মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। ছবি: আইপিএল।
৪ বলে ২০। ৫০০ স্ট্রাইক রেট! এ বারের আইপিএলে এক জনই এমন ইনিংস খেলেছেন। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এই ইনিংস না খেললে হেরে যেতে পারত চেন্নাই সুপার কিংস। এখনও পর্যন্ত আইপিএলে তাঁকে আউট করা যায়নি। চারটি ইনিংসে মোট ২৫টি বল খেলে ধোনি করেছেন ৫৯ রান। স্ট্রাইক রেট ২৩৬। তবু তাঁকে ইনিংসের শেষ দিকে নামাচ্ছে চেন্নাই সুপার কিংস! প্রশ্ন উঠছে, ধোনির কি আরও আগে নামা উচিত নয়?
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে চেন্নাইয়ের প্রথম ম্যাচে ধোনিকে নামতেই হয়নি। ৬ উইকেটে জিতে গিয়েছিল তাঁর দল। পরের গুজরাত ম্যাচে চেন্নাই প্রথমে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ২০৬ রান তুলেছিল। ব্যাট করতে নামেননি ধোনি। দিল্লির বিরুদ্ধে তৃতীয় ম্যাচে ধোনি ব্যাট করতে নেমেছিলেন ১৭তম ওভারে। ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর বাধ্য হয়ে নেমেছিলেন তিনি। ১৬ বলে ৩৭ রান করে অপরাজিত থাকেন। চেন্নাই হেরে যায় ২০ রানে। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে নেমেছিলেন তিন বল বাকি থাকতে। তার পর কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে নেমেছিলেন ১৭তম ওভারে। তখন জেতার জন্য আর ৩ রান দরকার ছিল চেন্নাইয়ের। রবিবার মুম্বই ইন্ডিয়ান্সদের বিরুদ্ধে ধোনি ব্যাট করতে নেমেছিলেনন চার বল বাকি থাকতে। সেই চার বলে করেন ২০ রান। আইপিএলের শেষ চার ম্যাচেই অপরাজিত ধোনি। ব্যাট হাতে চেনা ফর্মে।
বিশ্বের অন্যতম সেরা ফিনিশার দলে থাকতেও তাঁকে কি সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারছেন না রুতুরাজ গায়কোয়াড়েরা? এই প্রশ্ন উঠছে। রবিবার মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ম্যাচের পর আরও বড় হয়েছে এই প্রশ্ন। মাত্র চার বল কীভাবে কাজে লাগানো যায়, ধোনি প্রমাণ করে দিয়েছেন তিনটি ছক্কা-সহ ২০ রান করে। এই ২০ রানেরই চেন্নাই সুপার কিংস হারিয়েছে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে।
সাধারণত ব্যাটিং অর্ডারের সাত বা আট নম্বরে নামছেন ধোনি। নয়তো, কয়েক বল বাকি থাকতে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে মাঠে দর্শকদের খুশি করতে। ধোনি কি নিজেই ব্যাট হাতে ২২ গজে বেশি ক্ষণ থাকতে চাইছেন না? তরুণদের সুযোগ দিতে চাইছেন। খুব দরকার না পড়লে ব্যাট করতে চাইছেন না? আপাত ভাবে না চাওয়ার কারণ নেই। তিনি ফর্মে রয়েছেন। ইনিংসের ১২-১৩ ওভারের মাথায় তিনি মাঠে নামলে কি চেন্নাই আরও বেশি লাভবান হবে না? প্রশ্ন উঠছে। ধোনি নিজে মুখ খোলেননি। সিএসকে কর্তৃপক্ষের তরফেও এই প্রসঙ্গে কিছু বলা হয়নি।
দর্শকদের ধোনির ব্যাটিং দেখার সুযোগ করে দেওয়া লক্ষ্য হলে, তিন-চার বল বাকি থাকতে না নামিয়ে আরও আগে নামানো যেতে পারে। তাতে ক্রিকেটপ্রেমীরা আর বেশি ক্ষণ বিশ্বকাপজয়ী প্রাক্তন অধিনায়কের খেলা দেখার সুযোগ পাবেন। প্রাক্তন ক্রিকেটার প্রণব রায় বিষয়টা এ ভাবে দেখছেন না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ধোনি কোথায় নামবে, সেটা নিয়ে অবশ্যই চেন্নাইয়ের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে। তা ছাড়া, ধোনি এমন একটা জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে যে কোথায় নামবে সেটা নিজে ঠিক করতে পারে। ওকে হয়তো ছোট ইনিংসের জন্যই ব্যবহার করতে চাইছে। ৫ বলে ১৫ রান বা ১০ বলে ২৭-২৮ রান চাইছে ওর কাছ থেকে। এখন ধোনির বয়স ৪২। খুব বেশি ক্ষণ খেললে সমস্যা হতে পারে। ২০ ওভার উইকেট রক্ষা করতে হচ্ছে। এই বয়সে যতই ফিটনেস ট্রেনিং করুক, পেশিতে যে কোনও সময় সমস্যা হতে পারে। তাড়াতাড়ি ব্যাট করতে নামলে ফিল্ডিংয়ের সময় ধোনির অসুবিধা হতে পারে। আরও একটা দিক রয়েছে। ছোট ইনিংসে যতটা কার্যকর দেখাচ্ছে, বড় ইনিংসে ততটা নাও হতে পারে এই বয়সে। দূর থেকে মনে হতে পারে, ধোনিকে ঠিক মতো ব্যাট করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। হয়তো বিষয়টা ঠিক বিপরীত। এই বয়সে ওর সেরাটা পাওয়া নিশ্চিত করার জন্যই এই পরিকল্পনা। আর একটা ব্যাপার। ধোনির পায়ে একটু সমস্যা আছে বলে মনে হচ্ছে। সেটাও ভাবতে হবে।’’
বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও মনে করছেন, ধোনির শেষ দিকে ব্যাট করতে নামার মধ্যে কোনও ভুল নেই। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ধোনির এখন ৪২ বছর বয়স। চারটে ম্যাচ খেললে একটা বা দুটো ম্যাচে হয়তো ব্যাটে-বলে ঠিক মতো লাগবে। এই বয়সে এসে খুব বেশি বলের ইনিংস খেলা কঠিন। ১২-১৩ ওভারের মধ্যে নামিয়ে দেওয়া হলে অন্য রকম ফল হতে পারে। রবিবারের ম্যাচে ভাল মেরে দিয়েছে ঠিকই। তবে ধোনির থেকে আমি বেশি কৃতিত্ব দেব হার্দিক পাণ্ড্যকে। বোকার মতো বল করেছে। একটা স্লোয়ারও দেয়নি। মার তো খাবেই। ধোনিকে নিয়ে চেন্নাইয়ের পরিকল্পনায় ভুল নেই।’’
ক্রিকেট বিশেষজ্ঞেরা ভুল দেখছেন না। সুতরাং চেন্নাইয়ের ইনিংসে বড় বিপদ না হলে ধোনির তাড়াতাড়ি ব্যাট করতে নামার সম্ভাবনা কম। তাই পাঁচ-সাত বলে ইনিংসই দু’চোখ ভরে উপভোগ করে হবে ক্রিকেটপ্রেমীদের।