পদক জিতলেন নীরজ। ছবি পিটিআই
প্রতি বার অলিম্পিক্স এলেই ভারতীয় দর্শক এবং সমর্থকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন শুটার, তিরন্দাজ, বক্সার, কুস্তিগিরদের নিয়ে। ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের ক্রীড়াবিদরা সেখানে বরাবরই ব্রাত্য। এর একমাত্র কারণ তাঁদের ব্যর্থতা।
বছরের পর বছর ধরে বহু ভারতীয় ক্রীড়াবিদ ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নিয়ে অলিম্পিক্সে গিয়েছেন। কিন্তু কেউ এখনও সাফল্যের মুখ দেখেননি। অলিম্পিক্সের ১২৫ বছরের ইতিহাসে কোনও ভারতীয় ক্রীড়াবিদ ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড থেকে পদক আনতে পারেননি। সেই চিত্রটাই বদলে দিলেন নীরজ চোপড়া। জ্যাভলিনে তাঁর হাত ধরে প্রথম সোনা এল দেশে।
যে নীরজ দেশের হয়ে ইতিহাস তৈরি করে ফেললেন, তাঁর অ্যাথলেটিক্সে আসা নিতান্তই কাকতালীয় ভাবে। ছোট থেকে নীরজের এক এবং একমাত্র দুর্বলতা ছিল খাবার। যে কোনও খাবার দেখলেই হামলে পড়তেন তিনি। পছন্দ ছিল তাজা ক্রিম এবং চুরমা (রুটি, ঘি এবং চিনি দিয়ে বানানো এক ধরনের পঞ্জাবি পদ)।
খাবারের প্রতি নীরজের এই টানে ইন্ধন দিতেন তাঁর ঠাকুমা। সুযোগ পেলেই নাতিকে চুরমা বানিয়ে খাওয়াতেন। ঠাকুমার প্রশ্রয় পেয়ে অতি অল্প বয়সেই নাদুস-নুদুস গোলগাল চেহারার হয়ে পড়েছিলেন নীরজ। ১২ বছরে তাঁর ওজন দাঁড়ায় ৯০ কেজির বেশি। ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছিলেন ওবেসিটির দিকে।
What a brilliant start from Neeraj Chopra in #JavelinThrow . Announces his arrival in grand style. Qualifies for the final in his first throw finishing top in his group. Absolutely brilliant . pic.twitter.com/BX7oRFuUng
— Virender Sehwag (@virendersehwag) August 4, 2021
Watch: This is how #NeerajChopra, India's finest javelin thrower, trains for his sport. Watching this, we would never have guessed that he once had to battle severe obesity!
— The Better India (@thebetterindia) August 4, 2021
Read his inspiring story here:https://t.co/RdJb4GSVBh
VC: Neeraj Chopra pic.twitter.com/pO2T6jhCoz
বাধ্য হয়ে তাঁর ওজন কমানোর লক্ষ্যে বাবা-মা জোর করে মাঠে পাঠাতে থাকেন। হরিয়ানার পানিপথ জেলার খান্দরা গ্রামে জন্ম নীরজের। বাড়ির পাশেই শিবাজি স্টেডিয়ামে রোজ সকালে জগিং করতে যেতেন তিনি। সেখানেই পরিচয় হয় প্রাক্তন জ্যাভলিন থ্রোয়ার জয় চৌধুরির সঙ্গে।
জয়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে পর্যন্ত নীরজ জানতেনই না জ্যাভলিন কী জিনিস। একদিন খেলাচ্ছলেই তাঁকে জ্যাভলিন ছুড়তে বলেছিলেন জয়। প্রথম প্রচেষ্টাতেই প্রায় ৪০ মিটার দূরে ছুড়েছিলেন নীরজ। প্রথম বার দেখেই জয় বুঝেছিলেন নীরজের ওজন বেশি থাকলেও শরীরের নমনীয়তা রয়েছে।
এরপর থেকেই ধীরে ধীরে জ্যাভলিন নীরজের জীবনের একটা অঙ্গ হয়ে ওঠে। তাঁর ওজনও ক্রমশ কমতে থাকে। চণ্ডীগড়ের ডিএভি কলেজে পড়াকালীন নিজের খেলাধুলোকে শীর্ষস্তরে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন নীরজ। অংশগ্রহণ করতে শুরু করেন বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায়। ততদিনে নীরজ হয়ে উঠেছেন সুঠামদেহী। পেটানো চেহারা দেখলে মেলানো যাবে না ছোটবেলার সঙ্গে।
২০১৪-য় দক্ষিণ এশীয় গেমসে ৮২.২৩ মিটার ছুড়ে জাতীয় রেকর্ড স্পর্শ করেন। তখন সেই রেকর্ডকে কেউ পাত্তা দেননি। তবে নীরজ নজর কেড়ে নেন সে বছরই পোলান্ডের বিডগজে অনুষ্ঠিত হওয়া আইএএএফ বিশ্ব অনূর্ধ্ব-২০ প্রতিযোগিতায়। ৮৬.৪৮ মিটার ছুড়ে জিতে নেন সোনা। তৈরি করেন বিশ্ব জুনিয়র রেকর্ড। এর আগে এই প্রতিযোগিতায় কোনও ভারতীয় পদক জেতেননি।
এর পরের বছর এশীয় অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ৮৫.২৩ মিটার ছুড়ে সোনা জেতেন নীরজ। ২০১৮ কমনওয়েলথ গেমসে ৮৬.৪৭ মিটার ছুড়ে সোনা জেতেন। কমনওয়েলথ গেমসের অভিষেকেই পদক পেয়েছিলেন তিনি। সে বছরই দোহা ডায়মন্ড লিগে ৮৭.৪৩ মিটার ছুড়ে নিজেরই জাতীয় রেকর্ড ভেঙে দেন। ৮৮.০৬ মিটার ছুড়ে এশিয়ান গেমসেও সোনা জিতেছিলেন তিনি।
২০১৯ সালটা নীরজের পক্ষে খুব একটা ভাল যায়নি। কনুইয়ের চোট পান। সেই চোট সারাতে গিয়ে বছরভর প্রায় কোনও প্রতিযোগিতাতেই অংশগ্রহণ করতে পারেননি। ২০২০-তে অতিমারি পর্বে গোটা বিশ্বেই খেলাধুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
নীরজের উত্থানের পিছনে রয়েছেন গ্যারি কালভার্ট। নীরজের ছোটখাটো ভুলত্রুটি, খুঁটিনাটি শুধরে দিয়েছিলেন তিনি। ২০১৮ সালে হৃদরোগে আচমকাই তিনি প্রয়াত হওয়ার পরে বিখ্যাত জার্মান কোচ উয়ে হনের কাছে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন নীরজ। এখন তিনি আর এক জার্মান কোচ ক্লস বার্তোনিয়েৎজের কাছে অনুশীলন করেন।