নীরজ চোপড়া কথা বলছেন এক অফিসিয়ালের সঙ্গে। ছবি: পিটিআই।
এশিয়ান গেমসে সোনাজয়ী নীরজ চোপড়া তাঁর বিরুদ্ধে চিনের চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছেন। ইচ্ছাকৃত ভাবে নীরজের প্রথম থ্রো বাতিল করে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠছে। চিনের হ্যাংঝাউয়ে এ বারের এশিয়ান গেমস হচ্ছে। সেখানেই চিনের অফিসিয়ালদের বিরুদ্ধে এর আগেও অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় প্রতিযোগীর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করার। নীরজের ঘটনায় সেই সুর আরও জোরালো হল।
বুধবার ৮৮.৮৮ মিটার দূরে জ্যাভলিন ছুড়ে সোনা জেতেন নীরজ। কিন্তু তাঁর প্রথম থ্রোটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। নীরজ জ্যাভলিন ছোড়ার পর প্রায় ১৫ মিনিট হয়ে গেলেও সেই দূরত্ব মাপা যায়নি। শেষ পর্যন্ত থ্রোটি বাতিল করে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় বার জ্যাভলিন ছুড়তে হয় তাঁকে। বুধবার মোট সাত বার জ্যাভলিন ছুড়তে হয় নীরজকে। প্রযুক্তিগত ত্রুটির জন্য নীরজের থ্রো বাতিল করা হয়। সোনা জয়ের পর নীরজ বলেন, “সাধারণত একটি প্রতিযোগিতায় ছ’বার জ্যাভলিন ছুড়তে হয়। কিন্তু এ দিন সাত বার ছুড়তে হল। এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি কখনও হইনি। কিছু একটা গণ্ডগোল ছিল। আমার থ্রোটা ওরা মাপেনি। কিন্তু এর মধ্যেই পরের জন এসে জ্যাভলিন ছুড়ে দেয়। ফলে আমি কত দূর ছুড়েছি সেই মার্ক হারিয়ে ফেলে ওরা। প্রথম থ্রোটা খুব ভাল হয়েছিল। আমি ভিডিয়ো দেখব ওই থ্রোয়ের। জানতে চাই কত দূর ছুড়েছিলাম।”
নীরজই প্রথম নন, এ বারের গেমসে আরও এক ভারতীয় অ্যাথলিট বিপদে পড়েছিলেন চিনের অফিসিয়ালদের জন্য। মেয়েদের ১০০ মিটার হার্ডলসে জ্যোতি ইয়ারাজির বিরুদ্ধে এমন ঘটনা ঘটে। সে বারেও ভুল ছিল চিনের অফিসিয়ালদের। নীরজ বলেন, “এমন ঘটনা এ বারের এশিয়ান গেমসে অন্য ভারতীয় অ্যাথলিটের সঙ্গেও হয়েছে। এটা ঠিক না। কিশোর জেনার দ্বিতীয় থ্রোটা ওরা বাতিল করে দিয়েছিল। সেটাও ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু এটা নিয়ে ঝগড়া করে কী হবে। অন্য অ্যাথলিটদের সম্মান করা উচিত। দেরি করার জন্য আমার মতো বাকিদের শরীরও ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল।”
প্রথম বার এশিয়ান গেমসে জ্যাভলিনে সোনা এবং রুপো দুটোই জিতল ভারত। কিশোর ৮৭.৫৪ মিটার দূরে জ্যাভলিন ছুড়ে দ্বিতীয় হন। তাঁর দ্বিতীয় থ্রোয়ের সময় ফাউল ডাকেন চিনের অফিসিয়াল। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যান নীরজ। তিনি কিশোরকে রিভিউ করতে বলেন। তাতে দেখা যায় থ্রোটি ফাউল ছিল না। কিশোর বলেন, “এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি আমার সঙ্গে।আমার লক্ষ্য ছিল পদক জয় এবং অলিম্পিক্সের জন্য যোগ্যতা অর্জন করা। দুটোই করতে পেরে ভাল লাগছে।”
ভারতের অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সহ-সভাপতি এবং প্রাক্তন লং জাম্পার অঞ্জু ববি জর্জ এশিয়ান গেমসের অফিসিয়ালদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, “আমাদের হারিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে ওরা। ভারতীয় অ্যাথলিটদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হচ্ছে। নীরজের সঙ্গে যেটা হল, সেটা আগের দিন অন্নু রানির সঙ্গে হয়েছে। ওর প্রথম থ্রো মাপা হয়নি। সেটাও খুব ভাল থ্রো ছিল। জ্যোতির সঙ্গে খারাপ করেছিল ওরা। এর পরেও জ্যাভলিনে সোনা, রুপো দুটোই জিতেছি আমরা। তবে অফিসিয়ালদের বিরুদ্ধে আমরা লিখিত অভিযোগ জানাব।”
রবিবার এশিয়ান গেমসে ভারতের জ্যোতির দৌড় শুরু করার সময়ই গণ্ডগোল হয়। চিনের অ্যাথলিট ইয়ানি উ রেফারির নির্দেশের আগেই দৌড় শুরু করেন। তাঁর দেখাদেখি দৌড় শুরু করে দেন জ্যোতিও। ফলে দু’জনকেই বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ। দুই অ্যাথলিট সঙ্গে সঙ্গে আপত্তি জানান। তাঁদের আপত্তির কারণে দৌড় শুরুর ভিডিয়ো রিভিউ করে দেখা যায় যে ইয়ানি আগে শুরু করেন। তাঁর দেখে দৌড় শুরু করেছিলেন জ্যোতি। তিনি ইচ্ছাকৃত ভাবে কিছু করেননি। ফলে ইয়ানিকে বাতিল করে দেওয়া হয়। ১০০ মিটার হার্ডলসে চিনের ইয়ানিই ছিলেন সেরা বাজি। তিনি দ্বিতীয় স্থানে শেষ করেছিলেন। কিন্তু ইয়ানিকে বাতিল করে দেওয়ায় তৃতীয় স্থানে শেষ করা জ্যোতি রুপো পেয়ে যান।
বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স সংস্থার সহ-সভাপতি আদিল সুমারিওয়ালা বলেন, “আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব। চিনের মেয়েটি আগে শুরু করেছিল। ওর জন্যই জ্যোতি লাইন ছেড়ে এগিয়ে যায়। কিন্তু চিনের রেফারিরা ইয়ানিকে দৌড়ের অনুমতি দেয়। এটা হতে পারে না। এশিয়ান গেমসের মতো প্রতিযোগিতায় এমন রেফারিং এবং আম্পায়ারিং মেনে নেওয়া যায় না। আমরা উচ্চ পর্যায় এই ঘটনার কথা জানাব।” রবিবার অঞ্জু বলেছিলেন, “রেফারিদের দোষে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিল জ্যোতি। সেটা না হলে ও সোনাও জিততে পারত। রেফারিরা চেষ্টা করছিল ইয়ানি যাতে দৌড়তে পারে। সেই কারণে জ্যোতিকে বিরক্ত করছিল ওরা।”