নীতীশ রানা বলেছিলেন, ইডেনে ঘরের মাঠের সুবিধা পাচ্ছেন না তাঁরা। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
শনিবার ইডেনে লখনউ সুপার জায়ান্টসের বিরুদ্ধে নামছে কলকাতা নাইট রাইডার্স। আইপিএলের প্লে-অফে ওঠার ক্ষেত্রে কেকেআরের কাছে এটি মরণ-বাঁচন ম্যাচ। আগের ম্যাচে চেন্নাই সুপার কিংসকে তাদের ঘরের মাঠে হারিয়ে অসাধ্যসাধন করেছে কলকাতা। তার পরেই অধিনায়ক নীতীশ রানা বলেছিলেন, ইডেনে ঘরের মাঠের সুবিধা পাচ্ছেন না তাঁরা। কারণ, তাঁদের পছন্দের উইকেট দেওয়া হচ্ছে না ইডেনে। এই নিয়ে কেকেআর এবং বঙ্গ ক্রিকেট দুই মেরুতে।
নীতীশের অভিযোগ, সব দল নিজেদের সুবিধা মতো পিচ বানাচ্ছে ঘরের মাঠে, একমাত্র তাঁরাই পারছেন না। এই নিয়ে ইডেনের পিচ প্রস্তুতকারক সুজন মুখোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। সুজন পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, কোনও দলের কথা শুনে পিচ তৈরি করতে বাধ্য নন তিনি। সুজন বললেন, “কে কী বলল তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। আমার যথেষ্ট বয়স হয়েছে, আমি জানি কী ভাবে পিচ বানাতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী কাজ করেছি। কারও কথা শুনতে বাধ্য নই।”
নাইটদের দলে একাধিক স্পিনার। সুনীল নারাইন, বরুণ চক্রবর্তী, সুযশ শর্মা, অনুকূল রায় রয়েছেন। নীতীশ নিজেও প্রয়োজনে স্পিন বল করেন। এমন স্পিনার সমৃদ্ধ দল ইডেনে পাচ্ছে পেস সহায়ক উইকেট। তাতেই বিরক্ত নাইট অধিনায়ক। ২০১২ এবং ২০১৪ সালে আইপিএল জিতেছিল কলকাতা। সেই সময় ইডেনের উইকেট ছিল অনেকটাই স্পিন সহায়ক। দীর্ঘ দিন বাংলার হয়ে খেলা অনুষ্টুপ মজুমদার জানালেন, ইডেনের পিচ এখন অনেকটাই বদলে গিয়েছে। প্রায় ২০ বছর ধরে বাংলার ব্যাটিং ভরসা অনুষ্টুপ আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন, “ইডেনে গত সাত-আট বছর ধরেই পেস সহায়ক উইকেট। রঞ্জির সময় ইডেনের পিচ তৈরির দায়িত্ব থাকে বোর্ডের কিউরেটরের হাতে। সেখানে ঘরের দল কী বলছে সেটা মেনে পিচ তৈরি করা হয় না। নিরপেক্ষ কিউরেটর ঠিক করেন কেমন পিচ তৈরি করবেন। তবে এ বারের রঞ্জিতে আমরা পেস সহায়ক পিচই পেয়েছিলাম।”
২০১২ এবং ২০১৪ সালে কেকেআর দল স্পিনার সমৃদ্ধ ছিল। বিপক্ষকে ১৫০ থেকে ১৬০ রানের মধ্যে আটকে রেখে রান তুলে নিত নাইটরা। ২০১২ সালে নারাইন ছিলেন। ক্যারিবিয়ান স্পিনারের সঙ্গে ছিলেন ইউসুফ পাঠান, শাকিব আল হাসান, ইকবাল আবদুল্লা। ২০১৪ সালে কেকেআরের স্পিন বিভাগ সামলাতেন নারাইন, পীযূষ চাওলা, কুলদীপ যাদব, ইউসুফ, শাকিব। স্পিনের এমন ফাঁস তৈরি করতেন তাঁরা যে, বিপক্ষের ব্যাটারদের নাভিশ্বাস উঠত ইডেনের পিচে খেলতে গেলে। এখন আর সেটা হয় না। পেস সহায়ক পিচে নারাইনরা তেমন সুবিধা করতে পারছেন না। কেকেআর ঘরের মাঠে এখনও পর্যন্ত ছ’টি ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে চারটি ম্যাচেই হেরে গিয়েছে তারা।
স্পিনের ইতিহাস পাল্টে ইডেনে এখন রানের ফোয়ারা। ব্যাটাররা অনেক বেশি সুবিধা পাচ্ছেন। এ বারের আইপিএলে ইডেনে দু’টি ম্যাচে কলকাতার বিপক্ষ দল ২০০-র উপর রান তুলেছে। একটি ম্যাচে ১৮০ রান তাড়া করে গুজরাত টাইটান্স ১৩ বল বাকি থাকতে ৭ উইকেটে জিতেছে। রঞ্জিতেও ইডেনের পিচে পেসার এবং ব্যাটারদের সুবিধা পেতে দেখা গিয়েছে। বাংলা দলের ঘরের মাঠ ইডেনে। মনোজ তিওয়ারিদের সেই দলে মুকেশ কুমার, আকাশ দীপ এবং ঈশান পোড়েলের মতো পেসার খেলেন। এই পেসত্রয়ীর দাপট দেখা গিয়েছে ধারাবাহিক ভাবে। বাংলার অধিনায়ক মনোজ বললেন, “রঞ্জিতে ঘরোয়া দল চায় নিজেদের সুবিধা মতো পিচ তৈরি করতে। তাতেই তো ঘরের মাঠে খেলা এবং বাইরের মাঠে খেলার মধ্যে তফাতটা করা যায়। যেমন ২০১৯ সালে সৌরাষ্ট্র নিজেদের মাঠে আমাদের বিরুদ্ধে মন্থর উইকেট বানিয়েছিল।”
এই বছর রঞ্জির ফাইনাল হয়েছিল ইডেনে। ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছিল সেই ম্যাচ। চার দিনে খেলা শেষ হয়ে যায়। সৌরাষ্ট্রের পেসার জয়দেব উনাদকট দু’ইনিংস মিলিয়ে একাই নিয়েছিলেন ৯ উইকেট। এর দেড় মাসের মধ্যে শুরু হয় আইপিএল। এত কম সময়ের মধ্যে পিচের চরিত্র একেবারে বদলে ফেলা কঠিন বলেই জানিয়েছেন সুজন।
ইডেনের পিচ যে পেস সহায়ক হবে, তা নাইটরা জানতেন না, এমন বলা যাবে না। কারণ বেশ কয়েক বছর ধরেই এমন পিচ হচ্ছে ইডেনে। কিন্তু নাইটরা দল তৈরি করেছেন স্পিনারদের উপর ভরসা করে। ইডেনের পিচ থেকে সেই সাহায্য না পেয়ে কেকেআর যে রুষ্ট, তা নীতীশের কথাতেই স্পষ্ট। না হলে চেন্নাইয়ের স্পিন সহায়ক উইকেটে জিতেই কখনও নতুন অধিনায়ক নীতীশ বলেন, “আমার মনে হয় কেকেআর ছাড়া বাকি সব দল ঘরের মাঠের সুবিধা পায়। ওখানে আমরা ব্যাটিং উইকেটে খেললে ২০০-র বেশি রান করি। আবার মন্থর পিচে খেলা হলে রান কম হয়। ফলে ব্যাটারদের বার বার নিজেদের পিচের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। এটা বাকি দলগুলোকে করতে হয় না।”
সব মিলিয়ে আইপিএলে ইডেনের উইকেট নিয়ে কলকাতা নাইট রাইডার্সের সঙ্গে ঠান্ডা লড়াই চলছে বঙ্গ ক্রিকেটের।