(বাঁ দিকে) উইম্বলডন ট্রফি হাতে কার্লোস আলকারাজ়। ইউরো জিতে উল্লাস ইয়ামালদের (ডান দিকে)। ছবি: রয়টার্স।
মাঝে দূরত্ব ১১০০ কিলোমিটার। রবিবার ভারতীয় সময় রাত ৯টায় লন্ডনে উইম্বলডন জিতলেন কার্লোস আলকারাজ়। নোভাক জোকোভিচকে স্ট্রেট সেটে হারালেন তিনি। ঠিক সাড়ে ৫ ঘণ্টা পরে জার্মানির বার্লিনে ইউরো কাপ জিতল স্পেন। ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারাল তারা। রবিবার রাত স্পেনময়। টেনিস ও ফুটবলে সেরার শিরোপা উঠল তাদের মাথায়। জোড়া আনন্দে মাতলেন সমর্থকেরা।
রবিবার রাত স্পেনময় করার ডাক দিয়েছিলেন আলকারাজ়। উইম্বলডনের সেমিফাইনালে ড্যানিল মেদভেদেভকে হারিয়ে তিনি বলেছিলেন, “স্পেনীয় হিসাবে বলতে পারি, রবিবার স্পেনের জন্য আদর্শ দিন হতে পারে। সন্ধ্যায় আমার ফাইনাল। রাতে ইউরোর ফাইনাল। স্পেনের মানুষেরা দুটো খেলা দেখতে পাবেন। যদি দুটো ম্যাচই আমরা জিতি তা হলে সবচেয়ে ভাল হবে। স্পেনময় হবে রবিবার। স্পেনীয় হিসাবে এর থেকে ভাল আর কী হতে পারে।” টেনিস খেললেও ফুটবল খুব ভালবাসেন আলকারাজ়। উইম্বলডনে খেলার মাঝেই স্পেনের ফুটবল দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন তিনি। আলকারাজ় বলেছিলেন, “কয়েক জন ফুটবলারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছি। স্পেন এ বার খুব ভাল ফুটবল খেলছে। ওদের শুভেচ্ছা জানিয়েছি। আশা করি, এ বার ইউরো জিতব আমরা।”
রবিবার উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরেও আলকারাজ়ের কথায় উঠে এসেছিল ইউরো ফাইনালের প্রসঙ্গ। তিনি জানান, নিজে উইম্বলডন জেতার পাশাপাশি স্পেন ইউরো জিতুক, সেটিই স্বপ্ন তাঁর। প্রথমটি পূর্ণ হয়েছে। বাকি পরেরটা। আলকারাজ় বলেন, “আমি জিতেছি। আশা করি স্পেনও ইউরো জিতবে। আমি খেলা দেখব।”
স্পেনের খেলা দেখেছেন আলকারাজ়। দল প্রথম গোল করার পরে সমাজমাধ্যমে উল্লাসও করেছেন তিনি। আলকারাজ়ের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে স্পেন। গ্রুপ লিগ থেকে ফাইনাল পর্যন্ত সাতটি ম্যাচই জিতেছেন লা রোজ়ারা। বিশেষজ্ঞেরা বলেছেন, এ বারের ইউরোয় সবচেয়ে ভাল ফুটবল খেলেছে স্পেন। আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছেন দলের তরুণ ফুটবলারেরা। জেতার জন্য নেমেছেন। জিতে মাঠ ছেড়েছেন।
উইম্বলডন ও ইউরোর দুই ফাইনালেই দাপট দেখিয়েছে স্পেন। উইম্বলডনে নিজের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা শুরু করেছেন আলকারাজ়। ২৪ গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিকের বিরুদ্ধে যে খেলা তিনি খেলেছেন তা দেখে অবাক বিশেষজ্ঞেরা। অবাক হয়েছেন জোকোভিচও। ম্যাচের মাঝে হাততালি দিয়েছেন। আলকারাজ়কে এক বারও দেখে মনে হয়নি যে তিনি জোকোভিচের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে খেলছেন। পাওয়ার গেমের পাশাপাশি দেখা গিয়েছে শিল্প। রজার ফেডেরার ও রাফায়েল নাদাল, দু’জনের খেলা দেখা গিয়েছে তাঁর র্যাকেটে। ডাউন দ্য লাইনে যেমন জোরালো ফোরহ্যান্ড খেলেছেন, তেমনই বেসলাইন থেকে মেরেছেন নিখুঁত ড্রপশট। তাঁর আক্রমণের কোনও জবাব ছিল না জোকোভিচের কাছে। কনিষ্ঠতম টেনিস খেলোয়াড় হিসাবে একই বছর ফরাসি ওপেন ও উইম্বলডন জেতার রেকর্ড করেছেন তিনি।
ইউরোর ফাইনালে স্পেন দেখাল, আক্রমণাত্মক ফুটবল কাকে বলে। প্রথম মিনিট থেকে ৯০ মিনিট পর্যন্ত সমান গতিতে খেলল তারা। ইংল্যান্ড রক্ষণাত্মক ফুটবলের পরিকল্পনা করে প্রথমার্ধে তাদের আটকে রাখলেও দ্বিতীয়ার্ধে পারল না। দুই প্রান্ত ধরে লাগাতার আক্রমণ খুলে দিল গোলের দরজা। ইংল্যান্ড সমতা ফেরানোর পরেও স্পেনের আক্রমণ কমেনি। এক বার অতিরিক্ত সময় বা টাইব্রেকারের কথা ভাবেনি তারা। ৯০ মিনিটে খেলা শেষ করতে চেয়েছে। সেটাই করেছে। দলগত ফুটবল খেলেছে স্পেন। এই জয়ে দলের প্রত্যেক ফুটবলারের সমান অবদান রয়েছে। ১৬ বছরের লেমিনে ইয়ামাল প্রতিযোগিতার সেরা ইমার্জিং ফুটবলার হয়েছেন। প্রতিযোগিতার সেরা ফুটবলার হয়েছেন স্পেনেরই রদ্রি। নিকো উইলিয়ামস, ড্যানি অলমো, পেদ্রির মতো তরুণ ফুটবলারেরাও দেখিয়েছেন, কী ভাবে ইউরোপের ফুটবল শাসন করতে হয়। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দু’বার দেশের মানুষকে আনন্দ দিয়েছেন তাঁরা। রবিবার রাত নিজেদের করে নিয়েছে স্পেন।