ভারতের হয়ে গোল করে সতীর্থদের সঙ্গে উল্লাস হরমনপ্রীত সিংহের (মাঝে)। ছবি: টুইটার
হকিতে দাপট দেখিয়ে জিতল ভারত। ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে ৪-০ গোলে হারাল তারা। জোড়া গোল করে ম্যাচের নায়ক ভারত অধিনায়ক হরমনপ্রীত সিংহ। গ্রুপ শীর্ষে থেকেই সেমিফাইনালে গেল ভারত। এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হকিতে টিকে থাকতে হলে এই ম্যাচে অন্তত পক্ষে ড্র করতে হত পাকিস্তানকে। হেরে যাওয়ায় প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে গেল তারা।
এ বারের প্রতিযোগিতায় দু’দলের খেলা দেখে মনে হচ্ছিল, অনেক বেশি আক্রমণাত্মক খেলা শুরু করবে ভারত। কিন্তু হল তার উল্টো। প্রথম মিনিটেই আক্রমণে গিয়ে ভারতকে চমকে দেয় পাকিস্তান। ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই গোল করেন পাকিস্তানের মুহম্মদ খান। রেফারি গোল দেন। রিভিউ নেয় ভারত। রিপ্লে দেখে গোল বাতিল করেন টেলিভিশন আম্পায়ার। কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে পেনাল্টি কর্নারের সিদ্ধান্ত দেন তিনি। উমর ভুট্টোর ক্রস থেকে সুফিয়ানের শট ভাল বাঁচান গোলরক্ষক কৃষ্ণ পাঠক।
প্রাথমিক ধাক্কা সামলে খেলায় ফেরে ভারত। মাঝমাঠ থেকে লম্বা বলে খেলা শুরু করে তারা। বক্সের মধ্যে ভাল জায়গায় বল পেয়েও যান মনদীপ সিংহ। কিন্তু গোল করতে পারেননি তিনি। খেলা দেখে বোঝা যাচ্ছিল মাঠমাঠের দখল নিতে সমস্যা হচ্ছে ভারতের। তাই অনেক বেশি লং বলে খেলছিল তারা। প্রথম কোয়ার্টার শেষ হওয়ার ঠিক আগেই পেনাল্টি কর্নার পায় ভারত। হার্দিক সিংহের ক্রস থেকে জোরালো শটে গোল করেন ভারত অধিনায়ক হরমনপ্রীত। ১-০ এগিয়ে যায় ভারত।
দ্বিতীয় কোয়ার্টার থেকে অনেক বেশি ছন্দে খেলা শুরু করে দু’দলই। নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট পাসে বিপক্ষ বক্সে ওঠার চেষ্টা করে তারা। কিন্তু সজাগ ছিল দু’দলের রক্ষণই। ফলে সুযোগ তৈরি হলেও গোল হচ্ছিল না। ২২ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি কর্নার পায় ভারত। আবার গোল করেন হরমনপ্রীত। গোলরক্ষকের পায়ের ফাঁক দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন তিনি। ২-০ এগিয়ে যায় ভারত। দ্বিতীয় কোয়ার্টারের বাকি সময়ে দাপট দেখায় ভারত। একের পর এক আক্রমণ আছড়ে পড়তে থাকে পাকিস্তান বক্সে। চাপ সামলাতে হিমশিম খায় পাক রক্ষণ। ২-০ গোলে এগিয়ে বিরতিতে যায় দু’দল।
তৃতীয় কোয়ার্টারে আরও আক্রমণাত্মক খেলা শুরু করে ভারত। পাকিস্তানের খেলোয়াড়েরা খেই পাচ্ছিলেন না। দুই প্রান্ত ধরে একের পর এক আক্রমণ করছিলেন মনপ্রীত সিংহ, কার্থি সেলভমেরা। অতিরিক্ত চাপে পেনাল্টি কর্নার দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। এ বার গোল করেন যুগরাজ সিংহ। ৩-০ এগিয়ে যায় ভারত। তৃতীয় কোয়ার্টারে আরও দু’টি গোল করতে পারত ভারত। এক বার কার্থি ও আরেক বার আকাশদীপ সিংহ সহজ সুযোগ নষ্ট করেন। তার মাঝেই হরমনপ্রীতের ক্রস থেকে মনদীপের গোল বাতিল করেন টেলিভিশন আম্পায়ার। পাকিস্তান দু’এক বার আক্রমণ করলেও অমিত রুইদাসের নেতৃত্বে ভারতীয় রক্ষণ সজাগ ছিল।
তিনটি কোয়ার্টারেই খেলার ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যাওয়ায় চতুর্থ কোয়ার্টারে বেশ কয়েক জন পরিবর্ত খেলোয়াড় নামান ভারতীয় কোচ ক্রেগ ফুল্টন। তার পরেও আক্রমণ কমেনি। কার্থির একটি গোল বাতিল করেন রেফারি। খেলা যত গড়াচ্ছিল তত ক্লান্ত হয়ে পড়ছিল পাকিস্তান। তার মাঝেই আরও একটি গোল করে ভারত। বক্সের মধ্যে ঢুকে ক্রস বাড়ান মনদীপ। সেই বলে স্টিক ছুঁইয়ে গোল করেন আকাশদীপ সিংহ। ৪-০ এগিয়ে যায় ভারত। সেখান থেকে ম্যাচে ফেরার সুযোগ ছিল না পাকিস্তানের। হেরেই মাঠ ছাড়ে তারা। সেই সঙ্গে প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নিতে হয় তাদের।