আকর্ষণ: বিরাট বিক্রম দেখার অপেক্ষায় ভক্তেরা। —ফাইল চিত্র।
গুজরাত কলেজের মাঠে অনুশীলন করার কথা ছিল রাজস্থান রয়্যালস এবং রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর। সঞ্জু স্যামসনরা এলেও দেখা গেল না বিরাট কোহলিদের।
পুলিশ সূত্রে জানানো হয়, সোমবার রাতে আমদাবাদ বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে চার জন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে। সেই আতঙ্কেই নাকি এ দিন আরসিবি অনুশীলন বাতিল করে। আরসিবি শিবির থেকে যদিও এ বিষয়ে কোনও সরকারি প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি। আমদাবাদের ৪৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা থেকে বাঁচতেই নাকি এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে গুজরাত পুলিশের কেউ কেউ এবং গুজরাত ক্রিকেট সংস্থার কর্তাদের অনেকে মনে করছেন, বিরাট কোহলিকে নিরাপত্তার ঘেরাটোপে রাখতেই নাকি এই সিদ্ধান্ত নেয় আরসিবি। ফ্যাফ ডুপ্লেসিদের বাড়তি বিশ্রাম নেওয়ার কারণ খুব একটা নেই। তাঁরা শেষ ম্যাচ খেলেছেন শনিবার। রবিবার বেঙ্গালুরুতেই বিশ্রাম নিয়েছেন। দল রবিবার পৌঁছায় আমদাবাদে। সোমবার তা হলে কেন কোহলিরা অনুশীলন করলেন না, এ বিষয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
তবে আরসিবি দল বিশ্রাম নেওয়ায় আমদাবাদ পুলিশের অনেকেই হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। পুলিশকর্মী বিজয়সিংহ জি জ়ালা বলছিলেন, ‘‘বিরাট এখানে আসার পরে জানতে পারে এমন ঘটনা ঘটেছে। ওকে সুরক্ষা দেওয়া আমাদের কর্তব্য। বিরাট দেশের সম্পদ।’’ যোগ করেন, ‘‘আরসিবির তরফ থেকে তাই জানিয়ে দেওয়া হয়, এ দিন তারা আর অনুশীলন করছে না। রাজস্থান রয়্যালস শিবিরও বিষয়টি জানত। কিন্তু ওদের অনুশীলন করতে কোনও সমস্যা ছিল না।’’
সন্দেহজনক জঙ্গি হিসেবে যাঁরা গ্রেফতার হয়েছেন, অনুমান করা হচ্ছে তাঁরা ‘আইএসআইএস’ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ধৃতদের কাছে এমন কিছু ভিডিয়ো এবং টেক্সট মেসেজ পাওয়া গিয়েছে যেখানে সেই সংগঠনের প্রধানের প্রসঙ্গ রয়েছে। তাতে সন্দেহ করা হচ্ছে যে, ধৃতরা জঙ্গি সংগঠনের অন্যতম সদস্য। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, অভিযুক্তেরা যাচ্ছিল আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ করতে কোনও এক গোপন ডেরায়। সেখানে তল্লাশি করে অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে। বিজয়সিংহ বলছিলেন, ‘‘গুজরাত পুলিশের সক্রিয়তার বড় বিপদ থেকে বাঁচল এই শহর।’’
আরসিবি টিম হোটেলের সামনে গিয়ে দেখা গেল, প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিরাটদের হোটেলে প্রবেশ করার দরজা সম্পূর্ণ আলাদা। সেই দরজা দিয়ে সাধারণ মানুষের যাতায়াত বন্ধ। আইপিএল অনুমোদিত কার্ড থাকা সত্ত্বেও প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না দলের বাইরের কোনও ব্যক্তিকে।
রাজস্থান রয়্যালসকেও ‘গ্রিন করিডোর’ করে নিয়ে আসা হয় মাঠে। পুলিশের তিনটি কনভয় ছিল সামনে। একটি পেছনে। রাজস্থানের অনুশীলনের সময় মাঠের চারপাশে ছড়িয়ে যান পুলিশকর্মীরা। যদিও অনুশীলনে না এসে আর. অশ্বিন, যুজ়বেন্দ্র চহাল, ট্রেন্ট বোল্ট, রিয়ান পরাগরা হোটেলে বিশ্রাম নেন। দেরিতে মাঠে আসেন অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন। কিন্তু নিরাপত্তার ঘেরাটোপ এতটাই যে, সাংবাদিক বৈঠক করার ঝুঁকিও নেওয়া হল না।
শেষ চারটি ম্যাচ হেরে বেশ চাপে সঞ্জুর দল। অন্য দিকে ফ্যাফ ডুপ্লেসিরা টানা ছ’টি ম্যাচ জিতে তরতাজা। কিন্তু রাজস্থানের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর খিদে লক্ষ্য করা গেল মঙ্গলবারের অনুশীলনে। যশস্বী জয়সওয়াল ভাল ছন্দে নেই। তাঁকে আলাদা ডেকে নিয়ে একটি নেটে এক ঘণ্টা ব্যাট করান কোচ কুমার সঙ্গকারা। টম ক্যাডমোর প্রায় দেড় ঘণ্টা ছক্কার অনুশীলন করেন। তাঁর সঙ্গে যোগ দেন শিমরন হেটমায়ার ও রভম্যান পাওয়েল। গুজরাত ক্রিকেট সংস্থার কলেজ মাঠে প্রায় আটটি বল হারিয়ে দেন এই তিন ব্যক্তি। বাগানের এমন কয়েকটি জায়গায় বল উড়ে গিয়ে পড়ে যেখানে যাওয়ার সাহস পাচ্ছিলেন না উপস্থিত বলবয়রা। কলেজের নিরাপত্তারক্ষীরা সাবধান করে বলেন, ‘‘ঘন জঙ্গল। সাপ থাকতে পারে।’’ তা শুনে সঞ্জু নিজেই সেই বলবয়দের নিষেধ করেন বল খুঁজতে যেতে। অনুশীলন শেষে খুদে বলবয়দের সঙ্গে ছবিও তোলেন তিনি। আতঙ্কের আবহের মাঝে এই মুহূর্ত হাসি ফুটিয়ে তোলে উপস্থিত পুলিশকর্মীদের মুখেও।
আইপিএল মানেই জাঁকজমক, আইপিএল মানেই তারকাদের ভিড়। কিন্তু এই প্রতিযোগিতার মাঝে চার জন সন্দেহভাজন ব্যক্তি যে আতঙ্ক তৈরি করবেন, তা কেউ আশা করেননি। আমদাবাদ শহরের সকলেই চেয়েছিলেন, প্লে-অফ উৎসবে মেতে উঠতে। কিন্তু জঙ্গিহানার আতঙ্ক অনেকের কপালেই ভাঁজ ফেলেছে। কিন্তু উপস্থিত পুলিশকর্মীদের তৎপরতার কারণেই নতুন করে বড় কোনও বিপদের আশঙ্কা আর দেখছে না রাজ্য প্রশাসন।