মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। ফাইল ছবি
মাত্র চার মিনিট সাত সেকেন্ডের একটি ভিডিয়ো। সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বার্তা, ‘এতদিন ধরে আপনাদের ভালবাসা এবং সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ। ৭.২৯ মিনিট থেকে আমাকে অবসরপ্রাপ্ত হিসেবে ধরে নিন’।
ঠিক এক বছর আগে স্বাধীনতা দিবসের এক সন্ধেয় ইনস্টাগ্রামে এই একটি পোস্টেই যবনিকা পতন হয়ে গিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অধ্যায়ের। চির ইতি পড়ে গিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেটে অন্যতম সেরা বর্ণময় চরিত্রের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটজীবনে। হাসতে হাসতে দেশের জার্সি তুলে রেখেছিলেন তিনি — মহেন্দ্র সিংহ ধোনি।
একটি বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু অনুরাগীদের হৃদয়ে তিনি এখনও বিরাজ করছেন স্বমহিমায়। আইপিএল ছাড়া তাঁকে অন্য কোনও ক্রিকেটে দেখা যায় না ঠিকই, কিন্তু ক্রিকেট তাঁকে ভোলেনি। এখনও বিরাট কোহলীর প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি ভুল, প্রতিটি পদক্ষেপে তাঁর সঙ্গে ধোনির তুলনা হয়। চেন্নাই হোক বা দুবাই, হলুদ জার্সি পরে তিনি নামলে এখনও উদ্বেল হয় গোটা দেশ। বিমানবন্দরে এক ঝলক দেখা পেলে এখনও তীব্র হয় ‘ধোনি, ধোনি’ চিৎকার। তাঁর প্রতিটি চুলের ছাঁট, মেয়ের সঙ্গে খুনসুটি, খামারবাড়িতে চাষাবাদ, মুরগির ব্যবসা— সব কিছুই উঠে আসে শিরোনামে। এখানেই তিনি ব্যতিক্রমী। এখনও।
অবসরের পর এ ভাবে কতজন ক্রিকেটারকে মনে রাখে একটা দেশ? অবসরের পর ধোনি এমন কিছুই করেননি যার জন্যে তাঁকে নিয়ে এত চর্চা হবে। অনেকেই বিজ্ঞাপন এবং বিভিন্ন প্রচারে নিজেকে যুক্ত রাখেন। ধোনি সে সব থেকে শত যোজন দূরে। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামে দূরবীন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় না তাঁকে। অবসরের সেই ভিডিয়োর পরে ইনস্টাগ্রামে মাত্র একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন তিনি। সেটাও নিজের খামারবাড়িতে স্ট্রবেরি খাওয়ার। টুইটারে তিনি এতটাই ‘নিষ্ক্রিয়’ যে কিছুদিন আগে তাঁর নামের পাশ থেকে ‘ব্লু টিক’ সরিয়ে নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভুল স্বীকার করে তা ‘ফেরত’ দেওয়া হয়।
Leader. Legend. Inspiration. 🙌#OnThisDay last year, #TeamIndia great @msdhoni announced his retirement from international cricket. pic.twitter.com/0R1LZ2IZyu
— BCCI (@BCCI) August 15, 2021
💬 "From 1929 hrs consider me as Retired"#OnThisDay in 2020, MS Dhoni bid adieu to international cricket 🙌
— ICC (@ICC) August 15, 2021
📽️ Watch the legends of the game decipher what made MSD such a special player and leader.pic.twitter.com/BoXdR99412
সরকারি ভাবে ধোনির অবসরের বয়স হয়তো এক বছর পূর্ণ করল। কিন্তু আসলে তিনি অবসর নিয়েছিলেন আরও বছর খানেক আগে। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে সেই রান আউট কি আজও কেউ ভুলতে পেরেছে? মার্টিন গাপ্টিলের ওই একটি থ্রো শুধু ধোনিকে সাজঘরে ফেরায়নি, কোটি কোটি ভারতীয় সমর্থকদের হৃদয়ও ভেঙে দিয়েছিল। মাথা নাড়তে নাড়তে তিনি যখন সাজঘরে ফিরছিলেন তখন কে জানতে সেটাই দেশের জার্সিতে তাঁর শেষ ম্যাচ হতে চলেছে? ওই একটি বার ধোনির চোখে দেখা গিয়েছিল জল। বরফশীতল মস্তিষ্কও হার মেনে ছিল আবেগের কাছে। কেঁদেছিল ভারত। কেঁদেছিল গোটা বিশ্ব। ধোনি বুঝিয়েছিলেন তিনি ব্যতিক্রমী নন।
ক্যামেরা থেকে তিনি বরাবর দূরে থাকতে ভালবাসেন। কিন্তু ক্যামেরা তাঁর পিছনে বরাবর তাড়া করে। কখনও নেড়া মাথায় তাঁর বিজ্ঞাপনী শুটিংয়ের ছবি পোস্ট করে দিচ্ছেন সমর্থকরা, কখনও বিমানবন্দরে ঘুমিয়ে থাকার ছবি পোস্ট করে দিচ্ছেন স্ত্রী সাক্ষী। ভাগ্যিস সামাজিক মাধ্যম থেকে শত হাত দূরে থাকেন ধোনি। না হলে এতদিনে ‘ভাইরাল’-এর দৌড়ে অনেক মহারথীকেই শত যোজন পিছনে ফেলে দিতেন তিনি। কারণ তিনি যা-ই করেন সেটাই ভাইরাল। বাগানের ঘাস কাটা থেকে চুলের ছাঁট, ধোনির ছবি মানেই সুপারহিট।
পরের মাস থেকেই শুরু হতে চলেছে আইপিএল। যতই ঈশান কিশন, ঋষভ পন্থ, শ্রেয়স আয়ারদের মতো তরুণরা দাপান, ‘ভিন্টেজ’ ধোনির জনপ্রিয়তা এক বিন্দুও কমেনি। সরকারি ভাবে যতই অবসর নিন, যতই তাঁর এক বছর পূর্তি হোক, ভক্তদের হৃদয়ে ধোনি চিরকালীন। সেখান থেকে চেষ্টা করলেও ছুটি মিলবে না।