গুজরাতের বিরুদ্ধে ৫ উইকেট নেওয়া যশ ঠাকুরের উল্লাস। ছবি: এক্স।
মায়াঙ্ক যাদবের অভাব বুঝতে দেননি যশ ঠাকুর। গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে ৩০ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। চলতি আইপিএলে এটিই প্রথম ৫ উইকেটের নজির। তাঁর দাপটে জিতেছে লখনউ সুপার জায়ান্টস। অথচ এই যশ নাকি ছোটবেলায় পেসার হতেই চাননি। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভক্ত যশ চেয়েছিলেন উইকেটরক্ষক হতে।
১৯৯৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর কলকাতায় জন্ম যশের। ছোটবেলা কেটেছিল এই শহরেই। ক্রিকেটের হাতেখড়িও কলকাতায়। পরে কাজের সূত্রে যশের বাবা চলে যান মুম্বই। সেখানে গিয়েও ক্রিকেট ছাড়েননি যশ। বিদর্ভের হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা শুরু করেন তিনি। তাঁর আদর্শ ছিলেন ধোনি। যশও চেয়েছিলেন উইকেটরক্ষক হতে। যদিও হাতের জোর বাড়াতে নেটে বোলিং করতেন তিনি। বিদর্ভের প্রাক্তন অধিনায়ক ও কোচ প্রবীণ হিঙ্গনিকরের চোখে পড়েন যশ। তাঁর বোলিং দেখে যশকে পেসার হওয়ার পরামর্শ দেন প্রবীণ।
উইকেটরক্ষক থেকে হঠাৎ বোলার হওয়া সহজ ছিল না। সেই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন প্রবীণ। তাঁর কোচিংয়েই ধীরে ধীরে পেসার হয়ে ওঠেন যশ। এখনও পর্যন্ত বিদর্ভের হয়ে ২২টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন ২৫ বছরের এই বোলার। নিয়েছেন ৬৭টি উইকেট। ৩৭টি লিস্ট এ ম্যাচে নিয়েছেন ৫৪টি উইকেট। ৪৯টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচও খেলেছেন তিনি। ৭৪টি উইকেট নিয়েছেন যশ। আগে ধোনিকে দেখে শিখলেও পেসার হওয়ার পরে উমেশ যাদবকে নিজের আদর্শ মনে করেন যশ। উমেশও বিদর্ভের হয়ে খেলেন। ঘটনাচক্রে, রবিবার উমেশের দল গুজরাতের বিরুদ্ধেই ৫ উইকেট নিয়েছেন যশ।
২০২৩ সালের নিলামে যশকে ৪৫ লক্ষ টাকায় কিনেছিল লখনউ। গম্ভীর তাঁকে ঘরোয়া ক্রিকেটে দেখেছিলেন। লখনউয়ের প্রাক্তন মেন্টরের পরামর্শেই নেওয়া হয়েছিল তাঁকে। গত মরসুমে লখনউয়ের হয়ে ন’টি ম্যাচ খেলেছিলেন যশ। ওভার প্রতি ৯.০৮ রান দিয়ে ১৩টি উইকেট নিয়েছিলেন। এ বার ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসাবে খেলানো হচ্ছে তাঁকে। তিনটি ম্যাচ খেলেছেন। নিয়েছেন ৬টি উইকেট।
লখনউয়ের উইকেট বাকি সব মাঠের থেকে কিছুটা আলাদা। গতির হেরফের করলে এই মাঠে খেলা কঠিন। কোনও বল অতিরিক্ত লাফায়। আবার কোনও বল থমকে আসে। গুজরাতের বিরুদ্ধে উইকেট কাজে লাগিয়ে খুব ভাল বল করেছেন যশ। বাউন্সারের ব্যবহার খুব ভাল করেছেন। তাতেই সমস্যায় পড়েছে গুজরাত।
যশকে এই ম্যাচে বাড়তি দায়িত্ব দিয়েছিলেন অধিনায়ক লোকেশ রাহুল। ম্যাচ শেষে সে কথা জানিয়েছেন ডান হাতি পেসার। তিনি বলেন, “মায়াঙ্ক চোট পেয়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরে রাহুল ভাই বলেছিল, এটা তোমার দিন। বল হাতে দলকে জেতাও। শুধু নিজের উপর ভরসা রাখো। নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী বল করো। সেটাই করেছি। এই প্রথম গুজরাতকে হারিয়েছি আমরা। তাই এই জয় আরও ভাল লাগছে।”
আইপিএল তারকাদের জন্ম দেয়। এই প্রতিযোগিতা থেকেই যশপ্রীত বুমরা, হার্দিক পাণ্ড্য, শুভমন গিল, রিঙ্কু সিংহদের পেয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট। এই প্রতিযোগিতায় নজর কাড়ছেন যশ। ধোনির ভক্ত, যিনি এক সময় গ্লাভস পরে উইকেটের পিছনে দাঁড়াতেন, তিনি ধীরে ধীরে ঢুকে পড়ছেন দেশের ভাল পেসারদের তালিকায়।