হাফলং স্টেশন যাওয়া যায়। হাফলংয়ের সবচেয়ে কাছে রয়েছে শিলচর বিমানবন্দর। সেখান থেকে হাফলংয়ের দূরত্ব ১০৮ কিলোমিটার।
মাউন্ট আবু
এপ্রিল, মে মাসে রাজস্থানের একাধিক শহরে দৈনিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেশ উপরের দিকে থাকে। গরম এড়াতে চাইলে ঘুরে নিতে পারেন এ রাজ্যের শৈলশহর মাউন্ট আবু এবং সংলগ্ন অচলগড়ের মতো কয়েকটি এলাকা। সিরহি জেলার মাউন্ট আবু থেকে আরাবল্লি পর্বতের রূপ উপভোগ করা যায়। ভূগোলের পড়ুয়ারা মাউন্ট আবুর আশপাশে বাতাসের ক্ষয়কাজে তৈরি একাধিক ভূমিরূপ চাক্ষুষ করার সুযোগ পাবেন। ছোট শহরটি বেশ ছিমছাম। শীতের দিনে তাপমাত্রা বেশ নেমে গেলেও, বছরের অন্য সময়ে আবহাওয়া মনোরমই থাকে। এখানকার অন্যতম আকর্ষণ ‘দিলওয়াড়া মন্দির’। মার্বেলের সূক্ষ্ম কারুকাজ, স্থাপত্যশৈলী দেখার মতো। এ ছাড়া ঘুরে নেওয়া যায় নাক্কি হ্রদ, সানসেট পয়েন্ট, গুরু শিখর-সহ বেশ কয়েকটি স্থান। মাউন্ট আবু থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে অচলগড়ও দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এখানে রয়েছে পাহাড়ের মাথায় বহু পুরনো দুর্গ অচলগড়। সেখান থেকে সূর্যাস্তের রূপ দর্শন অভিজ্ঞতা হয়ে থাকতে পারে। দুর্গ থেকে খানিক দূরেই রয়েছে অচলেশ্বর মহাদেব মন্দির।
কী ভাবে যাবেন?
উদয়পুরে রয়েছে দেবক বিমানবন্দর। সেখান থেকে মাউন্ট আবু যেতে পারেন। অহমদাবাদের বল্লভভাই পটেল বিমানবন্দর থেকেও মাউন্ট আবু আসা যায়। দূরত্ব ২২০ কিলোমিটার। এ ছাড়া, দিল্লি, রাজস্থানের যে কোনও বড় শহরের সঙ্গে সড়কপথে এই শৈলশহর যুক্ত। ট্রেনে জয়পুর এসেও সড়কপথে মাউন্ট আবু ঘুরে নেওয়া যায়।
ধনৌল্টি: গাড়োয়াল হিমালয়ের সৌন্দর্য উপভোগ বেছে নিতে পারেন ধনৌল্টি। উত্তরাখণ্ডের পরিচিত পর্যটনকেন্দ্র মুসৌরি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে তার অবস্থান। দেবদারু, পাইনে ঘেরা এলাকাটির নৈসর্গিক রূপের টানে বহু পর্যটকই এখানে ছুটে আসেন। অরণ্যপথে রডোডেনড্রনের আকর্ষণও কম নয়। এখান থেকে ঘুরে নেওয়া যায় ইকো এবং অ্যাডভেঞ্চার পার্ক, দেওগড়, তেহরি জলাধার, কাঁটাতাল, চাম্বা-সহ অনেক জায়গাই।
কী ভাবে যাবেন?
ট্রেনে হৃষীকেশ অথবা দেহরাদূন এসে সেখান থেকে সড়কপথে ধনৌল্টি যেতে পারেন। দিল্লি থেকে সড়কপথেও যাওয়া যায়। তেহরি বা মুসৌরি হয়েও এখানে আসতে পারেন।