সোনাজয়ী ভারতীয় কবাডি দল। —ফাইল চিত্র।
মহিলাদের পর পুরুষদের কবাডি দলও সোনা জিতল এশিয়ান গেমসে। ফাইনালে শক্তিশালী ইরানকে হারাল ভারত। ভারতীয় দলের পক্ষে ফল ৩৩-২৯। এই নিয়ে এশিয়ান গেমসে ২৮টি সোনা-সহ ১০৩টি পদক জিতল ভারত। যদিও শনিবার ফাইনালে হল তুমুল নাটক।
ম্যাচের শুরু থেকে তুমুল লড়াই হয় দু’দলের মধ্যে। কখনও ভারতীয় দল এগিয়ে গিয়েছে। আবার কখনও ইরান এগিয়ে গিয়েছে। কোন দল সোনা জিতবে, তা বোঝা যাচ্ছিল না শেষ পর্যন্ত। তবে সব থেকে বড় নাটক হল খেলা শেষ হওয়ার ১ মিনিট ৩ সেকেন্ড বাকি থাকার সময়। দু’দলেরই তখন পয়েন্ট ছিল ২৮। ১ মিনিট ৩০ সেকেন্ড বাকি থাকার সময় ‘ডু অর ডাই’ ঘোষণা করা হয়। সে সময় রেডে গিয়েছিলেন পবন। ইরানের কোনও খেলোয়াড়কে স্পর্শ করার আগেই তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যান। পবনের পিছনে তাড়া করে ইরানের একজন লাইনের বাইরে চলে এসেছিলেন। তাঁকে স্পর্শ করেছিলেন আরও তিন জন সতীর্থ। ফলে পুরনো নিয়ম অনুযায়ী ভারতের তিন বা চার পয়েন্ট পাওয়ার কথা। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, দু’দলকেই এক পয়েন্ট পাওয়ার কথা। যে হেতু ইরানের এক জন ডিফেন্ডার নিজে থেকেই কোর্টের বাইরে চলে গিয়েছিলেন। রেফারি প্রথমে ভারতকে তিন পয়েন্ট দিয়েছিলেন। ইরানকে এক পয়েন্ট। পরে রিপ্লে দেখে সিদ্ধান্ত বদলে দু’দলকেই এক পয়েন্ট করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখনই ভারতের খেলোয়াড়েরা আপত্তি জানান।
ইরাকের রেফারি, মালয়েশিয়া এবং শ্রীলঙ্কার আম্পায়ারেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। সমস্যার মূল কারণ, খেলা শুরুর আগে নিয়ম ঠিক ভাবে জানানো হয়নি। স্বভাবতই ভারতীয় দল পুরনো নিয়মের দাবিতে অনড় থাকে এবং ইরান নতুন নিয়মে পয়েন্ট দেওয়ার দাবি জানায়। বার বার রিপ্লে দেখেও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি রেফারি এবং আম্পায়ারেরা। তাঁদের কার্যত বিভ্রান্ত দেখিয়েছে। ভারত এবং ইরান কোনও শিবিরই তাঁদের যুক্তি মানতে রাজি হয়নি। শেষ পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয় এশীয় কবাডি সংস্থার সেক্রেটারি জেনারেলের। তিনি রিপ্লে দেখে দু’দলকে এক পয়েন্ট করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু প্রতিবাদ জানান ভারতীয় দলের কোচ। এশীয় কবাডি সংস্থার সেক্রেটারি জেনারেল বোঝানোর চেষ্টা করলেও ভারতীয় শিবির রাজি হয়নি। প্রতিবাদে ভারতের খেলোয়াড়েরা কোর্টে বসে পড়েন।
ভারত খেলতে না চাওয়ায় আবার নতুন করে আলোচনা শুরু করেন রেফারি, আম্পায়ারেরা। আবার রিপ্লে খতিয়ে দেখা হয়। ভারতীয় শিবিরের অনড় অবস্থানের সামনে কার্যত পিছু হঠতে বাধ্য হন ম্যাচ অফিসিয়ালেরা। ভারতকে আবার ৪ পয়েন্ট এবং ইরানকে ১ পয়েন্ট দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে তীব্র প্রতিবাদ জানায় ইরান শিবির। তাদের খেলোয়াড়েরাও খেলতে না চেয়ে কোর্টের উপর বসে পড়েন। উভয় দলই নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে। খেলা শুরুর আগে আম্পায়ারেরা নিয়ম স্পষ্ট না করায়, তাঁরা বিপাকে পড়েন। নিজেদের ভুলের জন্য কোনও দলের উপরেই সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারেননি তাঁরা।
এই পরিস্থিতিতে খেলা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত রাখা হয়। কোন নিয়ম মানা হবে, তা ঠিক করতে শুরু হয় আলোচনা। এশীয় কবাডি সংস্থার কর্তা, ম্যাচ অফিশিয়াল এবং আয়োজকেরা কথা বলে ঠিক করেন, যেহেতু খেলা শুরুর আগে নিয়ম সম্পর্কে নির্দিষ্ট ভাবে জানানো হয়নি, তাই শেষ পর্যন্ত পুরনো নিয়মকেই মান্যতা দেওয়া হয়। ফলে ইরানের আপত্তি আগ্রাহ্য করে ভারতকে ৩ পয়েন্ট এবং তাদের ১ পয়েন্ট দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্তে ইরানের খেলোয়াড়েরা খুশি না হলেও আর তীব্র প্রতিবাদের পথে হাঁটেননি তাঁরা। শেষ কয়েক সেকেন্ডে আরও ২ পয়েন্ট তুলে নিয়ে জয় নিশ্চিত করে ভারত। ইরান আর কোনও পয়েন্ট পায়নি।