একাগ্র: নাইটদের অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেছেন সুযশ। নিজস্ব চিত্র।
বাবা দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত। দিল্লির অনূর্ধ্ব-২৫ দলের ট্রায়ালে যাওয়ার আগেই জানতে পারেন সেই খবর। মাত্র ১৯ বছর বয়সে পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন তিনি। এখনও পর্যন্ত রঞ্জি ট্রফির একটি ম্যাচ না খেলেই কলকাতা নাইট রাইডার্সের মতো শক্তিশালী দলের স্পিন-অস্ত্র হয়ে উঠেছেন। তিনি সুযশ শর্মা।
বৃহস্পতিবার রাজস্থান রয়্যালসের বিরুদ্ধে মরণ-বাঁচন ম্যাচ নাইটদের। এই ম্যাচ জিততে না পারলে প্লে-অফের দৌড় থেকে ছিটকে যাবে কেকেআর। মরসুমের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগের দিন আনন্দবাজারকে সুযশ শর্মা বলছিলেন, ‘‘আমার হাতে এখনও দু’টো গোপন অস্ত্র আছে। শুধুমাত্র লেগস্পিন ও গুগলিই নয়, এমন দু’টি ডেলিভারি জানি তাতে উপকৃত হতে পারে যে কোনও দল।’’ যোগ করেন, ‘‘আপাতত কেকেআরের একাদশে নিজের জায়গা পাকা করার চেষ্টা করছি। সেই সঙ্গে আইপিএলেও নিজের পরিচিতি বাড়াচ্ছি। যখন বুঝব আমাকে বাদ দেওয়ার সম্ভাবনা কম, তখন থেকে আরও বৈচিত্র ব্যবহার করা শুরু করব। তবে এখন আমার শক্তি অবশ্যই গুগলি। মাঝে মধ্যে লেংথের সমস্যা হচ্ছে। সেটা মেরামত করার চেষ্টা করছি।’’
কেকেআর শিবিরে সুনীল নারাইন, সিভি বরুণের মতো স্পিনার থাকা সত্ত্বেও অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেছেন সুযশ। পঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে স্লগ ওভারেও বল করতে হয়েছে তাঁকে। নাইটরা বরাবরই রহস্য স্পিনার তুলে আনতে পছন্দ করে। কিন্তু তিনি নিজেকে রহস্য স্পিনার হিসেবে দেখেন না। তবে নারাইন ও বরুণের সংস্পর্শে বেশ কিছু নতুন ডেলিভারি রপ্ত করে ফেলেছেন উদীয়মান তরুণ। সুযশের কথায়, ‘‘এত সিনিয়র বোলার হলেও নারাইন আমাকে নিজের ভাইয়ের মতো দেখে। যে কোনও বিষয়ে কথা বলা যায়। কাকে কোন জায়গায় বল করলে সমস্যায় পড়তে পারে, তা শেখার চেষ্টা করি। বরুণ ভাইও আমার দাদার মতো। এখনও পর্যন্ত ওর মুখে বিরক্তি দেখিনি। তাদের মতো ক্রিকেটারদের সঙ্গে থেকে বেশ কিছু নতুন ডেলিভারির বিষয়ে জানতে পেরেছি। ম্যাচে তার প্রয়োগ করার চেষ্টা করছি।’’
শেষ তিনটি ম্যাচ টানা জেতার পরীক্ষা নাইটদের। কিন্তু সুযশ জানিয়েছেন, ড্রেসিংরুমে সেই চিন্তা একেবারেই নেই। সকলে ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই অনুশীলন করছেন। প্লে-অফ নিয়ে আলোচনাই হচ্ছে না। সুযশ বলছিলেন, ‘‘সব ম্যাচ জেতার তাগিদ সকলের মধ্যে আছে। প্রত্যেকে মরিয়া। কিন্তু এক বারে তিনটি ম্যাচ নিয়ে আমরা ভাবছি না। প্রত্যেক প্রতিপক্ষ আলাদা। বিপক্ষ বুঝে পরিকল্পনা তৈরি করতে হচ্ছে। একটি করে ম্যাচ হিসেবে এগোতে চায় দল। এখন থেকেই প্লে-অফ নিয়ে ভেবে চাপ বাড়াতে চাই না।’’
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে ম্যাচ দেখতে মাঠে এসেছিলেন শাহরুখ খান ও জুহি চাওলা। তখন সুযশ এতটা পরিচিতি পাননি। অনামী স্পিনার হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন শাহরুখের কাছে। কী হয় তার পরে? সুযশের উত্তর, ‘‘আমার নাম ধরে ডাকলেন। আমি তো অবাক। ভাবতেই পারিনি শাহরুখ খানকে কখনও সামনে থেকে দেখব। তিনি আমার নামও জানেন! বিশ্বাস করুন, কল্পনাও করতে পারছিলাম না। ড্রেসিংরুমে এমন ভাবে কথা বললেন, যেন বহু বছর ধরে চেনেন।’’
নাইটদের বিপক্ষে জস বাটলার, যশস্বী জয়সওয়ালদের মতো ব্যাটসম্যানেরা থাকলেও ভয় পাচ্ছেন না সুযশ। তাঁর কথায়, ‘‘আমার যা শক্তি, তাতেই মনোনিবেশ করব। এক দিনে নতুন কিছু শিখে তা ম্যাচে প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। আশা করি, তাতেই সাফল্য আসবে।’’
নীরজ চোপড়ার মতো চুলের কায়দা কেকেআর ভক্তদের মন ভোলালেও ব্যাটসম্যানেরা তাঁর ঘূর্ণির আতঙ্কেই থাকেন।