ইয়ানিক সিনার। ফাইল চিত্র
শেষ পর্যন্ত পারলেন না। কিন্তু না পারলেও বোঝা গেল, বিশ্ব টেনিসে যাঁরা নতুন উঠে এসেছেন, যাঁদের ভবিষ্যতের তারকা বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম ইয়ানিক সিনার। নোভাক জোকোভিচের কাছে ৭-৫, ৬-২, ৩-৬, ২-৬, ২-৬ গেমে হারা ম্যাচে সিনার বার বার উপলব্ধি করালেন, তাঁর মধ্যে ভবিষ্যতে বিশ্ব টেনিস শাসন করার ক্ষমতা কতটা। ইতালির ছয় ফুট দু’ইঞ্চির এই খেলোয়াড় উইম্বলডনের আগেও দু’বার গ্র্যান্ড স্লামের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছিলেন। চলতি বছর অস্ট্রেলিয়ান ওপেন এবং ২০২০ সালের ফরাসি ওপেনে শেষ আটে পৌঁছেছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে পেশাদার টেনিসে পা দেন সিনার। বর্তমানে এটিপি ক্রমতালিকায় রয়েছেন ১৩ নম্বরে। ক্রমতালিকায় তাঁর এখনও পর্যন্ত সেরা অবস্থান ৯। এখনও পর্যন্ত পাঁচটি খেতাব জেতা সিনার টেনিস দুনিয়ায় পরিচিত শক্তিশালী ফোরহ্যান্ডের জন্য। ২০০৮ সালের পর তিনিই কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসাবে কোনও এটিপি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন ২০২০ সালে। প্রথম টিনএজার হিসাবে এটিপি ৫০০ পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হন ২০২১ সালের সিটি ওপেনে। জোকোভিচের পর সিনারই কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসাবে পাঁচটি এটিপি খেতাব জিতেছেন।
পেশাদার টেনিসজীবনের শুরুতেই জোকোভিচের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দেওয়া সিনারের বাবা একটি রেস্তোরাঁর শেফ। মা ওই রেস্তোরাঁরই কর্মী। উত্তর ইতালির সান ক্যানডিডোয় জন্ম সিনারের। মাত্র তিন বছর বয়স থেকে টেনিস শিখতে শুরু করা সিনারের পছন্দের খেলার তালিকায় রয়েছে স্কি এবং ফুটবল। আট বছর বয়সেই ইতালির অনূর্ধ্ব ১২ পর্যায়ের টেনিসে চ্যাম্পিয়ন হন সিনার। ১৩ বছর পর্যন্ত টেনিসের পাশাপাশি নিয়মিত ফুটবলও খেলতেন। পরে অবশ্য টেনিসকেই বেছে নিয়েছেন। সেই টেনিস র্যাকেট হাতে বিশ্বকে আগামী দিনে সিনার শাসন করবেন বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞই।
১৭ বছর বয়সেই টেনিসকে পেশা হিসাবে বেছে নেন সিনার। জুনিয়র পর্যায়ে অবশ্য কখনও গ্র্যান্ড স্ল্যাম খেলেননি। সে সময় ক্রমতালিকাতেও তেমন উল্লেখযোগ্য জায়গায় ছিলেন না। উইম্বলডন কোয়ার্টার ফাইনালে জোকোভিচকে কড়া চ্যালেঞ্জ জানানো সিনারের সেরা জুনিয়র র্যাঙ্কিং ছিল ১৩৩। ১৩ বছর বয়স থেকে টেনিসকে গুরুত্ব দিতে শুরু করার পর থেকে ক্রমশ উন্নতি করেন তিনি। সে সময় তাঁর আট বছর বয়সের সাফল্যকে ব্যতিক্রম হিসাবেই ধরতেন অনেকে।
পেশাদার টেনিসে সিনার প্রথম চমক দেখান ২০২০ সালের ফরাসি ওপেনে। ২০০৬ সালে জোকোভিচের পর কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসাবে সে বার ফরাসি ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠেন তিনি। পৌঁছন শেয আটে। হারান বিশ্বের তৎকালীন ১০ নম্বর খেলোয়াড় ডেভিড গোফিনকে। সেই ফরাসি ওপেনের সাফল্য সিনারকে এটিপি ক্রমতালিকায় প্রথম ৪০-এর মধ্যে তুলে আনে। তার পর অবশ্য গ্র্যান্ডস্লামে তেমন সাফল্য পাননি সিনার। চলতি মরসুমে আবার তাঁকে দুরন্ত ছন্দে দেখা যাচ্ছে। উইম্বলডনে দুরন্ত পারফরম্যান্সের আগে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনেরও শেষ আটে পৌঁছন তিনি।
সিনারের খেলার সঙ্গে অনেকে আবার মিল পান রজার ফেডেরারেরও। ফেডেরারের মতোই অত্যন্ত দ্রুত টেনিস কোর্টের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছে যেতে পারেন তিনি। শক্তিশালী ফোরহ্যান্ডের পাশাপাশি ব্যাকহ্যান্ডেও দক্ষ তিনি। ফেডেরার নিজেও সিনারের প্রশংসা করে এক বার বলেছিলেন, ‘‘সিনার আমার মতোই ফোরহ্যান্ড এবং ব্যাকহ্যান্ড মারে।’’ এসি মিলানের অন্ধ ভক্ত সিনার ইতালিয়ান ছাড়াও ইংরাজি এবং জার্মান ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন।
ভাষা হয়ত আরও রপ্ত হয়ে যাবে। কারণ, যে ভাবে এগোচ্ছেন, তাতে বিশ্ব টেনিসের শাসনভার হয়ত অদূর ভবিষ্যতে তাঁর হাতেই থাকবে।